বাংলা ব্যাকরণ

সারাংশ লেখার নিয়ম ও উদাহরণ – বাংলা ব্যাকরণ

সারাংশ লেখার নিয়ম ও উদাহরণ – বাংলা ব্যাকরণ

সারাংশ লেখার নিয়ম ও উদাহরণ : আজকে আমরা আলোচনা করবো সারাংশ বা সারমর্ম লিখন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যাবলী নিয়ে।

সারাংশ কাকে বলে ?

সারাংশ হল কোনো রচনার বক্তব্যের নির্যাসটুকুর সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ। সাধারণত কোনো প্রবন্ধে তথ্য, তত্ত্ব, তর্ক, যুক্তি, দৃষ্টান্ত – এসবের মধ্যে যে চিন্তা-ভাবনা বিস্তারিত হয়, তার মূল কথাটি সরলভাবে সহজ বাংলায় প্রকাশ করা হয়ে সারাংশের মাধ্যমে।

দেখে নাও : সমার্থক শব্দ বা একার্থক শব্দ – বাংলা ব্যাকরণ – Samarthak Shobdo – PDF

সাধারণত কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরণের সংক্ষিপ্তকরণকে বলা হয় সারমর্ম এবং গদ্যের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে সারাংশ।

কোনো গদ্য বা কবিতায় যেসব দৃষ্টান্ত, যুক্তি, উপমা, অলংকার থাকে তা বাদ দিয়ে সহজ সরল ভাষায় বিষয়টিকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে হল সারমর্ম বা সারাংশ।

সারমর্ম বা সারাংশ
সারমর্ম বা সারাংশ

দেখে নাও : ১০০০+ এক কথায় প্রকাশ – বাক্য সংকোচন – PDF – বাংলা ব্যাকরণ

সারাংশ লেখার নিয়মাবলী

সারাংশ বা সারমর্ম লেখার সময় খেয়াল রাখবে –

  1. উদ্ধৃত গদ্যাংশ বা কাব্যাংশ বারবার পড়ে মূল কথাটি কি, তা বুঝতে হবে।
  2. তাৎপর্যমূলক বাক্য ও শব্দগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। এর ফলে মূল ভাব বা বিষয় বুঝতে সুবিধে হবে।
  3. উদ্ধৃত গদ্যাংশ বা কাব্যাংশের লেখকের নাম জানা থাকলেও উল্লেখ করার সরকার নেই।
  4. উত্তম পুরুষ বা মধ্যম পুরুষসূচক বক্তব্য না লিখে সাধারণ ভাবে আলোচনা কাম্য।
  5. উক্তি-প্রত্যুক্তি থাকলে তার নির্যাসটুকু বিবৃতিমূলক রীতিতে নিজের ভাষায় লিখতে হবে।
  6. লেখার ভাষা হবে সহজ সরল।
  7. মূল অংশের কোনো অংশ হুবহু লেখা যাবে না।
  8. সারাংশের আয়তন মূল লেখাটির এক-তৃতীয়ংশ বা অর্ধেকের কম হওয়া কাম্য।
  9. একই কথা বার বার বলা যাবে না, তেমনি প্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া যাবে না।
  10. একটি অনুচ্ছেদে লিখতে হবে।
  11. মূল ভাবের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা যাবে না।
  12. শব্দ ও বাক্যপ্রয়োগ সংযত ভাবে করতে হবে। একাধিক বিশেষণ বাঞ্চনীয় নয়।
  13. সারাংশ বা সারমর্ম লেখা সম্পন্ন হলে কয়েকবার পরে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে প্রয়োজনীয় কোনো অংশ যেন বাদ না পরে।

সারংশ লিখন উদাহরণ ১ :

পৃথিবীতে যাহার দিকে তাকাও দেখিবে – সে নিজের অবস্থায় অসন্তুষ্ট। দরিদ্র কিসে ধনী হইবে সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন: ধনী চোর-ডাকাতের ভায় ত্রস্ত, রাজা শত্রুর ভয়ে ভীত। এককথায় পৃথিবীতে এমন কেহ নাই যে পূর্ণ সুখে সুখী! অথচ
কৌতুকের বিষয় এই – পৃথিবী ছাড়িয়া যাইতেও কেহ প্রস্তুত নাহ। মৃত্যুর নাম শুনিলেই দেখি মানুষের মন শুকাইয়া যায়। মানুষ যতই দরিদ্র হউক, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, যদি অনাহারে কাটাতেই হয়, পৃথিবীর কোনো আরামই যদি ভাগ্যে না থাকে তথাপি সে মৃত্যুকে চাহে না। সে যদি কঠিন পীড়ায় পীড়িত হয়, যদি শয্যা হইতে উঠিবার শক্তিও না থাকে, তথাপি সে মৃত্যুর প্রার্থী হইবে না। কে না জানে যে শত বৎসরের পরমায়ু থাকিলেও একদিন না একদিন মরিতে হইবে।

সারংশ : ধনী, দরিদ্র এমনকি দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত মানুষও অতৃপ্ত-অসুখী জীবন কাটায়। তথাপি কেউই জীবন ত্যাগ করতে চায় না। মৃত্যু অনিবার্য, জীবন দুঃখের তবু কেউ মৃত্যু চায় না-এ-এক কৌতুকের বিষয় ।

দেখে নাও : ৫৫০+ বিপরীতার্থক শব্দ তালিকা । বিপরীত শব্দ তালিকা – PDF

সারংশ লিখন উদাহরণ ২ :

যেটা পাঠ্য বই, তাতে ছবিটা থাকা চাই লেখাতেই, রংটা লাগানো চাই ক্ষুদ্র এবং খুব সম্ভব অনিচ্ছুক পাঠকের মনটিতেই। সেইসাঙ্গ দ্রষ্টব্য ছবি — থাকা ভালো নিশ্চয়ই, কিন্তু সেটা অতিরঞ্জিত হলে তাতে উদ্দেশ্যের পরাভব ঘাট। যদি বলি ‘লাল ফুল, কালো মেঘ’ সেটা তো নিজেই একটা ছবি হলো, মেঘলা দিনে মাঠের মধ্যে কোথাও একটি লাল ফুল ফুটে আছে এরকম একটা দৃশ্যেরও তাতে আভাস থাকে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে টকটকে লাল হুবহু একটি গোলাপ ফুল বসিয়ে দিলে তাতে চোখের সুখ কল্পনাকে বাধা দেয়। এখানে উদ্দেশ্য হলো— চোখ ভোলানো নয়, চোখ ফোটানো আর দেহের চোখ অত্যধিক আদর পেলে মনের চোখ কুঁড়ে হয়ে পড়ে, কল্পনা সবল হতে পারে না।

সারংশ : পাঠ্য বইয়ে আঁকা ছবি, ছবির ইঙ্গিতকে অতিক্রম করে নিজেই স্বপ্রতিষ্ঠ হলে লেখার প্রয়োজনীয়তায় বাধা পড়বে। অলংকরণ হিসেবে তার কাজ পাঠকের কল্পনাশক্তিকে উদ্দীপ্ত করে লেখার মধ্যে নিহিত ছবিটির ইশারাকে স্পষ্ট করে তোলা ।

দেখে নাও : ৫৫০+ পদ পরিবর্তন তালিকা । পদান্তর । Pod Poriborton – PDF Download

সারংশ লিখন উদাহরণ ৩ :

প্রবাহই জীবন। মানুষ যতক্ষণ বাঁচিয়া থাকে, ততক্ষণ একটা ধারা তাহার ভিতর দিয়া অনুক্ষণ বহিয়া যাইতে থাকে।
বাহিরের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় যাবতীয় বস্তুকে সে গ্রহণ করে, আবার ত্যাগও করে যাহাতে তাহার আবশ্যক নাই, যে বস্তু দূষিত, তাহাকে পরিবর্জন করাই প্রাণের ধর্ম। কিন্তু মরিলে আর যখন ত্যাগ করিবার ক্ষমতা থাকিবে না তখনই বাহির হইতে যাহা আসে তাহা কায়েম হইয়া বসিয়া যায় এবং মৃতদেহটাকে পচাইয়া তোলে। জীবন্ত সমাজ এ নিয়ম স্বভাবতই জানে। সে জানে, যে বস্তু তাহার কাজে লাগিতেছে না, মমতা করিয়া তাহাকে ঘরে রাখিলে মরিতেই হইবে।

সারংশ : জীবনের ধর্ম গ্রহণের মধ্য দিয়ে দূষিত, অনাবশ্যক বস্তুগুলি বর্জন করা। বহনক্ষমতার অভাবে মৃত্যুর পর দেহে পচন ঘটে তেমনি সমাজকেও জীবন্ত থাকতে গেল, অপ্রয়োজনীয় লোকাচার, সংস্কার, নিয়মবিধি, যা জীর্ণ, অব্যবহার্য—তা নির্মমভাবে পরিত্যাগ করতে হবে।

দেখে নাও : Bengali Bagdhara PDF Download । বাংলা বাগধারা – PDF

সারংশ লিখন উদাহরণ ৪ :

একথা মানতেই হইবে, আমাদের দেশে ধর্ম লইয়া হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটা কঠিন বিরুদ্ধতা আছে। যেখানে সত্যভ্রষ্টতা সেইখানেই অপরাধ, যেখানে অপরাধ সেইখানেই শাস্তি। ধর্ম যদি অন্তরের জিনিস না হইয়া শাস্ত্রমত ও বহু আচারকেই মুখ্য করিয়া তোলে তার সেই ধর্ম যত বাড়া অশান্তির কারণ হয় এমন আর কিছুই না। এই ‘ডগমা’ অর্থাৎ শাস্ত্রমতাক বাহির হইতে পালন করা লইয়া ইউরোপের ইতিহাস কতবার রাষ্ট্র লাল হইয়াছে। অহিংসাকে
যদি ধর্ম বালা, তার সেটাকে কর্মাক্ষাত দুঃসাধ্য বলিয়া ব্যবহারে না মানিতে পারি, কিন্তু বিশুদ্ধ আইডিয়ালের ক্ষেত্রে তাহাকে স্বীকার করিয়া ক্রমে সেদিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নহে। কিন্তু বিশেষ শাস্ত্রমতের অনুশাসনে বিশেষ করিয়া যদি অন্যধর্মমতের মানুষকেও মানাইতে চেষ্টা করা হয়, তবে মানুষের সাঙ্গ মানুষের বিরোধ কোলোকালেই মিটিতে পারে না। নিজ ধর্মের নামে পশুহত্যা করিব অথচ অন্য ধর্মের পক্ষে পশুহত্যা করিলেই নরহত্যার আয়োজন করিতে থাকিব, ইহাকে অত্যাচার ছাড়া আর কোনো নাম দেওয়া যায় না।

সারংশ : বাহ্যিক আচারসর্বস্ব ধর্মের গোঁড়ামির ওপরেও অভিমান তার নিজের অনুশাসন চাপাতে চায়। ধর্মের এই সংকীর্ণতায় ইউরোপে যেমন বারবার রক্ত ঝরেছে; এখানে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যেও বিরোধ তৈরি হয়েছে। অহিংসাকে প্রাত্যহিক জীবনে কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা কঠিন কিন্তু অন্তরের আদর্শ হিসেবে তাকে পালন করা যায়। তেমনি ধর্মও অন্তরের জিনিস, সেখানেই তার সত্যতা।

সারংশ লিখন উদাহরণ ৫ :

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই— ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূণ্য নদীর তীরে,
রহিনু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।


সারমর্ম : মহাকালের প্রতীক সোনার তরীতে কেবল সোনার ফসলরূপ মহৎ-সৃষ্টিকর্মেরই ঠাঁই হয়। কিন্তু ব্যক্তিসত্তাকে অনিবার্যভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর করাল গ্রাসের শিকার ।

সারংশ লিখন উদাহরণ ৬ :

দৈন্য যদি আসে, আসুক, লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্র রূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস,
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস।

সারমর্ম : জীবনে দারিদ্র্যের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, বরং কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার মধ্যেই লজ্জা। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে দুঃখ-দারিদ্রকে সাহস ও মনোবল দিয়ে প্রতিহত করতে পারলে জীবনে সফল হওয়া যায় ।


Download Section

  • File Name: সারাংশ লেখার নিয়ম ও উদাহরণ – বাংলা ব্যাকরণ – বাংলা কুইজ
  • File Size : 2.5 MB
  • Format : PDF
  • No. of Pages : 06
  • Language: Bengali

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button