History NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

ষোড়শ মহাজনপদ – নাম, রাজধানী ও বর্তমান অবস্থান

Sixteen Mahajanapadas

ষোড়শ মহাজনপদ – নাম, রাজধানী ও বর্তমান অবস্থান

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে, অর্থাৎ মহাবীর ও বুদ্ধদেবের ধর্মপ্রচারকালে উত্তর ভারত বা আর্যাবর্তে কোনও  ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীয় শক্তি গড়ে ওঠেনি। উত্তর ভারতে এই সময় “ষোড়শ মহাজনপদ” বা ষোলোটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। বৌদ্ধ জাতক, অঙ্গুত্তর নিকায়, জৈন ভগবতী সূত্র এবং হিন্দু পুরান থেকে এইসব রাজ্যগুলির কথা জানা যায়।  এই রাজ্যগুলির নাম, তাদের বর্তমান অবস্থান ও তৎকালীন রাজধানীর তথ্য নিচে দেওয়া রইলো। (ষোড়শ মহাজনপদ টিকা ) ।

ষোড়শ মহাজনপদগুলির রাজধানী ও বর্তমান অবস্থান তালিকা 

ষোড়শ মহাজনপদগুলির রাজধানী ও তাদের বর্তমান অবস্থান তালিকা নিচে দেওয়া রইলো।

মহাজনপদবর্তমান অবস্থানরাজধানী
কাশীবারাণসীবারাণসী
কোশলঅযোধ্যাশ্রাবস্তী
অঙ্গপূর্ববিহারচম্পা
মগধদক্ষিণ বিহাররাজগৃহ, পাটলিপুত্র ( পরে )
বৃজিউত্তর বিহারবৈশালী
মল্লগােরক্ষপুরকুশীনারা ও পাবা
চেদীবুন্দেলাখণ্ডসুক্তিমাটি
বৎসএলাহাবাদকৌশম্বী
মৎসজয়পুরবিরাটনগর
সুরসেনমথুরামথুরা
কুরুদিল্লিইন্দ্রপ্রস্থ
পাঞ্চালবেরিলি-বদায়ুন অঞ্চলঅহিচ্ছত্র, কাম্পিল্যা
কম্বোজপশ্চিম কাশ্মীররাজাপুর
অশ্বকগােদাবরী উপত্যকাপোটানা
অবন্তীমালবউজ্জয়িনী, মাহিস্মতি
গান্ধারপেশোয়ার অঞ্চলতক্ষশীলা
ষোড়শ মহাজনপদ তালিকা
ষোড়শ মহাজন - গুরুত্বপূর্ন তথ্য
ষোড়শ মহাজন – গুরুত্বপূর্ন তথ্য

একনজরে ষোড়শ মহাজনপদগুলি

একনজরে ষোড়শ মহাজনপদগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া রইলো।

১. অবন্তী

  • উজ্জ্বয়িনী ও নর্মদা উপত্যকার কিছু অংশ নিয়ে এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল।
  • বিন্ধ্য পর্বত একে দু-ভাগে ভাগ করে।
  • উত্তর ভাগটির রাজধানী ছিল উজ্জ্বয়িনী এবং দক্ষিণের রাজধানী ছিল মহিষ্মতী।

২. অঙ্গ

  • অধুনা ভাগলপুর ও মুঙ্গের নিয়ে গঠিত হয়েছিল অঙ্গ।
  • অথর্ববেদ ও রামায়ণে এই মহাজনপদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
  • বলা হয় যে, শিবের রোষে পরে মদনদেব এই অঞ্চলে পালিয়ে আসেন এবং এখানেই দেহ (অঙ্গ) রক্ষা করেন।
  • অঙ্গের রাজধানী চম্পা ছিল গঙ্গা ও চম্পা নদীর সঙ্গমস্থলে।

৩. অস্মক

  • এটি ছিল দক্ষিণ ভারতের একমাত্র মহাজনপদ।
  • গোদাবরী নদীর তীরে , অবন্তীর দক্ষিণ সীমানায় গড়ে উঠেছিল অস্মক।
  • ব্রহ্মদত্ত, অরুন প্রমুখেরা ছিলেন অস্মকের উল্লেখযোগ্য শাসক।

৪. বৎস

  • এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল যমুনা নদীর তীরে।
  • এর রাজধানী কৌশাম্বি বা কোসম এলাহাবাদের নিকট অবস্থিত।
  • উদয়ন ছিলেন বৎসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজা।
  • এই মহাজনপদটি কার্পাস শিল্পে বেশ উন্নত ছিল।

৫. বৃজ্জি

  • গঙ্গা নদীর উত্তর থেকে নেপালের পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত বৃজ্জি মহাজপদটি বৃস্তিত ছিল।
  • পূর্বদিকে এর বিস্তার ছিল কোশী ও মহানন্দা নদী পর্যন্ত।

৬. চেদি

  • বর্তমান বুন্দেলখণ্ডের পূর্বের অংশ নিয়ে এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল।
  • এর রাজধানী ছিল শুক্তিমতী বা সুক্তিমাটি।
  • ত্রিপুরী ও সহজাতি ছিল চেদি রাজ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নগর।
  • কথিত আছে চেদিরাজ শিশুপাল শ্রীকৃষ্ণের হাতে নিহত হন।

৭. গান্ধার

  • এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল বর্তমান রাওয়ালপিন্ডি এবং পেশোয়ার জেলা নিয়ে।
  • এর রাজধানী ছিল তক্ষশীলা। তক্ষ নামক এক রাজপুত্র এই নগরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
  • গান্ধার মহাজনপদ পশম শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।
  • বর্তমান কাশ্মীর ছিল গান্ধার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত।

৮. কোশল

  • খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কোশল ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাজনপদ।
  • সরযূ নদী কোশল রাজ্যকে দু-ভাবে বিভক্ত করে।
  • উত্তর কোশলের রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী আর দক্ষিণ কোশলের রাজধানী ছিল কুশবতী।
  • অযোধ্যা, সকেত ও শ্রাবস্তী ছিল এর উল্লেখযোগ্য শহর।

৯. কুরু

  • দিল্লি ও মিরাট অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছিল কুরু মহাজনপদটি।
  • এর রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ।
  • এই মহাজনপদের উল্লেখযোগ্য নগর হল – বার্নাবত, কুন্ডি, হস্তিনাপুর প্রভৃতি।
  • পান্ডব ও কৌরবগণ ছিলেন এই কুরু বংশের অন্তর্ভুক্ত।
  • একাধিক রাজা মিলিতভাবে কুরুরাজ্য শাসন করতেন।

১০. মগধ

  • বিহারের গয়া ও পাটনা অঞ্চল নিয়ে এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল।
  • মগধের উত্তরে ছিল গঙ্গা নদী, দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত, পূর্বে চম্পা এবং পশ্চিমে শোন নদী।
  • মহাভারত ও পুরানের মতে , মগধের প্রাচীনতম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জরাসন্ধের পিত বৃহদ্রথ।

দেখে নাও :

মগধের উত্থান – পার্ট ১ – হর্যঙ্ক বংশ
মগধের উত্থান – পার্ট ২ – শিশুনাগ বংশ
মগধের উত্থান – পার্ট ৩ – নন্দ বংশ
মগধের উত্থান – পার্ট ৪ – মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাস
মগধের ইতিহাস

১১. কাশী

  • কথিত আছে, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের গেরুয়া আলখাল্লাকে বলা হত কাশায়। এই শব্দটি থেকেই কাশী নামটি এসেছে।
  • প্রথম দিকে কাশীই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী মহাজনপদ।
  • কাশীর রাজধানী ছিল বারাণসী।
  • বারাণসী নামটি এসেছে বরনা ও অসি নামক দুটি নদীর নাম থেকে।
  • এই নদী দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বারাণসী নগরটি অবস্থিত ছিল।

১২. কম্বোজ

  • মহাভারতে কম্বোজ উপজাতির উল্লেখ পাওয়া যায়।
  • এই মহাজনপদটি গান্ধারের পাশাপাশি অবস্থিত ছিল।
  • এর রাজধানী ছিল রাজপুর/ রাজাপুর।
  • নন্দিনগর ছিল কম্বোজের অপর একটি উল্লেখযোগ্য নগর।

১৩. মল্ল

  • মল্লদের কয়েকটি বংশ-শাখা ছিল।
  • দুটি শাখা কুশীনগর এবং পাব নগরে রাজধানী স্থাপন করে শাসন পরিচালনা করতো।
  • রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত থাকাকালীন মল্লদের রাজধানী কুশবতী ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক মহানগরী।
  • মল্লদের অপর দুটি উল্লেখযোগ্য নগর হল অনুপ্রিয় ও উরুবেলকপ্প ।
  • পাব নগরে মল্লরা একটি সংঘ স্থাপন করেছিলেন। সংঘটির উদ্বোধন করেন স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ।

১৪. মৎস

  • রাজস্থানের আলোয়াড়-জয়পুর-ভরতপুর অঞ্চল জুড়ে এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল।
  • এর রাজধানী ছিল বিরাটনগর (অধুনা জয়পুরের বৈরাট )।
  • এই মহাজনপদের আরও একটি উল্লেখযোগ্য নগর ছিল উপলব্য।
  • ঋগ্বেদে মৎসদের উল্লেখ রয়েছে।

১৫. পাঞ্চাল

  • বেরিলি, বদায়ুন, ফারুখাবাদ, পিলভিট, আলীগড় প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে এই মহাজনপদটি গড়ে উঠেছিল।
  • এর পূর্ব দিকে ছিল গোমতী নদী, আর দক্ষিণে ছিল চম্বল নদী।
  • সমগ্র মহাজনপদটি ভাগীরথী নদী দ্বারা দু-ভাগে বিভক্ত ছিল – উত্তর পাঞ্চাল ও দক্ষিণ পাঞ্চাল।

১৬. সুরসেন

  • সুরসেন মহাজনপদের রাজধানী ছিল মথুরা।
  • মহাভারত ও পূরণের মতে, যদু বা যাদব বংশ মথুরা শাসন করতো।
  • সুরসেনের রাজা অবন্তীপুত্র মথুরা অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

ষোড়শ মহাজনপদ MOCK Test – Click Here 

আরও দেখে নাও :

সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান নগর ও তাদের বৈশিষ্ট্য

গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম | Ancient Indian History

মহাবীর ও জৈন ধর্মের ইতিহাস – তীর্থঙ্কর

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button