শিরা ও ধমনী কাকে বলে ? বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য
Difference between Aorta and Vena Cava
শিরা ও ধমনী কাকে বলে ? বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো শিরা ও ধমনী কাকে বলে ? শিরা ও ধমনীর বৈশিষ্ট্য ও শিরা ও ধমনীর পার্থক্য নিয়ে ।
দেখে নাও : গুরু মস্তিষ্ক ও লঘু মস্তিষ্কের পার্থক্য – PDF Download
শিরা কাকে বলে ?
যে রক্তবাহ সমস্ত দেহ থেকে রক্ত হৃদপিন্ডে নিয়ে আসে তাকে শিরা বলা হয়।
শিরার বৈশিষ্ট্য :
- জালক থেকে রক্ত অনুসিরা ও উপশিরায় পৌঁছয় এবং পরে শিরার মাধ্যমে হৃদপিন্ডে ফিরে আসে।
- শিরার প্রাচীর ধমনীর প্রাচীরের তুলনায় পাতলা হয়ে থাকে।
- শিরায় শ্বেত যোগকলা বেশি পরিমানে থাকে।
- শিরার প্রস্থচ্ছেদে টিউনিকা মিডিয়া স্তরটি পাতলা হয়।
- শিরার মধ্যে রক্তচাপ তুলনামূলক কম থাকার জন্য শিরার নালিকা পথে কপাটিকা থাকে।
- শিরার রক্ত নীল বর্ণের হয়।
দেখে নাও : হৃৎপিণ্ডের গঠন ও কার্যপ্রণালী । Heart : Anatomy and Function
শিরার প্রকারভেদ
শিরা মূলত চার ধরণের হয় –
১. সূক্ষ্ম শিরা : এর প্রাচীরে অন্তরাবরণী ও বাইরে কোলাজেন তন্তু থাকে। এদের ব্যাস ২০-৪০ মাইক্রো মিটার হয়।
২. মাঝারি শিলা : প্রাচীরের স্থিতিস্থাপক তন্তু পুরু হয়। এদের ব্যাস ২-৪ মিলি মিটার হয়।
৩. বড় শিরা : এতে পেশিস্তর থাকে। ব্যাস ০.৫ সেমি ।
৪. মহাশিরা : এতেও পেশিস্তর থাকে। ব্যাস ৩ সেমি ।
এছাড়াও অন্যান্য দুই ধরণের শিরা দেখতে পাওয়া যায় এগুলি হল –
৫. ধমনী-শিরা মিশ্রণ : কৈশজালকের আগে ধমনিকা সরাসরি সূক্ষ্ম শিরার সাথে যুক্ত হলে তাকে ধমনী-শিরা মিশ্রণ বলে। নখে, কানের লতিতে, পায়ের আঙুলে দেখতে পাওয়া যায়।
৬. ভেরিকোজ শিরা : এই শিরাগুলি ফুলে যায় এবং আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত পায়ের শিরা, মলদ্বারের শিরা, অগ্ন্যাশয়ের শিরার এটা দেখা যায়।
দেখে নাও : ফুসফুসের গঠন ও কাজ – Anatomy and Function of Lungs
ধমনী কাকে বলে ?
যে রক্তনালী হৃদপিন্ড থেকে রক্ত সমস্ত দেহে নিয়ে যায় তাকে ধমনী বলে।
হৃদপিণ্ডের কাছে ধমনী বেশ মোটা হয়, একে মহাধমনী (Aorta ) বলা হয়। মহাধমনীর শাখা-প্রশাখা গুলিকে ধমনী (Artery ) বলা হয়।
সূক্ষ্ম ধমনীকে উপধমনী বলা হয়। সূক্ষ্ম ধমনী আরও শাখা-প্রশাখাযুক্ত হয়ে জালকের সৃষ্টি করে। একে কৈশিকনালী বা রক্তজালক (Capillary ) বলা হয়।
ধমনীর বৈশিষ্ট্য :
- ধমনী স্থূল ও স্থিতিস্থাপক প্রাচীরযুক্ত মোটা নল।
- এর মধ্যে কোনো কপাটিকা থাকে না।
- কপাটিকা না থাকায় হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচনে উচ্চ চাপযুক্ত রক্ত দ্রুতবেগে ধমনীর মধ্যে প্রবাহিত হয়।
- ধমনী শরীরের ভারত দিয়ে বিস্তৃত থাকে।
- ধমনীর প্রাচীর তিনটি স্তর যুক্ত হয়।
ধমনীর প্রকারভেদ :
সাধারণত ধমনী যে অঙ্গে রক্ত সরবরাহ করে, সেই অঙ্গের নাম অনুযায়ী ধমনীর নামকরণ হয়ে থাকে।
যেমন –
- পালমোনারি আর্টারি – ফুসফুসে,
- হেপাটিক আর্টারি – যকৃতে,
- রেনাল আর্টারি – বৃক্কে ।
অঙ্গে রক্ত সরবরাহের ভিত্তিতে ধমনীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় –
বহিঃঅঙ্গ ধমনী : যে সব ধমনী নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রবেশ করে না, তাদের বহিঃঅঙ্গ ধমনী বলে। উদাহরণ – পৃষ্ঠীয় ধমনী।
অন্তঃঅঙ্গ ধমনী : বহিঃঅঙ্গ ধমনীর যে শাখা কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রবেশ করে রক্ত সরবরাহ করে, তাকে অন্তঃঅঙ্গ ধমনী বলে। উদাহরণ – প্লীহা ধমনী।
দেখে নাও : উদ্ভিদের ট্রপিক চলন, ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন এর মধ্যে পার্থক্য
ধমনী ও শিরার মধ্যে পার্থক্য
মনী ও শিরার মধ্যে প্রধান পার্থক্য সমূহ নিচে দেওয়া রইলো।
বৈশিষ্ট্য | ধমনী | শিরা |
---|---|---|
অবস্থান | হৃদপিন্ড ও রক্তজালক পর্যন্ত বিস্তৃত | রক্তজালক ও হৃদপিন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত |
উৎপত্তি | হৃদপিন্ড | রক্তজালক |
প্রাচীর | পুরু, পেশীবহুল ও স্থিতিস্থাপক | পাতলা, অল্প পেশীযুক্ত ও স্থিতিস্থাপক নয় |
গহ্বর | ধমনীর নালীর গহ্বর ছোট | ধমনীর নালীর গহ্বর তুলনামূলক বড় |
চুপসান | ধমনী খালি অবস্থায় চুপসে যায় না | শিরা খালি অবস্থায় চুপসে যায় |
কপাটিকা | ধমনীতে কোনো কপাটিকা থাকে না | শিরাতে কপাটিকা থাকে |
রক্তের বিস্তার | ধমনী হৃদপিন্ড থেকে রক্ত বিভিন্ন অঙ্গে চালিত করে | শিরা বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্ত হৃদপিন্ডে চালিত করে |
রক্তের বর্ণ | ধমনীর রক্ত লাল হয় | শিরার রক্ত নীল বর্ণের হয় |
রক্তের প্রকৃতি | ধমনী সাধারণত অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বহন করে | শিরা সাধারণত দূষিত রক্ত বহন করে |
রক্তের চাপ | ধমনীতে রক্ত উচ্চচাপযুক্ত হয় | শিরাতে রক্ত নিম্নচাপযুক্ত হয় |
রক্তের গতি | ধমনীতে রক্তপ্রবাহ দ্রুতগতিতে হয় | শিরাতে রক্তপ্রবাহ ধীরগতিতে হয় |
বিস্তৃতি | ধমনী দেহের গভীর অংশে থাকে | শিরা দেহের উপর অংশে বিস্তৃত থাকে |
To check our latest Posts - Click Here