বাংলা ব্যাকরণ

ধ্বনি কাকে বলে ? – স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি

ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে - বাংলা ব্যাকরণ

ধ্বনি কাকে বলে ? – স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি

প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো ধ্বনি কাকে বলে ? – ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি ? স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি কি ।

ধ্বনি কাকে বলে ?

যে কোনো ভাষার ক্ষুদ্রতম একককে ধ্বনি বলা হয়ে থাকে। মানুষ একে অপরের সাথে ভাব বিনিময়ের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে যে অর্থযুক্ত শব্দ উচ্চারণ করে থাকে, তাকেই ধ্বনি বলা হয়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে – ভারত : ভ + অ + র + ত = এখানে মোট ৪টি ধ্বনি রয়েছে।

কোন ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আমরা কতগুলো ধ্বনি পাই

ড: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

দেখে নাও : কারক ও বিভক্তি – বাংলা ব্যাকরণ

বর্ণ কাকে বলে ?

ধ্বনির লিখিত রূপকেই বর্ণ বলা হয়ে থাকে। বর্ণ দেখা যায় কিন্তু ধ্বনি শোনা যায়।

ধ্বনির মূল বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ

ধ্বনির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • ধ্বনির নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। কতগুলো ধ্বনি মিলে অর্থবহ শব্দ সৃষ্টি করে থাকে।
  • যে কোনো ভাষার মূল উপাদান হল ধ্বনি। তাই বলা যেতে পারে ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হল ধ্বনি।
  • ধ্বনির গঠনে বিভিন্ন বাক্ প্রত্যঙ্গের ভূমিকা রয়েছে।
  • ধ্বনির উৎপাদনে ফুসফুসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও ধ্বনি কিন্তু সরাসরি ফুসফুস থেকে উৎপন্ন হয়না।

শুদ্ধ ও অশুদ্ধ বানান তালিকা – নিয়ম – PDF – বাংলা ব্যাকরণ

ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি ?

বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে ধ্বনিগুলোকে মূলত দুই ভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলি হল – স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনি

আবার স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয়ে থাকে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ।

স্বরধ্বনি কাকে বলে ?

বাংলা ভাষায় যে ধ্বনিগুলি বাকযন্ত্রের কোথাও কোনোরূপ বাধা না পেয়ে উচ্চারিত হয় সেগুলিকে বলে স্বরধ্বনিস্বরধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয়ে থাকে স্বরবর্ণ।

বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণের সংখ্যা মোট ১১টি । এগুলি হল – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ ।

বাংলায় ৯ -কারের ব্যবহার নেই ।

স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কি কি ?

উচ্চারণকালের ব্যাপ্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনিসমূহকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। এই দুটি হল –

  • হ্রস্বস্বর : অ, ই, উ, ঋ।
  • দীর্ঘস্বর : আ, ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ।

হ্রস্ব স্বরধ্বনি — যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে তাকে হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে । যেমন— অ, ই, উ, ঋ ।
দীর্ঘ স্বরধ্বনি — যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে সেগুলোকে দীর্ঘ স্বরধ্বনি বলে । যেমন— আ, ঈ, এ, ঐ, ও, I

গঠনগত দিক থেকে স্বরধ্বনিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় ।এগুলি হল

  • মৌলিক স্বরধ্বনি ও
  • যৌগিক স্বরধ্বনি ।

মৌলিক স্বরধ্বনি — যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাদেরকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে । এদের সংখ্যা ৭
টি। যথা – অ, আ, ই, উ,এ, ও,অ্যা ।

যৌগিক স্বরধ্বনি — যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে । যেমন— ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ) । এইজন্য যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধ্যক্ষর, যুগ্ম স্বর বা দ্বিস্বর বলা হয় ।

জিহ্বার অবস্থান অনুযায়ী আবার স্বরধ্বনিকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায় । এগুলি হল –

  • (১) সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি,
  • (২) পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি,
  • (৩) কুঞ্চিত স্বরধ্বনি,
  • (৪) সংবৃত স্বরধ্বনি,
  • (৫) বিবৃত স্বরধ্বনি

(১) সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি (Refracted vowel) : যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনে এগিয়ে
আসে তাকে সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে । যেমন— ই, এ।

(২) পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি : যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছনে পিছিয়ে যায় তাকে পশ্চাৎ ভাগস্থ
স্বরধ্বনি বলে । যেমন— উ, ও. অ ।

(৩) কুঞ্চিত স্বরধ্বনি (Rounded vowel): যে স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি গোলাকার কুঞ্চিত হয়
তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলা হয় । যেমন— অ, উ, ও ।

(৪) সংবৃত স্বরধ্বনি (Closed vowel): যে স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় সবচেয়ে কম প্রসারিত ও উন্মুক্ত
হয় তাদেরকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে । যেমন— ই, উ ।

(৫) বিবৃত স্বরধ্বনি (open vowel): যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখদ্বার পুরোপুরি প্রসারিত হয়,
স্বর ধ্বনিগুলিকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে । যেমন— আ ।

উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী আবার স্বরধ্বনিকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল –

  • (১) কণ্ঠধ্বনি : কণ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয় , উদারহণ – অ, আ ।
  • (২) তালব্য ধ্বনি : তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয়, উদাহরণ – ই, ঈ ।
  • (৩) ওষ্ঠ ধ্বনি : ওষ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয়, উদাহরণ – উ, ঊ ।
  • (৪) কণ্ঠ তালব্য ধ্বনি : কন্ঠ ও তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয়, উদাহরণ – এ, ঐ।
  • (৫) কণ্ঠ্যোষ্ঠ ধ্বনি : কন্ঠ ও ওষ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয়, উদাহরণ – ও, ঔ ।
  • (৬) মূর্ধন্য ধ্বনি : মূর্ধার সাহায্যে উচ্চারিত হয়, উদাহরণ – ঋ ।

ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে ?

যে সব ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে উচ্চারণ করা হয় তাদেরকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলা হয়ে থাকে। ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয়ে থাকে ব্যঞ্জনবর্ণ ।

বাংলাভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনি ২৯টি কিন্তু ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।

ব্যঞ্জনধ্বনি কত প্রকার ও কি কি ?

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ নিমনরূপ  : –

  • কণ্ঠ্য ধ্বনি – ক, খ, গ, ঘ, ঙ ( ক বর্গীয় বর্ণ)
  • তালব্য ধ্বনি – চ, ছ, জ, ঝ, ঞ ( চ বর্গীয় বর্ণ)
  • মূর্ধন্য ধ্বনি – ট, ঠ, ড, ঢ, ণ ( ট বর্গীয় বর্ণ)
  • দন্ত্য ধ্বনি – ত, থ, দ, ধ, ন ( ত বর্গীয় বর্ণ)
  • ওষ্ঠ্য ধ্বনি – প, ফ, ব, ভ, ম ( প বর্গীয় বর্ণ)
  • অন্তঃস্থ ধ্বনি – য, র, ল
  • উষ্ম ধ্বনি – শ, ষ, স, হ
  • তাড়নজাত ধ্বনি– ড়, ঢ়
  • পরাশ্রয়ী ধ্বনি – ং, ঃ, ঁ।

উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণকে আবার চারভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলি হল –

  • অঘোষ ধ্বনি : বর্গের ১ম ও ২য় বর্ণ ( ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ)।
  • ঘোষ ধ্বনি : বর্গের ৩য় ও ৪র্থ বর্ণ ( গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব, ভ)।
  • অল্পপ্রাণ ধ্বনি : বর্গের ১ম ও ৩য় বর্ণ ( ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব)।
  • মহাপ্রাণ ধ্বনি : বর্গের ২য় ও ৪র্থ বর্ণ ( খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ)।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button