ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়মাবলী
আজ ১৫ই আগস্ট । ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ছোট-বড় সবাই আজকের এই দিনে মেতে ওঠে খুশির সাজে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সেজে ওঠে নতুন সাজে, বাড়ি গাড়ি সব জায়গা ভরে ওঠে ভারতের জাতীয় পতাকায়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে আমাদের সব থেকে সম্মানের জাতীয় পতাকাটিকে আমরা অসম্মান করে ফেলি। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের একাধিক নিয়ম রয়েছে। যেগুলো আমরা না জানার কারনে অনেকেই মেনে চলি না। সম্প্রতি ভারত সরকার সেই পতাকার নিয়মাবলী (Flag Code ) কিছু পরিবর্তনও করেছেন। যেগুলো আমাদের মধ্যে এখনো অনেকেই জানেন না। আজ দেখে নেওয়া যাক ভারতের জাতীয় পতাকা তোলা ও নামাবার সময় আমাদের কি কি জিনিস একটু লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পতাকার কোনো অসম্মান না হয়। দেখে নিয় – ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়মাবলী ।
Also Check : স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছাবার্তা ও ছবি
Also Check : ভারতের স্বাধীনতা দিবস স্পেশাল ক্যুইজ সেট ২০২২
Also Check : প্রজাতন্ত্র দিবস ক্যুইজ – প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে কতটা জানেন ?
ভারতের জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত কিছু তথ্য
- ভারতের বর্তমান জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছিলেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া।
- পতাকা উৎপাদনের জন্য একমাত্র খাদী নামের হস্তচালিত তাঁতবস্ত্র ব্যবহার করা যায়। তুলা, রেশম ও ঊল বাদ দিয়ে অন্য কোনো খাদীর কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা যায় না।
- ভারতের জাতীয় পতাকাটি আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩:২।
- জাতীয় পতাকার তিনটি প্রধান রং। তাই ভারতের জাতীয় পতাকাকে ত্রিরঙ্গাও বলা হয়ে থাকে।
- পতাকার সবার ওপরে থাকে গেরুয়া রং, মাঝে সাদা ও নিচে সবুজ । সাদা রঙের মাঝে থাকে নীল রঙের অশোকচক্র।
জাতীয় পতাকার বিভিন্ন রঙের গুরুত্ব
ভারতের জাতীয় পতাকার বিভিন্ন রঙের গুরুত্ব নিচে দেওয়া রইলো –
- গেরুয়া – শৌর্য, সেবা ও ত্যাগের প্রতীক।
- সাদা – শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক।
- গাঢ় সবুজ – কর্মশক্তি, নির্ভীকতা জীবনধর্মের প্রতীক।
- নীল অশোকচক্র – দেশের উন্নতি ও প্রগতির প্রতীক।
জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়মাবলী
ভারতীয় জাতীয় পতাকা ভারতের সমস্ত জনগণের আশা ও আখাঙ্কার প্রতীক। বহু ভারতবাসী এই পতাকার সম্মান রক্ষা করার জন্য শহীদ হয়েছেন। তাই আমাদের সব সময় খেয়াল রাখা উচিত কোনোভাবেই যেন এই পতাকার অসম্মান না হয়। একজন ভারতবাসী হিসেবে জাতীয় পতাকার সম্মান রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সঠিক প্রদর্শন (Correct Display )
- যেখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হোক না কেন খেয়াল রাখতে হবে যে সেটিকে সম্মানের সাথে স্বতন্ত্র ভাবে উত্তোলন করা হয়েছে।
- পতাকা জনসাধারণের বাড়ির ওপরে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। তবে বিশেষ দিনে (যেমন স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস ) রাত্রিতেও পতাকা বাড়ির ওপরে রাখা যেতে পারে ।
- পতাকা উত্তোলনের সময় ধীরে ধীরে উত্তোলন করতে হয় এবং নামাবার সময় তাড়াতাড়ি নামাতে হয়।
- যখন কোনো অনুভূমি দণ্ডতে পতাকা উত্তোলন করা হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে যেন গেরুয়া রংটি দূর প্রান্তে থাকে।
- যখন উলম্ব দন্ডে পতাকা উত্তোলন করা হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে গেরুয়া রংটি যেন ওপরের দিকে থাকে।
- যখন কোনো বক্তার সামনের প্লাটফর্মে পতাকা রাখা হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন বক্তার ডান পাশে থাকে।
- যখন কোনো গাড়ির বনেটে পতাকা রাখা হয় তখন খেলা রাখতে হবে যে পতাকাটি যেন দৃঢ় ভাবে বনেটের মাঝে বা ডান দিকে থাকে।
- যখন একটি মিছিল বা কুচকাওয়াজে পতাকা বহন করা হয় তখন পতাকাটি হয় তার ডানদিকে বা লাইনের সামনে মাঝের দিকে রাখতে হবে।
ভুল প্রদর্শন (Incorrect Display )
- ছেঁড়া বা বিকৃত পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
- কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অভিবাদন জানিয়ে পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
- অন্য কোনো পতাকা জাতীয় পতাকার থেকে উঁচুতে যেন না থাকে।
- জাতীয় পতাকার ডান্ডা তে পতাকার ওপরের লেভেলে কোনো বস্তু এমনকি ফুল বা ফুলের মালাও রাখা যাবে না ।
- পতাকা উত্তোলনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে গেরুয়া যেন ওপরে থাকে।
- পতাকা এমন ভাবে প্রদর্শন করা যাবে না যাতে পতাকার কোনো ক্ষতি হয়।
জাতীয় পতাকার অপব্যবহার (Misuse )
- জাতীয় পতাকা কোনো ভাবেই পর্দা বা কোনো কিছু ঢাকার বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তবে স্টেট/মিলিটারি/সেন্ট্রাল প্যারা মিলিটারিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে ।
- জাতীয় পতাকা দিয়ে কোনো যানবাহনের হুড, ওপর অংশ বা পেছনের অংশ ঢাকা যাবে না।
- পতাকা এমন ভাবে রাখা বা ব্যবহার করা যাবে না যাতে এটি নোংরা বা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
- পতাকা কোনো ভাবে ছিঁড়ে গেলে সেটিকে যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। পতাকাটিকে কোনো প্রাইভেট জায়গায় নিয়ে গিয়ে সম্মানের সাথে সেটিকে ডিস্পোস করতে হবে।
- কোনো বিল্ডিং ঢাকতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না।
- পতাকা ইউনিফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়াও পতাকা কোনো বাক্স, রুমাল, বালিশের কভার, ন্যাপকিন এগুলোতে প্রিন্ট করা যাবে না ।
- জাতীয় পতাকাটা কোনো ধরণের লেখালিখি করা যাবে না।
- জাতীয় পতাকা কোনো ধরণের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি জাতীয় পতাকা যে দন্ডে উত্তোলন করা হয় সেই দন্ডে যেন কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন না থাকে।
- জাতীয় পতাকা কোনো কিছু বহন করতে বা ধরার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। যদিও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে উত্তোলনের সময় পতাকার মধ্যে ফুল ভরে সেটিকে উত্তোলন করা যেতে পারে।
অর্ধ-নির্মিত পতাকা
নিম্নলিখিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঘটনায়, নির্দেশিত স্থানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
মৃত্যু | যেখানে অর্ধনমিত রাখা |
---|---|
রাষ্ট্রপতি উপ-রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী | সারা ভারত জুড়ে |
লোকসভার স্পিকার ভারতের মুখ্য বিচারপতি | দিল্লী |
কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী | দিল্লি এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীগুলিতে |
রাজ্যপাল লেফটেনেন্ট গভর্নর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ক্যাবিনেট মিনিস্টার | সমগ্র রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে । |
ভারতের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিভিন্ন নিয়মাবলী আমরা সংক্ষেপে পোস্ট করার চেষ্টা করেছি। আপনাদের কেমন লাগলো সেটি অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন ।
বিস্তারিত জানতে দেখে নিন –
To check our latest Posts - Click Here