History NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

কোল বিদ্রোহ টীকা – কারণ প্রসার ফলাফল গুরুত্ব -Kol movements

কোল বিদ্রোহ কী এবং এই কোল বিদ্রোহের কারণ, ফলাফল এবং গুরুত্ব কী?

কোল বিদ্রোহ টীকা – কারণ প্রসার ফলাফল গুরুত্ব -Kol movements

বন্ধুরা আজ আবার চলে এসেছি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের  নোটস নিয়ে। কোল বিদ্রোহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চলো জেনে নিই এর সম্পর্কে কিছু তথ্য।  কোল বিদ্রোহ টীকা – কারণ প্রসার ফলাফল গুরুত্ব -Kol movements

পটভূমি :

ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ঘটে যাওয়া বিদ্রোহগুলির মধ্যে কোল বিদ্রোহ অন্যতম। ছোটনাগপুর, রাঁচি, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলের বসবাসকারী এক আদিবাসী সম্প্রদায় হল কোল। স্বাধীনজীবী, অরণ্যচারী এই কোলদের ব্রিটিশরা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলে কোলরা একত্রিত হয়ে যে বিদ্রোহ শুরু করে তাই হল কোল বিদ্রোহ।

ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৮০ – ১৮০০ ) – Fakir-Sannyasi Resistance

বিদ্রোহের সময়কাল :

  • দুটি পর্যায়ে এই বিদ্রোহ হয়। 
  • প্রথমত ১৮২০-২১ সালের দিকে এই বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়। 
  • এর পর আবার ১৮৩১-৩২ সালের দিকে কোল বিদ্রোহ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। 

তেভাগা আন্দোলন টিকা – Tebhaga Movement

কোল বিদ্রোহের কারণ :

রাজস্ব বা কর ব্যবস্থা প্রচলন : 

  • ছোটনাগপুর সংলগ্ন জঙ্গল এলাকা দখলের পর ব্রিটিশ সরকার সেই অঞ্চলে নিজেদের রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে ও স্বাধীনজীবী কোল আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর প্রচুর পরিমাণে কর আরোপ করে। ফলে কোল সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয় ও বিদ্রোহে লিপ্ত হয়। 

ইজারাদার অতিরিক্ত শোষণ :

  • ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছোটনাগপুর অঞ্চলটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সেই অঞ্চলগুলিতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। 
  • বহিরাগত অত্যাচারী মহাজন বা দিকুরা ওই সমস্ত অঞ্চলের ইজারা গ্রহণ করতো। 
  • এই সমস্ত ইজারাদাররা নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য অতিরিক্তহারে রাজস্ব আদায় করা সরু করে কোল দের কাছ থেকে, ফলে কোলরা ক্ষুব্ধ হয়।

মহাজনদের চড়া হরে সুদ আদায় :

  • ব্রিটিশদের আগমণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বহু মহাজনের আবির্ভাব ঘটে এসমস্ত আদিবাসীপ্রবণ এলাকায়। 
  • গরীব আদিবাসীরা অর্থের অভাবে পেটের দায়ে বা কখনো নেশার জন্য মহাজনদের কাছ থেকে চড়া হারে ঋণ নিতো। 
  • সেই ঋণ শোধ করতে না পারলে মহাজনরা খুব অত্যাচার করতো জমি, জায়গা কেড়ে নিতো, বাড়ির গরু-ছাগল কেড়ে নিতো। বাড়ির মেয়েদের সম্মানহানি করতো। 
  • এমন অনেক ক্ষেত্রে মহাজনদের প্ররোচনার জন্য ঋণ শোধ করার সত্ত্বেও ঋণের বোঝাই ডুবে থাকতো অনেকে। 
  • এসমস্ত পরিস্থিতিতে কোলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। 

জাতিগত ঐতিহ্যে আঘাত :

  • কোলরা নিজেদের মতো করে নিজেদের ধর্মীয় পন্থা মেনে বসবাস করতো। 
  • ব্রিটিশরা তাদের চিরাচরিত জীবনযাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বিভিন্ন কর আরোপ ও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। যা তারা মেনে নেয়নি। 

আফিম চাষে বাধ্য করা :

  • চিনে আফিমের খুব চাহিদা ছিল, ব্রিটিশ সরকার ভারতে কোলদের দিয়ে আফিম চাষ করানো শুরু করে। 
  • আফিম চাষের ফলে সাধারণ খাদ্য শস্যের উৎপাদন কমে যায় ও কোলরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 
  • এই অবস্থায় কোলরা আফিম চাষ করতে না চাইলেও ব্রিটিশরা তাদের আফিং চাষে বাধ্য করে,  যার ফলে কোলদের ঐতিহ্যে আঘাত লাগে ও তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। 

নগদে খাজনা আদায় :

  • ছোটনাগপুর অঞ্চলে ব্রিটিশ সরকার নগদে খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা চালু করে। 
  • নগদে খাজনা প্রদান করা কোলদের সামর্থের বাইরে ছিল এবং তাদের রীতির বিরোধী ছিল।
  •  এর ওপর নগদে খাজনা আদায়ের নামে অনেক শোষণও চালাতে থাকে ইজারাদাররা। 

কোল বিদ্রোহের নেতা :

  • কোল বিদ্রোহের প্রধান প্রধান নেতারা হলেন – সুই মুন্ডা, বুধু ভগৎ, জয়া ভগৎ, ঝিন্দ্রাই মানকি প্রমুখেরা। 

বিদ্রোহের প্রসার :

  • কোল বিদ্রোহ মূল আকার ধারণ করে ১৮৩১-৩২ এর মধ্যে। 
  • রাঁচি, মানভূম, সিংভূম, পালামৌ, হাজিরাবাগ সহ বহু অঞ্চলে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পরে। 
  • বিদ্রোহে কেবল কোলরাই নয়, কোলদের পাশাপাশি মুন্ডা, সাঁওতাল, কৃষক, কুমোর, তাঁতিরাও যোগদান করে এবং বিদ্রোহকে বিশাল আকার প্রদান করে। 
  • কোলরা সমম্মিলিত ভাবে বহিরাগত দিকুদের গ্রাম ত্যাগ করে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। 
  • বহু মহাজন ও দিকুদের জ্যান্ত বলি দেয় ক্ষুব্ধ কোলরা। ব্রিটিশ কর্মচারী, পুলিশ, ইজারাদার, অত্যাচারী জমিদার, মহাজন কেউই কোলদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। 

বিদ্রোহ দমন :

  • কোল বিদ্রোহের আকার এতটাই ভয়ংকর হয়ে ওঠে যে তাদের ধীরে ধীরে অনেক ব্রিটিশ কর্মচারী ও পুলিশদের হত্যা করতে থাকে। 
  • প্রায় কয়েক হাজার জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ কর্মচারী নিহত হয় এবং পরিস্থিতি ক্রমে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে। 
  • এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ প্রশাসন বিদ্রোহ দমনে তৎপর হয়ে ওঠে। 
  • অবশেষে ১৮৩৩ সালের দিকে ক্যাপ্টেন উইলকিন্সের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনারা নিষ্ঠুর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করে। 

কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফল :

  • পরবর্তীকালে কোলদের জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী কোল অধ্যুষিত এলাকায় ভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। এই উদ্দেশ্যে দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সী গঠন করা হয়। 
  • জমিদার, মহাজন, দিকুদের দ্বারা বলপূর্বক কেড়ে নেওয়া জমিগুলি আবার ফেরত দেওয়া হয় কোলদের। 
  • কোল অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে বহিরাগত মহাজন বা দিকুদের বিতাড়িত করা হয় এবং কোলদের জমি রক্ষার প্রতিশ্রুতি করা হয়। 
  • কোলদের নিজেদের আইন প্রণয়নের সুযোগ দেওয়া হয়। 
  • সর্বশেষ, এই বিদ্রোহ পরবর্তী উপজাতি বিদ্রোহগুলিকে অনুপ্রাণিত করে ছিল। 

মূল্যায়ন :

কোল বিদ্রোহকে কঠোর ভাবে দমন করা হয়। কোল বিদ্রোহের এই ব্যর্থতা সত্ত্বেও এই বিদ্রোহ দেখিয়েছে যে নিম্নবর্গের মানুষরাও নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য বিদ্রোহে নামতে পারে। এক কথায়। পরবর্তী উপজাতি বিদ্রোহ গুলির চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করেছে কোল বিদ্রোহ। 

Download Section

  • File Name : কোল বিদ্রোহ টীকা – কারণ প্রসার ফলাফল গুরুত্ব -Kol movements
  • File Size : 1.8 MB
  • No. of Pages : 04
  • Format : PDF
  • Subject : History
  • Language : Bengali

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button