NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

উদ্ভিদের ট্রপিক চলন, ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন এর মধ্যে পার্থক্য

Difference between Tactic, Tropic and Nastic movement

উদ্ভিদের ট্রপিক চলন, ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন এর মধ্যে পার্থক্য

বন্ধুরা আজ আমরা জেনে নেবো উদ্ভিদের চলন সম্পর্কে, অর্থাৎ ট্যাকটিক, ট্রপিক ও ন্যাস্টিক চলনের সম্পর্কে কিছু তথ্য ও তাদের মধ্যে পার্থক্য। উদ্ভিদের ট্রপিক চলন, ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন এর মধ্যে পার্থক্য – Difference between Tactic, Tropic and Nastic movement ।

আরও দেখে নাও : সালোকসংশ্লেষ সম্পর্কিত কিছু তথ্য । Photosynthesis

উদ্ভিদের চলন :

  • যে পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো জীব নিজের স্থান পরিবর্তন না করে অর্থাৎ নির্দিষ্ট স্থানে স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বা উদ্দীপকের সাহায্যে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে, তাকে চলন বলে। 
  • উদ্ভিদ নিজের জায়গা থেকে নড়াচড়া করতে পারেনা অর্থাৎ গমনে অক্ষম কিন্তু বিভিন্ন উদ্দীপকের সাহায্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন করতে পারে। 

আরও দেখে নাও : প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বাসযন্ত্র তালিকা – List of Respiratory Organs

উদ্ভিদের চলন কয় প্রকার ও কি কি?

উদ্ভিদের চলনগুলিকে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – 

  • ট্রপিক চলন 
  • ট্যাকটিক চলন 
  • ন্যাস্টিক চলন 

আরও দেখে নাও : উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস- Classification of Plant Kingdom

ট্রপিক চলন :

যেক্ষেত্রে উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথের দিকে উদ্ভিদে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চলন দেখা যায় তাকে ট্রপিক চলন বলে। 

উদাহরণ : সূর্যের আলোর দিকে উদ্ভিদের বেঁকে যাওয়া, জলপ্রবাহের দিকে মূলের বৃদ্ধি ইত্যাদি। 

ট্রপিক চলনকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা – হাইড্রোট্রপিক (যেখানে উদ্দীপক জল), ফটোট্রপিক (উদ্দীপক আলো) ও জিওট্রপিক (উদ্দীপপক মার্ধ্যাকর্ষণ)। 

আরও দেখে নাও : উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের পার্থক্য

ট্যাকটিক চলন : 

বিভিন্ন বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ-অঙ্গের স্থান পরিবর্তনের ঘটনাকে ট্যাকটিক বা আবিষ্ট চলন বলে। 

উদাহরণ : ক্লামাইডোমোনাস ভলভক্সের মতো কিছু শৈবালের এই ধরণের চলন দেখা যায়। 

এই ক্ষেত্রে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদঙ্গের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হতে দেখা যায় উদ্দীপকের প্রভাবে। 

ট্যাকটিক চলনকে আবার ৪ ভাগে ভাগ করা যায় যথা, – ফটোট্যাকটিক, থের্মোট্যাকটিক (উদ্দীপক তাপ), কেমোট্যাকটিক (উদ্দীপক রাসায়নিক পদার্থ) ও হাইড্রোট্যাকটিক। 

ন্যাস্টিক চলন :

যে উদ্ভিদ-চলন উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্ৰত হয় তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে। 

উদাহরণ : 

  • লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলেই নুইয়ে পরে (উদ্দীপক – স্পর্শ, এক্ষেত্রে স্পর্শের তীব্রতার দ্বারা চলন নিয়ন্ত্রিত হয়)। 
  • টিউলিপ ফুলের পাঁপড়ি কম উষ্ণতায় মুদে যায় ও বেশি উষ্ণতায় ফুটে ওঠে (উদ্দীপক – তাপ, এক্ষেত্রে তাপের তীব্রতা দ্বারা চলন নিয়ন্ত্রিত হয়)। 

ন্যাস্টিক চলন আবার ৪ প্রকারের হয়, যথা – কেমোন্যাস্টিক, থার্মোন্যাস্টিক, সিসমোন্যাস্টিক (উদ্দীপক – স্পর্শ), ফটোন্যাস্টিক। 

ট্রপিক, ট্যাকটিক ও ন্যাস্টিক চলনের পার্থক্য (তুলনামূলক আলোচনা) :

বিষয় : স্থান পরিবর্তন 

  • ট্রপিক চলন : ট্রপিক চলনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের কোনো স্থান পরিবর্তন হয়না। 
  • ট্যাকটিক চলন : ট্যাক্টিক চলনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের স্থান পরিবর্তন হয়। 
  • ন্যাস্টিক চলন : ন্যাস্টিক চলনের ক্ষেত্রেও উদ্ভিদের স্থান পরিবর্তনের কোনো ঘটনা পরিলক্ষিত হয়না। 

বিষয় : উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া

  • ট্রপিক চলন : এই চলন উদ্দীপকের উৎস বা গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। 
  • ট্যাকটিক চলন : এই চলন উদ্দীপকের উৎস, গতিপথ ও তীব্রতা উভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। 
  • ন্যাস্টিক চলন : এক্ষেত্রে উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রিত হয় উদ্দীপকের তীব্রতার দ্বারা। 

বিষয় : প্রকারভেদ 

  • ট্রপিক চলন : ট্রপিক চলনকে সাধারণত ফটোট্রপিক, হাইড্রোট্রপিক জিওট্রপিক ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়। 
  • ট্যাকটিক চলন : ট্যাকটিক চলনকে তেমন মূলত ফটোট্যাকটিক, থের্মোট্যাকটিক, কেমোট্যাকটিক হাইড্রোট্যাক্টিক এই ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। 
  • ন্যাস্টিক চলন : ন্যাস্টিক চলনকে ভাগ করা যায় কেমোন্যাস্টিক, থার্মোন্যাস্টিক, সিসমোন্যাস্টিক ফটোন্যাস্টিক এই ৪ ভাগে। 

বিষয় : হরমোনের প্রভাব 

  • ট্রপিক চলন : এই চলনের ক্ষেত্রে হরমোনের গুরুত্ব আছে, যেমন – অক্সিন হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদ সূর্যালোকের দিকে বেঁকে যায়। 
  • ট্যাকটিক চলন : এই চলন হরমোনের দ্বারা প্রভাবিত হয়না। 
  • ন্যাস্টিক চলন : এই চলনও ট্রপিক চলনের মতো হরমোনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। 

বিষয় : চলনের প্রকৃতি  

  • ট্রপিক চলন : ট্রপিক চলন একধরণের বক্র চলন। 
  • ট্যাকটিক চলন : ট্যাকটিক চলন একধরণের সামগ্রিক চলন। 
  • ন্যাস্টিক চলন : এই চলনও একধরণের বক্র চলন। 

বিষয় : চলনের গতি 

  • ট্রপিক চলন : ট্রপিক চলনের গতি খুব কম। 
  • ট্যাকটিক চলন : ট্যাকটিক চলনের গতি তুলনামূলক ভাবে বেশি। 
  • ন্যাস্টিক চলন : ন্যাস্টিক চলনের গতিও ট্রপিক চলনের তুলনায় অনেক বেশি। 

বিষয় : উদাহরণ 

  • ট্রপিক চলন : সূর্যালোকের দিকে উদ্ভিদের হেলে যাওয়া, মার্ধ্যাকর্ষণের বিপরীতে উদ্ভিদ-কাণ্ডের বৃদ্ধি। 
  • ট্যাকটিক চলন : আলোর দিকে শৈবালের চলন, অধিক তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার দিকে শৈবালের চলন। 
  • ন্যাস্টিক চলন : পতঙ্গের সংস্পর্শে আসা মাত্রই সূর্যশিশির উদ্ভিদের পাতার কর্ষিকা বেঁকে গিয়ে পতঙ্গকে আবদ্ধ করে, স্পর্শের ফলে লজ্জাবতী গাছ নুইয়ে পরে। 

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button