General Knowledge Notes in BengaliHistory Notes

মগধের উত্থান – পার্ট ১ – হর্যঙ্ক বংশ

Haryanka Dynasty

মগধের উত্থান

মগধ প্রাচীন ভারতে ষোড়শ (ষোলটি ) মহাজনপদগুলির মধ্যে অন্যতম। ষোড়শ মহাজনপদগুলির মধ্যে মগধ বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই রাজ্য বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।

পর পর চারটি শক্তিশালী রাজবংশের হাত ধরে মগধের উত্থান হয়েছিল। এই রাজবংশগুলি হলো –

    • হর্যঙ্ক বংশ
    • শিশুনাগ বংশ
    • নন্দ বংশ ও
    • মৌর্য বংশ

আজকে আমরা হর্যঙ্ক বংশ নিয়ে আলোচনা করবো এবং পরবর্তী নোটস গুলিতে বাকি বংশগুলি নিয়েও আলোচনা করবো।

হর্যঙ্ক বংশ / হর্ষঙ্ক বংশ

ভারতীয় ইতিহাসে এই রাজবংশ ‘পিতৃহন্তা রাজবংশ’ নামে পরিচিত। কারন এই বংশীয় রাজাদের প্রায় সকলেই পিতৃহত্যার মাধ্যমে সিংহাসন আরোহন করেছিলেন।

১. বিম্বিসার ( ৫৪৮ – ৪১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ )

বুদ্ধদেবের সমসাময়িক বিম্বিসারের সিংহাসন আরোহনের সাথে মগধের শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তিনি ছিলেন মগধে হর্যঙ্ক বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা।

তিনি অঙ্গরাজ ব্রহ্মদত্তকে পরাজিত করে অঙ্গ দখল করে নেন এর ফলে অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত চম্পা বন্দরের মাধ্যমে মগধের সামুদ্রিক ও অন্তর্বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।

ঐতিহাসিক ড: হেমচন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে, “অঙ্গরাজ্য আক্রমণের দ্বারা বিম্বিসার মগধের রাজ্যবিস্তারের যে সূচনা করেন, অশোকের কলিঙ্গ বিজয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে”

বিম্বিসার বৈবাহিক রীতিতে সাম্রাজ্যবিস্তার করেছিলেন।

    • কোশলরাজ প্রসেনজিতের ভগিনী কোশলদেবীকে বিবাহ করে যৌতুক হিসেবে কাশী লাভ করেন। এই স্থান থেকে তিনি প্রায় বছরে এক লক্ষ মুদ্রা রাজস্ব পেতেন।
    • বৈশালীর লিচ্ছবি রাজকন্যা চেল্লনাকে বিবাহ করেন।
    • বিদেহ রাজকন্যা বাসবিকে বিবাহ করেন।
    • মদ্র রাজকন্যা খেমাকে বিবাহ করেন।

রাজগৃহ শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং গিরিব্রজ থেকে তিনি রাজগৃহে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

তিনি শ্রেণিক বা সেনিয়া ( Seniya ) নামেও পরিচিত ছিলেন।

তিনিই প্রথম ভারতীয় রাজা যার স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল।

তিনি একটি সুদক্ষ শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন

ঐতিহাসিক ড: রোমিলা থাপারের মতে, ভারতীয় রাজাদের মধ্যে বিম্বিসারই প্রথম দক্ষ শাসনব্যবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন।

২. অজাতশত্রু ( ৪৯২ – ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ )

পিতা বিম্বিসারকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন

এর ফলে কোশলরাজ প্রসেনজিৎ বিম্বিসারকে যৌতুক হিসেবে প্রদত্ত কাশী গ্রাম পুনর্দখল করেন নেন এবং অজাতশত্রু ও প্রসেনজিতের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

দীর্ঘ সংঘাত চলার পরে শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষে সন্ধি হয় – ফলস্বরূপ প্রসেনজিৎ কাশী ফেরত পান এবং প্রসেনজিতের কন্যা ভজীরা কুমারীর সাথে অজাতশত্রুর বিবাহ হয়।

বৃজির সাথে দীর্ঘ ১৬ বছর যুদ্ধ করার পরে অজাতশত্রু বৃজি দখল করেন। বৃজি জয়ের তার প্রধান অস্ত্র ছিল –

    • সুনিধা ও ভৎসাকর – মন্ত্রী
    • রথমুসালা – রথের চাকায় ব্লেড লাগানো বিশেষ ঘাতক রথ
    • মহাশীলাকণ্টক – বড়ো পাথর ছোড়া যন্ত্র

লিচ্ছবীদের কাছ থেকে বৈশালী দখল করেন, কোশল জয় করেন এবং কুনিক উপাধি ধারণ করেন।

তিনি রাজগৃহে একটি দুর্গ তৈরী করেন এবং পাটলিগ্রামে একটি পর্যবেক্ষণ দুর্গ ( Watch Fort ) তৈরী করেন।

তাঁর আমলে ৪৮৩ খ্রিঃপূঃ কুশীনগরে এশিয়ার আলো গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু হয়।

তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ৪৮৩ খ্রিঃপূঃ রাজগৃহের সপ্তপর্ণী গুহায় মহাকশ্যপের সভাপতিত্বে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি/সম্মেলন আয়োজিত হয়। ( দেখে নাও গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সম্মেলনগুলির বিস্তারিত তথ্য – Click Here )

৩. উদয়ীন / উদয়ভদ্র ( ৪৬০ – ৪৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ )

পিতা অজাতশত্রুকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন।

গঙ্গা ও শোন নদীর সঙ্গমস্থলে পাটলিপুত্র শহরটি স্থাপনা করেন এবং নিজ রাজধানী সেখানে স্থানান্তরিতো করেন। পাটলিপুত্র চর্তুদিকে জলবেষ্টিত হওয়াই একে ‘Water Fort’ বা ‘জলদূর্গ’ বলা হতো।

সভাকবি ভাস ‘স্বপ্নবাসদত্তা’ ও ‘প্রতীমা’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন।

উদয়ীন জৈন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

উদয়ীনের পরবর্তীকের তিনজন দুর্বল হর্যঙ্ক রাজা সিংহাসনে বসেন – অনুরুদ্ধ, মুন্ডা এবং নাগদশক ( নাগদাস ) । বৌদ্ধ গ্রন্থে এদের তিনজনকেই পিতৃহন্তা বলা হয়েছে।

হর্যঙ্ক বংশের শেষ রাজা নাগদশককে হত্যা করেন তাঁর সভাসদ শিশুনাগ এবং শিশুনাগ রাজবংশ মগধে রাজত্ব শুরু করে।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button