তেজস্ক্রিয়তা কি ? বিভিন্ন ধরণের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ – Radioactivity
Radioactivity Definition - Types of Radioactivity
তেজস্ক্রিয়তা কি ? বিভিন্ন ধরণের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ – Radioactivity
তেজস্ক্রিয়তা কি ? তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে ?
তেজস্ক্রিয়তা হল একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া, যেখানে তেজস্ক্রিয় মৌলের দুটি নিউক্লিয়াস সংযুক্ত হয়ে বা একটি নিউক্লিয়াস দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে ভেঙে গিয়ে বিপুল শক্তি উৎপন্ন হয় এবং সেই শক্তি তেজস্ক্রিয় রশ্মি হিসাবে বিকিরিত হয়।
নিউক্লিয় বিভাজন (Nuclear fission)
যখন একটি নিউক্লিয়াস ভেঙে গিয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয় তখন একে নিউক্লিয় বিভাজন (Nuclear fission) বলে। “পারমানবিক বােমা” (Atom Bomb) এই নিউক্লিয় বিভাজনের নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে।
নিউক্লিয় সংযােজন (Nuclear fusion)
যখন দুটি নিউক্লিয়াস সংযুক্ত হয়ে একটি নিউক্লিয়াস গঠন করে তখন তাকে নিউক্লিয় সংযােজন (Nuclear fusion) বলে।
সূর্য থেকে যে শক্তি পৃথিবীতে আসে তা নিউক্লিয় সংযােজেনর মাধ্যমে আসে (এখানে দুটি হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসের সংযােজন ঘটে একটি হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস গঠিত হয়)।
“হাইড্রোজেন বােমা” এই নিউক্লিয় সংযােজনের নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে।
সাধারণ কিছু তেজস্ক্রিয় মৌল হল—ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, প্রভৃতি।
রেডিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন মাদাম কুরী ও তাঁর স্বামী পিয়ের কুরী (1898)।
বিভিন্ন ধরণের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ তিনভাবে হয় –
α -বিকিরণ (α-Radiation)
- আলফা কণা হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সমতুল্য।
- কোন নিউক্লিয়াস থেকে যদি একটা আলফা কণা বের হয়ে আসে তাহলে সেই পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা কমবে দুই ঘর, নিউক্লিওন সংখ্যা কমবে চার ঘর।
- এতে দুটি প্রোটন ও দুটি নিউট্রন থাকে।
- এই রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত।
- এই রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয়।
- এই রশ্মি তীব্র আয়ন সৃষ্টি করে।
- এর ভর বেশি হওয়ায় ভেদন ক্ষমতা কম।
- এই কণার ভর হাইড্রোজেন পরমাণুর চার গুণ।
- এটি ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
β -বিকিরণ (β-Radiation)
- বিটা বিকিরণ বলতে পরমাণুর তেজস্ক্রিয় ক্ষয়কালে ঘটে যাওয়া পজিট্রন বা ইলেক্ট্রনগুলির প্রবাহকে বোঝায়।
- বিটা বিকিরণ পরমাণুর একটি ইলেক্ট্রনের সমতুল্য।
- এই রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয়।
- এটি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।
- বিটা কণিকার ভর একটি ইলেকট্রনের ভরের সমান।
- ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- বিটা কণা প্রকৃতপক্ষে দ্রুত গতি সম্পন্ন ইলেকট্রন পজিট্রন।
- এর ভেদন ক্ষমতা আলফা রশ্মির চেয়ে বেশি এবং এটি 0.01m পুরু।
γ -বিকিরণ (γ-Radiation)
- যখন গামা (Y) রশ্মি নির্গত হয় তখন তেজস্ক্রিয় পদার্থের ভর অপরিবর্তীত থাকে।
- তেজস্ক্রিয় বিকিরণগুলির মধ্যে গামা রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সর্বাধিক।
- গামা রশ্মি অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ।
- গামা রশ্মির কোনো ভর নেই।
- গামা রশ্মির কোনো চার্জ নেই।
- গামা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তুলনায় অনেক কম।
- গামা রশ্মি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না।
- গামা রশ্মি চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না।
- গামা রশ্মি ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- এরা কোনো পদার্থের উপর আপতিত হয়ে প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।
- গামা রশ্মির আয়নায়ন ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতা আলফা এবং বিটা রশ্মির তুলনায় অনেক কম।
- আলফা ও বিটা রশ্মির তুলনায় এই রশ্মির ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশি।
- এটা আলোকের মতো বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ বলে গামা রশ্মির প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ইত্যাদি সব আলোকীয় ধর্ম আছে।
- মানব দেহে ক্যান্সার আক্রান্ত সেল ধ্বংস করতে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে, বিজ্ঞানগারে গবেষণার কাজে ও ধাতব বস্তুতে ফাটল নির্ণয়ে গামা রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
আরও দেখে নাও :
To check our latest Posts - Click Here