History Notes

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী – জীবনী ও অবদান

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী – – জীবনী ও অবদান

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মগুরু, সমাজসংস্কারক এবং আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা।

পরিচিতি

নাম স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
প্রকৃত নামমূলশঙ্কর তিওয়ারি বা মূলশঙ্কর কর্ষণদাস তিওয়ারি
ব্রহ্মচর্য নাম ব্রহ্মচারী শুদ্ধাচৈতন্য
জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৪
জন্মস্থান মৌরভী, টঙ্কর, সৌরাষ্ট্র, কোম্পানি রাজ (অধুনা গুজরাত, ভারত)
মৃত্যু৩০ অক্টোবর ১৮৮৩ (বয়স ৫৯)
মৃত্যু স্থান আজমীর, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা রাজস্থান, ভারত)
পিতা কর্ষণজী লাল তিওয়ারী
মাতা যশোদাবাই
উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠা আর্যসমাজ
গুরু বিরজানন্দ দন্ডী
যোগগুরু জোয়ালানন্দ পুরী ও শিবানন্দ গিরি
সাহিত্য কর্ম সত্যার্থ প্রকাশ (১৮৭৪ ), সংস্কার বিধি

জন্ম

  • ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ১ই ফেব্রুয়ারি কোম্পানি রাজে সৌরাষ্ট্রের মৌরভীতে (গুজরাটের মৌরভী জেলা ) জন্মগ্রহণ করেন।
  • তাঁর পিতা কর্ষণজী লাল তিওয়ারী ছিলেন সরকারের রেভিনিউ কালেক্টর।
  • মাতার নাম ছিল যশোদাবাই
  • দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রকৃত নাম ছিল মূলশঙ্কর তিওয়ারী

দেখে নাও : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali

বাল্যজীবন

  • তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তাঁর পিতার কাছে। আট বছর বয়সে উপনয়নের সাথে সাথে তিনি শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করেন ।
  • ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ তিনি না পেলেও সংস্কৃতে বুৎপত্তি অর্জন করেন।
  • বাল্যকালে তাঁর ছোট বোন ও কাকা কলেরায় মারা যান। ব্যথিত মূলশঙ্কর তখন মৃত্যুচিন্তা এবং অমরত্ব লাভের উপায় অনুসন্ধান শুরু করেন। ফলে তার চিন্তা-ভাবনায় বৈরাগ্যভাব আসে।
  • ছেলের সংসারের প্রতি বৈরাগ্য দেখে পিতা কর্ষণজী ছেলের বিবাহের ঠিক করেন। কিন্তু ১৮৪৬ সালে ২২ বছর বয়সে মূলশঙ্কর বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

দেখে নাও : রাজা রামমোহন রায় কুইজ

সত্যান্বেষণ

  • ১৮৪৬ – ১৮৬০ পর্যন্ত সত্য ও অমৃতের সন্ধানে তিনি প্রায় ১৫ বছর অরণ্য থেকে হিমালয়, বিভিন্ন মন্দিরে-মঠে সাধুসঙ্গে ও যোগসাধনায় লিপ্ত হন।
  • এর পরে তিনি ব্রহ্মচর্যের দীক্ষা নেন এবং তখন তাঁর নাম হয় – ‘ব্রহ্মচারী শুদ্ধাচৈতন্য’।
  • পরবর্তীকালে পূর্ণানন্দ সরস্বতী নামক সন্ন্যসীর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তখন তার নাম হয় ‘দয়ানন্দ সরস্বতী’
  • এছাড়াও জোয়ালানন্দ পুরী ও শিবানন্দ গিরির নিকট তিনি যোগবিদ্যা শিক্ষা নেন।
  • ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মথুরায় বিরজানন্দ দণ্ডিশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

মতবাদ প্রচার

  • বিরজানন্দ দণ্ডিশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার পর তিনি বৈদিক মত প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।
  • তিনি ভস্মলেপন, রুদ্রাক্ষ ও তিলক ধারণ করার প্রথার তীব্র প্রতিবাদ করেন। তাঁর মতে – “সাধনার জন্য বাহ্যিক চিহ্ন ধারণ করার প্রয়োজন নেই, ইহা পশুবৎ মানুষের কর্ম।”
  • ১৮৬৯ সালে ১৭ই নভেম্বর বারাণসীর কাশীতে তিনি ”বেদ মূর্তিপূজা সমর্থন করে?” – এই বিতর্কে কাশির পন্ডিতদের পরাজিত করেন। ক্রমেই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত তাঁর ব্যাখ্যা শুনতে আসতেন।
  • তিনি লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিশুর বেদ শিক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন।
  • বিভিন্ন স্থানে বৈদিক বিদ্যালয় বা গুরুকুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করেন তিনি।
  • প্রথম বিদ্যালয়টি ১৮৬৯ সালে ফররুখাবাদে মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • পরবর্তীকালে মির্জাপুর (১৮৭০), কাসগঞ্জ (১৮৭০), চালিসার (আলীগড়) (১৮৭০) এবং বারাণসী (১৮৭৩) -তে এরকম আরও বিদ্যালয় ছড়িয়ে পরে।
  • এই সমস্ত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের খাবার, বাসা, পোশাক এবং বই বিনামূল্যে দেওয়া হতো।

আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠা

  • বোম্বাইয়ে অবস্থানকালে তিনি প্রার্থনা সমাজের সংস্পর্শে আসেন।
  • তিনি প্রার্থনা সমাজের নাম পরিবর্তন করে আর্য সমাজ নাম রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।
  • ১৮৭৫ সালের ৭ই মার্চ তিনি বোম্বেতে ২৩জন সদস্য নিয়ে আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • গিরিধারীলাল দয়ালদাস ছিলেন বোম্বাই আর্য সমাজের সভাপতি এবং কর্ষণদাস সম্পাদক পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • পরবর্তীতে ১৮৭৭ সালে লাহোরে, ১৮৭৮ সালে মুলতানে ও মিরাটে, ১৮৮১ সালে আগ্রা ইত্যাদি স্থানে তিনি আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

মৃত্যু

  • জীবনের শেষ বছরগুলি তিনি রাজস্থানের রাজাদের স্বদেশি চেতনা জাগ্রত করার কাজ করেছিলেন।
  • যোধপুরের মহারাজা দ্বিতীয় যশবন্ত সিং স্বামী দয়ানন্দের শিষ্য হতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু মহারাজাকে ‘নান্হী জান’ নামে এক গণিকার সাথে দেখে স্বামী দয়ানন্দ তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং নারী ও সমস্ত অনৈতিক কাজ ত্যাগের উপদেশ দেন।
  • এই পরামর্শে নান্হী ক্ষুব্ধ হয়ে রাঁধুনি জগন্নাথের দ্বারা বিষ ও কাচের গুড়ো মেশানো দুধ পরিবেশন করেছিলেন। বিষ পানের পর বেশ কয়েক দিন স্বামী দয়ানন্দ শয্যাশায়ী হয়ে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করেন।
  • মহারাজ দয়ানন্দকে বাঁচানোর জন্য মাউন্ট আবু, আজমীর প্রভৃতি জায়গায় পাঠান। কিন্তু স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হয়নি।
  • অবশেষ ১৮৮৩ সালের ৩০ অক্টোবর দীপাবলির সন্ধ্যায় মন্ত্র জপ করতে করতে তিনি মারা যান।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button