অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি । Subsidiary Alliance – PDF Download
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (Subsidiary Alliance )
প্রিয় পাঠকেরা আজকে আমরা আলোচনা করবো অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (Subsidiary Alliance ) নিয়ে।
ব্রিটিশ গভর্নর জেনেরালদের মধ্যে ঘোর সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন লর্ড ওয়েলেসলি। ব্রিটেনে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সদস্য থাকার সময় তিনি ভারত সম্পর্কে ধারণালাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে আসেন। তখন তার সামনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ খোলা ছিল কিন্তু সাথে ছিল কিছু জটিলতাও। যেমন যুদ্ধের ব্যয়, ফরাসিদের সাথে শত্রুতা প্রভৃতি।
ওয়েলেসলির পূর্বসূরি স্যার জন শোর ছিলেন একজন উদারপন্থী শাসক এবং রাজ্য জয় না করে তিনি নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেন। এই নিরপেক্ষতার সুযোগ নিয়ে টিপু সুলতান ফরাসিদের সাথে মিত্রতা প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে নিজাম সংকটের সময় সাহায্য না পেয়ে ফরাসিদের সাহায্য গ্রহণ করেন। অপরদিকে মারাঠারাও সিন্ধিয়ার নেতৃত্বে দুর্ধর্ষ শক্তিতে পরিণত হবার চেষ্টা করে।
ওয়েলেসলি ভারতে এসে এই সমস্যাগুলির সাথে সাথে তার প্রতিকারের উপায়ও বার করে ফেলেন। তিনি শুরু করেন এক অভিনব নীতি – অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির শর্তাবলী
সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে ওয়েলেসি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন। রাজনৈতিক দিক থেকে ওয়েলেসলি লক্ষ্য ছিল ত্রিমুখী – অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি, সরাসরি যুদ্ধ এবং সংযুক্তিকরণ নীতি। এদের মধ্যে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ছিল সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত নীতি।
এই নীতির শর্তগুলি হল –
- এই চুক্তিতে স্বাক্ষরিত রাজ্যগুলিকে ইংরেজ সরকার অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রাখা করবে।
- চুক্তিবদ্ধ রাজ্যগুলিতে একদল ইংরেজ সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে এবং এই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে থাকবেন ইংরেজ সেনাপতি।
- এই সেনাবাহিনীর ব্যয় নগদে বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে অর্থবা রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দিতে হবে।
- কোম্পানির অনুমতি ছাড়া রাজ্যগুলি অন্য কোনও রাজ্যের সাথে মিত্রতা স্থাপন বা যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবে না।
- চুক্তিবদ্ধ প্রত্যেক রাজ্যে একজন করে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট থাকবে।
- এই রাজ্যগুলি থেকে ইংরেজ বাদে অন্য ইউরোপীয় শক্তিকে বিতাড়িত করতে হবে।
বিভিন্ন সামরিক সর্তাদির ওপর ভিত্তি করে এই নীতি প্রণীত বলে এর নাম অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (Subsidiary Alliance )।
দেখে নাও :
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রয়োগ
দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম এই নীতি গ্রহণ করেন দুর্বলচিত্ত ও আত্মমর্যাদাহীন হায়দ্রাবাদের নিজাম। তার পর একে একে অযোধ্যা, পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও, হোলকার, সিন্ধিয়া, ভোঁসলে, মালব, বুন্দেলখন্ড, উদয়পুর, যোধপুর, জয়পুর এবং আরো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে।
টিপু সুলতানের প্রতিরোধ
মহীশুরের স্বাধীনচেতা টিপু সুলতান অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে অবোধ হতে চাননি। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশুর যুদ্ধে পরাজয়ের পর, টিপু বাধ্য হয়েই রাজ্যের কিছু অংশ ইংরেজদের ছেড়ে দিয়েছিল।
টিপু পরাজয়ের পরও দমে যাননি। তিনি ফরাসিদের সাহায্যের জন্য যেমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তেমনি ইংরেজ বিরোধী সামরিক জোট তৈরী করার জন্য আফগানিস্তান, আরব এবং তুরস্কে দূত প্রেরণ করেন।
কিন্তু দূরদর্শী ওয়েলেসলি টিপুকে বেশি সময় না দিয়ে মারাঠা ও নিজামকে নিয়ে টিপুর রাজ্য আক্রমণ করেন। এবং সূচনা হয় চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশুর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ওয়েলেসলির সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে টিপু যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হন।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রভাব
ওয়েলেসলির এই নীতি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি ফাঁদ। কোনো রাজা এই নীতিতে ইংরেজদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার অর্থ ছিল ফাঁদে পরার সামিল কারণ ইংরেজরা সাহায্যের বিনিময়ে সেই রাজ্যগুলির স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছিল।
ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রাজ্যের প্রতিদিনের কাজকর্মে প্রায় হস্তক্ষেপ করতেন এবং রাজাকে তার কথা মেনে চলতে হত। ‘
অন্যদিকে ইংরেজ সৈন্য পোষণের জন্য রাজ্যগুলিকে সাধ্যতিরিক্ত টাকা দিতে হত। এই টাকা কোম্পানি একতরফাভাবে নির্দিষ্ট করে দিত এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পেত।
অধীনতামূলক নীতির ফলে রাজ্যগুলির নিজস্ব সেনাবাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। লাখ লাখ সৈন্য জীবিকাচ্যুত হয়ে দারিদ্র, বেকারত্ব ও নৈতিক পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই কারণগুলির ফলে দেশীয় রাজ্য গুলি ক্রমশ ক্ষমতাহীন ও দুর্বল হয়ে পরেছিলো এবং তারা পুরোপুরি ইংরেজদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছিলো।
অন্যদিকে ইংরেজরা এই নীতির ফলে লাভবান হয়েছিল। তারা দেশীয় রাজ্যগুলির টাকায় নিজেদের এক বিশাল সেনাবাহিনী তৈরী করে ফেলেছিল। বিভিন্ন রাজ্যে ইংরেজদের সেনাবাহিনী থাকায় ইংরেজরা বহু দূরবর্তী অঞ্চলেও যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতো অথবা সরাসরি দখল করে নিতে পারতো।
ওয়েলেসলির অপসারণ ও অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির অবসান
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অংশীদাররা এক সময় লক্ষ্য করেন যে ঘর সাম্রাজ্যবাদী ওয়েলেসলি সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধের খরচ মেটাতে আখেরে তাদের লাভের বদলে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে নেপোলিয়ানের কারণে ইউরোপ ব্রিটেনের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল।
এই অবস্থায় ভারতে বিপুল অর্থব্যয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানির কর্তারা। তারা ইতিমধ্যে বিজিত রাজ্য গুলি নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল। এই সিদ্ধান্তের পরে ওয়েলেসলি স্বদেশে ফিরে যান।
Download Section
- File Name : অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি । Subsidiary Alliance – PDF Download
- File Size : 2.4 MB
- No. of Pages : 05
- Format : PDF
- Language : Bengali
- Subject : Modern Indian History
To check our latest Posts - Click Here