ভারতের বিভিন্ন নদ-নদী – তাদের উপনদী, শাখানদী ও অন্যান্য তথ্য
Important Rivers of India and their tributaries - PDF

Table of Contents
ভারতের বিভিন্ন নদ-নদী – তাদের উপনদী, শাখানদী ও অন্যান্য তথ্য
আজকে আমরা আলোচনা করবো ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদী – তাদের উপনদী, শাখানদী ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে। ভারতের নদ-নদী ।
ভারত নদীমাতৃক দেশ। সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে বহু প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের নদ-নদীগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে আসছে। ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা নদ-নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে পরিবহণ ব্যবস্থায়, জলসেচে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, পানীয় জল সরবরাহে, শিল্পের বিকাশে নদ-নদীগুলির ভূমিকা ভারতের জনজীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই নদ-নদীকে ভারতের হৃদয়’রূপে আখ্যা খেয়া হয়।
ভারতের তিনটি প্রধান জলবিভাজিকা —হিমালয় পর্বত, মধ্যভারতের উঁচু ভূমি ও পশ্চিমঘাট পর্বত হতে অধিকাংশ নদ-নদী উৎপন্ন হয়ে ভূমির ঢাল অনুসারে প্রবাহিত হয়েছে। উত্তর ভারতের হিমালয় হতে উৎপন্ন নদীগুলি বরফ-গলা জলে পুষ্ট বলে তাতে সারা বছর জল থাকে। পশ্চিমঘাট বা মধ্যভারতের উঁচু ভূমি হতে উৎপন্ন নদ-নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে না বা বর্ষাকাল ভিন্ন অন্য সময়ে জলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহিত নদ-নদীগুলির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন রকম।
এর আগে আমরা আলোচনা করেছি ভারতের বিভিন্ন নদীর উৎপত্তিস্থল ও পতনস্থল নিয়ে। বিভিন্ন নদীর উৎপত্তিস্থল ও পতনস্থল সম্পর্কে জানতে দেখে নাও – ভারতের বিভিন্ন নদীর উৎস ও পতনস্থল – PDF – গুরুত্বপূর্ণ নদনদী
ভারতের নদনদী
সিন্ধু নদী
দৈর্ঘ্য | ভারতে ৭০৯ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | মানস সরোবরের নিকট সিঙ্গিখাবাব হিমবাহ |
উপনদী | ডানতীরের : শায়ক, শিগার ও গিগিট বামতীরের : বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, শতদ্রু, বিপাশা |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | ভারতের নেই |
মোহনা | আরব সাগর |
গঙ্গা নদী
দৈর্ঘ্য | ভারতে ২৫২৫ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | গঙ্গোত্রী হিমবাহ |
উপনদী | ডানতীরের : যমুনা, শোন । বামতীরের : রামগঙ্গা, ঘর্ঘরা, গোমতী, গণ্ডক, কোশী। |
শাখানদী | ভাগীরথী, হুগলি, ভৈরবী, জলঙ্গি, চূর্ণী, মাথাভাঙ্গা, পিয়ালী। |
বদ্বীপ | সুন্দরবন |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
ব্রহ্মপুত্র নদ
দৈর্ঘ্য | ভারতে ৮৮৫ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | তিব্বতের চেমায়ুঙ দুং হিমবাহ |
উপনদী | ডানতীরের : সুবর্ণশিরি, কামেং, মানস, এমা চো, সঙ্কোশ, তিস্তা। বামতীরের : বুড়ি ডিহং, ডিসাঙ, কোপিলি, ধানসিরি । |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | সুন্দরবন |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
শতদ্রু নদী
দৈর্ঘ্য | ভারতে ১০৫০ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | তিব্বতের রাক্ষসতাল হ্রদ |
উপনদী | বিপাশা |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | সিন্ধু নদী ( সিন্ধুর উপনদী ) |
বিতস্তা নদী
দৈর্ঘ্য | ভারতে ৪০০ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | ভেরিনাগ প্রসবন |
উপনদী | নেই |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | চন্দ্রভাগা নদী ( চন্দ্রভাগার উপনদী ) |
যমুনা নদী
দৈর্ঘ্য | ১৩০০ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | যমুনেত্রী হিমবাহ |
উপনদী | টোনস, গিরি, চম্বল, বেতোয়া, কেন । |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | গঙ্গা নদী ( গঙ্গার উপনদী ) |
ভাগীরথী-হুগলি
দৈর্ঘ্য | ৪৫০ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | গঙ্গার শাখানদী |
উপনদী | অজয়, ময়ূরাক্ষী, দামোদর, রূপনারায়ণ, হলদি । |
শাখানদী | ভৈরবী, মাথাভাঙ্গা, পিয়ালী, রায়মঙ্গল, গড়াই, বড়তলা, জামিবা, মাতলা। |
বদ্বীপ | সুন্দরবন |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
লুনি নদী
দৈর্ঘ্য | ৪৫০ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | আনাসাগর |
উপনদী | সুকরী জওয়াই |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | কচ্ছের রণ |
মহানদী
দৈর্ঘ্য | ৮৫৮ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | সিহওয়া পাহাড় |
উপনদী | শিবনাথ, হাঁসদেও, ম্যান্ড, ইব, বৈতরণী, ব্রাহ্মণী, টেল। |
শাখানদী | কাটজুড়ি, কুশভদ্রা, বিরূপা, ভার্গবী, দয়া। |
বদ্বীপ | আছে |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
গোদাবরী
দৈর্ঘ্য | ১৪৬৫ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | পশ্চিমঘাটের ত্রম্বক শৃঙ্গ |
উপনদী | ইন্দ্রাবতী, প্রানহিতা, মঞ্জিরা, পূর্ণা, সাবরী, প্রবর । |
শাখানদী | গৌতমী, গোদাবরী, বশিষ্ট, বৈনতেয় |
বদ্বীপ | আছে |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
কৃষ্ণা
দৈর্ঘ্য | ১৪০০ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | পশ্চিমঘাটের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ |
উপনদী | কয়না, ইয়েরলা, ঘাতপ্রভা, মালপ্রভা, ভীমা, তুঙ্গভদ্রা |
শাখানদী | ভামসধারা, নাগবতী |
বদ্বীপ | আছে |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
কাবেরী
দৈর্ঘ্য | ৮০৫ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | পশ্চিমঘাটের ব্রহ্মগিরি শৃঙ্গ |
উপনদী | হেমবতী, শিমসা, কাব্বানী, লক্ষণতীর্থ, ভবানী |
শাখানদী | কোলেরুন |
বদ্বীপ | আছে |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
নর্মদা
দৈর্ঘ্য | ১৩১২ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | মহাকাল পর্বতের অমরকণ্টক শৃঙ্গ |
উপনদী | হিরণ, বর্ণা, ওরসাং |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | খাম্বাত উপসাগর |
তাপ্তী
দৈর্ঘ্য | ৭২৪ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | মহাদেব পর্বতের মূলতাই উঁচুভূমি |
উপনদী | পূর্ণা, গিরনা, বোরি পাঁঝরা |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | খাম্বাত উপসাগর |
সবরমতী
দৈর্ঘ্য | ৪১৬ কিমি |
উৎপত্তিস্থল | আরাবল্লী পর্বত |
উপনদী | নেই |
শাখানদী | নেই |
বদ্বীপ | নেই |
মোহনা | খাম্বাত উপসাগর |
একনজরে ভারতের নদ-নদী
- উত্তর ভারতের নদ-নদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, লুনী প্রভৃতি।
- দক্ষিণ ভারতের নদ-নদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
- পূর্ব বাহিনী – মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি।
- পশ্চিমবাহিনী – নর্মদা, তাপ্তী, সবরমতি প্রভৃতি।
- সিন্ধু নদের উৎপত্তি হয়েছে সিঙ্গি খাবার হিমবাহ থেকে। ( দেখে নাও – ভারতের বিভিন্ন নদীর উৎস ও পতনস্থল – PDF – গুরুত্বপূর্ণ নদনদী )
- সিন্ধুর পাঁচটি বিখ্যাত উপনদী হলো – বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, শতদ্রু ও বিপাশা।
- ভগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ দেবপ্রয়াগের নিকট গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে। ( দেখে নাও – ভারতের বিভিন্ন নদীর সঙ্গমস্থল । River confluences of India )
- গঙ্গার প্রধান উপনদী – যমুনা।
- ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে তিব্বতের চেমায়ুঙ দুং হিমবাহ থেকে।
- তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের নাম – সাংপো, অরুণাচলপ্রদেশে ডিহং, আসামে ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশে যমুনা।
- গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হলো – হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, কলকাতা প্রভৃতি। ( দেখে নাও – ভারতের নদী তীরবর্তী প্রসিদ্ধ শহর ( PDF ) )
- ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হল – ডিব্রুগড়, তেজপুর, গৌহাটি, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি প্রভৃতি।
- পূর্ববাহিনী নদী মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদীর মোহনায় ব-দ্বীপ দেখা যায়।
- কাবেরী ও কেলেরুন নদীর মধ্যবর্তী স্থানে শ্রীরঙ্গম দ্বীপ অবস্থিত।
- গোদাবরী, মতান্তরে কাবেরী নদীকে “দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা” বলা হয়।
- কাবেরী নদীর বদ্বীপকে “দক্ষিন ভারতের শস্যভাণ্ডার” বলা হয়।
- ভারতের পশ্চিমবাহিনী কোনো নদীর মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি।
- সরাবতী নদীর ওপরে অবস্থিত যোগ বা গেরোসোপ্পা জলপ্রপাত ভারুটের অন্যতম একটি উচ্চ-জলপ্রপাত ( দেখে নাও – ভারতের উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাত তালিকা )
- লুনী বাদে রূপনগর ও মেধা নদী ভারতের অন্তর্বাহিনী নদী।
- গঙ্গা নদীর অববাহিকা ভারতের মধ্যে বৃহত্তম।
- ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ চিল্কা ( দেখে নাও – ভারতের উল্লেখযোগ্য কিছু হ্রদ – রাজ্যভিত্তিক )
আরও দেখে নাও :
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নদীপ্রকল্প সমূহ – PDF
কোন নদী কোন রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত – PDF
ভারতের নদ-নদী সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন-উত্তর
দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী হয় কেন ?
ভারতের পশ্চিম উপকূল চ্যুতিযুক্ত হওয়ায় আরব সাগরীয় সামুদ্রিক পাতের চাপ প্রতিরোধ করতে গিয়ে পশ্চিম উপকূল পূর্বদিকে বেঁকে যায় ও ঢালযুক্ত হয়। এর ফলে ভূমির ঢাল স্বাবাভিকভাবেই পশ্চিম থেকে পূর্বে হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী।
পশ্চিমবাহিনী নদীর মোহনায় ব-দ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন ?
অধিকাংশ নদী ক্ষুদ্র বলে নদীর জলে পলি কম থাকে, নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম বলে জলের পরিমাণ কম, নর্মদা ও তাপ্তী বড়ো নদী হলেও জলের স্রোত বেশী হওয়ার জন্য পলি সঞ্চয়ের সম্ভাবনা প্রায় নেই, আরব সাগর ও খাম্বাত উপসাগর গভীর হওয়ায় পলি সঞ্চয় তেমন হয় না।
নর্মদা ও তাপ্তী পশ্চিমবাহিনী কেন ?
ভারতের ভূমির স্বাভাবিক ঢাল পশ্চিমথেকে পূর্বে হলেও নর্মদা ও তাপ্তী নদী গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই দুটি নদী পশ্চিমবাহিনী হয়েছে।
Download Section :
- File Name : ভারতের বিভিন্ন নদ-নদী – তাদের উপনদী, শাখানদী ও অন্যান্য তথ্য – বাংলা কুইজ
- File Size : 3.8 MB
- No. of Pages : 08
- Format : PDF
To check our latest Posts - Click Here