সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান নগর ও তাদের বৈশিষ্ট্য
Indus Valley Civilization - Major Sites
সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান নগর : আজকে আমরা আলোচনা করবো সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতার প্রধান প্রধান নগর বা কেন্দ্র তালিকা নিয়ে।
Table of Contents
হরপ্পা
হরপ্পা শহরটি পশ্চিম পাঞ্জাবের মন্টগোমারি জেলাতে রবি নদীর তীরে অবস্থিত ছিল ।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে হরপ্পা শহরটি আবিষ্কার করেন দয়ারাম সাহানি।
হরপ্পা নগরের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
- এখানে প্রতিটি সারিতে ৬টি করে মোট ১২টি শস্যাগার পাওয়া গিয়েছে।
- এখানে কফিনে করে কবর দেওয়া হত।
- লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরী পুরুষের ধড় পাওয়া গিয়েছে।
- পাথরের তৈরী যোনী (Female genitals ) ও পুরুষলিঙ্গের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
- মেসোপটেমিয়ার সাথে বাণিজ্যের অনেক প্রমান দেখা যায়।
- কুমারী দেবী (Virgin Goddess ) এর প্রতিমা পাওয়া গিয়েছে।
- এখানে শ্রমিকদের জন্য আলাদা বাসগৃহ (Quarters ) ছিল।
- রঙিন মাটির পাত্রের প্রচলন ছিল।
- ব্রোঞ্জ গলানোর জন্য ধাতুর পাত্র ব্যবহার করা হত।
- তামার তৈরী আয়না, পাশা (Dice ), তামার তৈরী মাপনী, গম ও বার্লি পেষানোর ঢেঁকি প্রভৃতির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
মহেঞ্জোদারো
মহেঞ্জোদারো নগরটি সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
মহেঞ্জোদারো শব্দটির অর্থ মৃতের স্তুপ।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে মহেঞ্জোদারো শহরটি আবিষ্কার করেন রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়।
মহেঞ্জোদারো নগরের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
- বৃহৎ শস্যাগার (মহেঞ্জোদারোর বৃহত্তম ভবন )
- বৃহৎ স্নানাগার
- একটি কলেজ ও বহু গম্বুজবিশিষ্ট অ্যাসেম্বলি হল।
- সুতির বস্ত্র ও সুঁচ।
- নৃত্যরত বালিকার একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি এখানে পাওয়া গিয়েছে।
- মাতৃদেবীর একটি শীল পাওয়া গিয়েছে যার গর্ভে গাছ বেড়ে চলেছে।
- একটি শীল পাওয়া গিয়েছে যেটিতে একটি পুরুষ ছুড়ি দিয়ে একটি মহিলাকে বলি দিচ্ছে।
- পশুপতি মহাদেবের একটি শীল পাওয়া গিয়েছে।
- স্টিয়াটাইট দ্বারা তৈরী একটি দাড়িবিশিষ্ট পুরুষের ছবি পাওয়া গিয়েছে।
- একজায়গায় অনেকগুলি মানুষের খুলি একত্রে পাওয়া গিয়েছে।
- ২টি মেসোপটেমিয়ার শীল পাওয়া গিয়েছে।
- মহেঞ্জোদারো থেকে মোট ১৩৯৮টি শীল পাওয়া গিয়েছে।
- পাশা খেলার নিদর্শন পাওয়া যায়।
কালিবঙ্গান
কালিবঙ্গান নগরটি রাজস্থানে অবস্থিত। এটি ঘর্ঘরা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে কালিবঙ্গান আবিষ্কার করেন বি কে থাপার ।
কালিবঙ্গান নগরের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
- কালিবঙ্গান শব্দের অর্থ হল “Black Bangles” বা কালো চুরি।
- কালিবঙ্গানের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল লাঙল দিয়ে চাষ করা একটি জমি।
- একটি মাচার ওপরে সাতখানি আগুনবেদি (Fire Altar ) একটি সারিতে পাওয়া গিয়েছিলো, যেটি প্রমান করে বলিপ্রথা বা Cult of Sacrifice এখানে প্রচলিত ছিল।
- এখানে দুর্গের চারিদিকে ইঁটের প্রাচীর ছিল।
- উটের হাড়ের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে কালিবঙ্গানে।
- এখানে দুই ধরণের কবর দেখা যেত – গোলাকার ও চতুরকার।
- মনুষ্য মস্তিস্ক পাওয়া গিয়েছে যাতে লম্বা ডিম্বাকৃতি চোখ, মোটা নিম্ন ঠোঁট, চওড়া কপাল, সোজা ও সূঁচালো নাক দেখা যায়।
- খেলাগাড়ির চাকার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
লোথাল
লোথাল শহরটি গুজরাটে অবস্থিত ছিল। এটি ভোগাবা নদীর সাথে খাল দ্বারা যুক্ত ছিল।
লোথাল শব্দটির অর্থ মৃতের স্তুপ।
লোথাল শহরটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল –
- এটি ছিল হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র।
- এটি ছিল বন্দর শহর।
- লোথালের নগর পরিকল্পনা একটি অন্যরকমের ছিল। শহরটি ছটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি ভাগ কাঁচা ইঁট দিয়ে তৈরী এবং চওড়া রাস্তা দিয়ে পৃথক করা ছিল।
- ধানের তুষ (Rice Husk ) এর নিদর্শন লোথালে পাওয়া গিয়েছে। রংপুর ছাড়া এটি হরপ্পা সভ্যতার একমাত্র শহর যেখানে ধানের তুষের নিদর্শন পাওয়া যায়।
- ঘোড়ার মত দেখতে ইঁটের তৈরী (Terracota ) মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।
- সিন্ধু সভ্যতার একমাত্র শহর যেখানে বাড়ির সদর দরজা প্রধান সড়কের দিকে ছিল (অন্য শহরে পাশে থাকত )।
- একটি শীল পাওয়া গিয়েছে যাতে জলজাহাজের ছবি পাওয়া যায়।
- মাটির তৈরী জলজাহাজ (Terracota Ship ) এর নিদর্শন পাওয়া যায়।
- পঞ্চতন্ত্রে উল্লিখিত চালাক শেয়ালের গল্পের চিত্র একটি কলসির ওপর পাওয়া গিয়েছে।
- কামার (Metal Workers ) এবং শাখারি (Shell-Ornamenet Maker ) এর দোকান পাওয়া গিয়েছে।
- এখানে দ্বৈত কবর (Double Burial ) এর নিদর্শন পাওয়া যায় যেক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাকে একই কবরে কবরস্থ করা হত ।
সুকতাজেন্দর
বালুচিস্তানে অবস্থিত। দাস্ত নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্টেইন আবিষ্কার করেন।
সুকতাজেন্দর শহরটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল-
- এটি হরপ্পা ও ব্যাবিলনের সংযোগ রক্ষাকারী বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল।
- এখানে পাথরের পাত্র, পাথরের তীর এবং মৃৎশিল্পের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যায়।
চানহুদারো
চানহুদারো শহরটি সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত ছিল। এটি সিন্ধু নদীর বামতীরে অবস্থিত।
১৯৩১ সালে এটি আবিষ্কার করেন ননীগোপাল মজুমদার।
চানহুদারো শহরটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল –
- সিন্ধু সভ্যতার একমাত্র শহর যেখানে কোনো দুর্গ ছিল না।
- পুঁথি তৈরির কারখানার নিদর্শন এখানে পাওয়া যায়।
- কালির দোয়াত, লিপস্টিক প্রভৃতির প্রমান এখানে মিলেছে।
- শীল তৈরী, পুতুল বানানো এবং হাঁড়ের কাজের কারখানার জন্য বিখ্যাত ছিল।
- এখানে ব্রোঞ্জের তৈরী ষাঁড়-এ টানা গাড়ির খেলনা পাওয়া গিয়েছে।
- এখানকার ইঁটের ওপরে হাতি ও কুকুরের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে।
আলমগীরপুর
উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত। এটি সিন্ধু সভ্যতার পূর্বতম শহর ছিল। গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। হরপ্পা সংস্কৃতির শেষ পর্যায়ের নগর এটি।
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ওয়াই ডি শর্মা এই শহরটি আবিষ্কার করেন।
এখানে কাপড়ে মোড়া পাত্রের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
বানাওয়ালী
হরিয়ানার ফতেহাবাদ জেলাতে অবস্থিত ছিল। রঙ্গোই নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
১৯৭৪ সালে আর এস বিশত এই নগরটি আবিষ্কার করেন।
বানাওয়ালী শহরের বৈশিষ্ট্য ছিল –
- এখানে হরপ্পার অন্যান্য শহরগুলির ন্যায় দাবার বোর্ডের মত অর্থাৎ Grid Pattern এ নগরপরিকল্পনা ছিল না।
- এখানে জলনিকাশী ব্যবস্থা ছিল না।
- মাটির তৈরী মাতৃদেবীর মূর্তি এখানে পাওয়া গিয়েছে।
- খেলার লাঙ্গল এর নিদর্শন এখানে পাওয়া গিয়েছে।
- তামার তৈরী একটি রথ এখানে পাওয়া গিয়েছে।
- তামার তৈরী চিপ পাওয়া গিয়েছে।
ধোলাভিরা
গুজরাটের কচ্ছে অবস্থিত।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জগৎপতি যোশী ধোলাভিরা নগরটি আবিষ্কার করেন।
২০২১ সালে ধোলাভিরাকে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সাইট হিসেবে ঘোষণা করে।
ধোলাভিরা শহরটির বৈশিষ্ট্য ছিল –
- এখানকার জলনিকাশী ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত।
- একটি বড় কুঁয়ো ও স্নানাগার এখানে পাওয়া গিয়েছিলো।
- এটি ছিল একমাত্র শহর যেটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল।
- একটি স্টেডিয়াম এখানে পাওয়া গিয়েছে।
- এটি ভারতে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতার নগরগুলির মধ্যে বৃহত্তম ছিল।
- সাইন বোর্ডের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
- এখানে রককাট শিল্পশৈলীর নির্দর্শন পাওয়া গিয়েছে।
সুরকোটাডা
গুজরাটের কচ্ছে অবস্থিত।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জগৎপতি যোশী ধোলাভিরা নগরটি আবিষ্কার করেন।
সুরকোটাডা শহরটির বৈশিষ্ট্য ছিল –
- এখানে ঘোড়ার হাঁড়ের নিদর্শন পাওয়া যায়।
- এখানে ডিম্বাকৃতি কবর দেখা যায়। পাত্রে করে কবর দেওয়া হত (Pot Burial )
- এটা প্রথমদিকে বন্দর ছিল কিন্তু পরে সমুদ্রের জল সরে যাওয়াতে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
- শহরটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল – দুর্গ ও নিম্ন শহর।
দাইমাবাদ
দাইমাবাদ শহরটি মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলাতে অবস্থিত।
এখানে বিভিন্ন ধরণের ব্রোঞ্জের ছবি পাওয়া গিয়েছিলো যাদের মধ্যে রথচালক রথ নিয়ে চলছে, ষাঁড়, হাতি এবং একশৃঙ্গ গন্ডার উল্লেখযোগ্য ছিল।
রোপার
রোপার শহরটি পাঞ্জাবে অবস্থিত। বর্তমানে এটি রূপনগর নামে পরিচিত। এটি শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত।
১৯৫৩ সালে এটি আবিষ্কার করেন ওয়াই ডি শর্মা।
রোপার শহরটির বৈশিষ্ট্য ছিল –
- এটিতে প্রাক-হরপ্পা সংস্কৃতি দেখা যায়।
- বাড়িগুলি প্রধানত মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরী হত।
- এখানে মানুষের সাথে কুকুরের কবরের নিদর্শন মিলেছে। প্রভুর সাথে কুকুরের কবরের নিদর্শন কাশ্মীরের বুর্জহামেও দেখা যেত।
- একটি তামার তৈরী কুঠার এখানে পাওয়া গিয়েছে।
কোটদিজি
সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত ছিল।
কোটদিজি শহরটির বৈশিষ্ট্য ছিল –
- এখানেও রোপারের ন্যায় প্রাক-হরপ্পা সংস্কৃতি দেখা যায়।
- পাথরের তৈরী ঘর দেখা যেত।
- এই শহরটি যুদ্ধের জন্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
আমরি
বালুচিস্তানের নিকট সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত ছিল। সিন্ধু নদীর কাছে গড়ে উঠেছিল।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে এন জি মজুমদার আবিষ্কার করেন।
- এখানে একশৃঙ্গ গন্ডারের অবশেষ পাওয়া গিয়েছে।
- এখানে বিশেষ প্রজাতির হরিনের (Antelope ) অবশেষ পাওয়া গিয়েছে ।
এরকম আরও কিছু পোস্ট :
নিচের ডাউনলোড লিংক থেকে PDF ফাইল ডাউনলোড করে নাও
Download
Download Section :
- File Name : সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান নগর ও তাদের বৈশিষ্ট্য – বাংলা কুইজ
- File Size : 3 MB
- No. of Pages: 08
- Format: PDF
- Language: Bengali
- Subject: Ancient Indian History
Covered Topics : Major Indus Valley Site in Bengali, সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাস, সিধু সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র, হরপ্পা সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র তালিকা, হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা,
To check our latest Posts - Click Here