Geography NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

সমুদ্রস্রোত কাকে বলে ? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য

What is Oceanic currents ? Causes and Characteristics of Oceanic currents

সমুদ্রস্রোত কাকে বলে ? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য

প্রিয় পাঠকেরা,  আজকে আমরা আলোচনা করবো সমুদ্রস্রোত কাকে বলে ? সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য নিয়ে। পরবর্তী আরেকটি পোস্টে আমরা আলোচনা করবো বিভিন্ন ধরণের সমুদ্র স্রোত সম্পর্কে।

সমুদ্রস্রোত কাকে বলে ?

পৃথিবীর আবর্তনগতি, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রজলে লবণতা, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের ওপরে জলরাশি নিয়মিতভাবে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রজলে এই গতিকে সমুদ্রস্রোত বলে।

বলে রাখা ভালো যে সমুদ্রে যে ঢেউ দেখা যায় তা সমুদ্রস্রোত নয়, সেটি সমুদ্র তরঙ্গ। এতে জলরাশি কেবল একই স্থানে ওঠা নামা করে, প্রবাহিত হয় না।

দেখে নাও : বিভিন্ন ধরণের সমুদ্রস্রোতের তালিকা – List of Ocean Currents of the World

সমুদ্রস্রোতের বিভাগ –

সমুদ্রস্রোতকে উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে দুই ভাবে ভাগ করা হয় –

[১] উষ্ণ স্রোত : উষমন্ডলের উষ্ণ ও হালকা জলরাশি জলের উপরিভাগ দিয়ে পৃষ্ঠ প্রবাহ রূপে মেরু অঞ্চলের দিকে  প্রবাহিত হয়। এরূপ স্রোতকে উষ্ণ স্রোত বলে।

[২] শীতল শর্ত : মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জলরাশি জলের নিচের অংশ দিয়ে অন্ত:প্রবাহ রূপে উষ্ণমন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়। এরূপ স্রোতকে শীতল সমুদ্রস্রোত বলে।

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির  কারণ –

[১] নিয়তবায়ু প্রবাহ : নিয়তবায়ু প্রবাহই সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টির প্রধান কারণ। আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ুর প্রবাহ অনুযায়ী প্রধান প্রধান সমুদ্রস্রোত গুলির সৃষ্টি হয়।

বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত
বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত

[২] পৃথিবীর আবর্তন গতি : পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ফেরেল সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহের মত সমুদ্র-জলও উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও সৌখিন গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। এর ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।

[৩] সমূদ্রজলের লবণতার পার্থক্য : সমূদ্রজলের লবণতার পরিমান সর্বত্র সমান নয়। অধিক লবনাক্ত জল বেশি ভারী বলে তার ঘনত্বও বেশি হয়। বেশি ঘনত্বের জল কম ঘনত্বের দিকে প্রবাহিত হয় ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।

[৪] সমুদ্রজলে উষ্ণতার পার্থক্য : উষ্ণমন্ডলের সমুদ্রের জলে বেশি উষ্ণ বলে তা জলের ওপরের অংশ দিয়ে পৃষ্ঠ প্রবাহ বা বহিঃস্রোত রূপে মেরু অঞ্চলে বা শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। উষ্ণমন্ডলে জলের এই অভাব পূরণ করার জন্য মেরু অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী জল জলের নিচের অংশ দিয়ে অন্তঃপ্রবাহ বা অন্তঃস্রোত রূপে উষ্ণমন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ভাবে উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।

[৫] ভূ-খন্ডের অবস্থান : সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে কোন মহাদেশ, দ্বীপ প্রভৃতি ভূখণ্ড অবস্থান করলে সমুদ্রস্রত তাতে বাঁধা পেয়ে দিক ও গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় এর প্রভাবে সমুদ্রস্রোত একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়।

[৬] বিভিন্ন সমুদ্রস্রোতের মিলনস্থল : বিভিন্ন সমুদ্রস্রোতের মিলনস্থলে জলরাশির কিছু অংশ নিচের দিকে নেমে যায়। এর ফলে সমুদ্রস্রোত কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়।

[৭] মেরু অঞ্চলে সমুদ্রে বরফের গলন : মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে বরফ কিছু পরিমানে গলে গেলে জলরাশি স্ফীত হয় ও সমুদ্রজলের লবণতার পরিমান হ্রাস পায়। এর ফলেও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।

সমুদ্রস্রোতের বৈশিষ্ট্য :

  • উষ্ণস্রোত বহিঃস্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে এবং শীতল স্রোত অন্তঃস্রোত রূপে মেরু অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
  • সমুদ্রস্রোত সােজাসুজি প্রবাহিত হয় না। ফেরেল সূত্র অনুসারে উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
  • আয়নবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে সমুদ্রস্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।
  • বায়ুপ্রবাহের মত সমুদ্রস্রোত দ্রুত প্রবাহিত হয় না। এর গতি ধীর। গভীর সমুদ্র অপেক্ষা অগভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোত কিছুটা দ্রুত প্রবাহিত হয়। গভীর সমুদ্রে এর গতি সেকেণ্ডে ১-১.২৫ মিটার এবং অগভীর সমুদ্রে এর গতি প্রতি সেকেণ্ডে ২-২.৫ মিটার।
  • বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয়, সেই দিক অনুসারে বায়ুপ্রবাহের নামকরণ করা হয়। কিন্তু সমুদ্রস্রোতের নামকরণ করা হয় এর ঠিক বিপরীতভাবে। সমুদ্রস্রোত যে দিকে বয়ে যায় সেই দিক অনুসারে সমুদ্রস্রোতের নামকরণ করা হয়।
  • উষ্ণ ও শীতল স্রোত যখন পাশাপাশি বয়ে যায়, তখন সেখানে কুয়াশা ও ঝড়-ঝঞার সৃষ্টি হয়। উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়।
  • যে স্থান বা যে অঞ্চলের নিকট দিয়ে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়, সেই স্থান বা অঞ্চলের নামেই সমুদ্রস্রোতের নামকরণ করা হয়।

আরও দেখে নাও :

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button