কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় জীবনী – প্রতিবেদন রচনা
প্রিয় বন্ধুরা, আজ আমরা জেনে নেবো ভারতের প্রথম দুই মহিলা ডাক্তারের মধ্যে একজন কাদম্বিনী গাঙ্গুলির ছোট্ট জীবনী (কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় জীবনী – প্রতিবেদন রচনা – Kadambini Ganguly) । ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দুই মহিলা চিকিৎসকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি, অন্য আর একজন ছিলেন আনন্দীবাঈ জোশী। আনন্দীবাঈ জোশী যেহেতু আমেরিকায় ডাক্তারি পড়েছেন এবং ভারতে এসে ডাক্তারি শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই মারা গেছিলেন, তাই প্রথম ভারতীয় মহিলা ডাক্তার হিসাবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলিই অধিক পরিচিত।
দেখে নাও : লতা মঙ্গেশকর – লতাজীর জীবনী – Biography of Lataji
প্রাথমিক জীবন :
জন্ম : ১৮৬১ সালের ১৮ই জুলাই বিহারের ভাগলপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা : বিখ্যাত ব্রাহ্ম সংস্কারক ব্রজকিশোর বসু ছিলেন তার পিতা। তার পিতা ভাগলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
দেখে নাও : ডঃ বি আর আম্বেদকর জীবনী – প্রতিবেদন – রচনা – Dr. B.R. Ambedkar
শিক্ষা :
- কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় তার পিসতুতো দাদা মনমোহন এবং তার বন্ধু দ্বারকানাথের হাত ধরে তার পড়াশোনা আরম্ভ করেন হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়।
- এর পর বেথুন স্কুলে ভর্তি হন তিনি। বেথুন স্কুলে পড়ার সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাস্ করেন তিনি। এর মাধ্যমেই বেথুন কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি।
- এর পর চন্দ্রমুখী বসুর সাথে বিএ পাস করে ১৮৮৩ সালে বেথুন কলেজের প্রথম স্নাতক হয়ে ওঠেন তিনি। এর পাশাপাশি হয়ে ওঠেন ভারত সহ সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম মহিলা স্নাতক।
- এর পরই তার তীব্র ইচ্ছা জেগে ওঠে ডাক্তারি পড়ার।
- ১৮৮৩ সালে ভর্তি হন কলকাতা মেডিকেল কলেজে। একই বছরে নিজের শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলিকে বিয়ে করেন তিনি। বিবাহকালে তার বয়স ছিল ২১ এবং দ্বারকানাথ বাবুর বয়স ছিল ৩৯, তবে দ্বারকানাথ বাবুর কাছ থেকে পড়াশোনার বিষয়ে অনেক উৎসাহ পেতেন তিনি। এক কথায় বলতে গেলে তার সাফল্যের পেছনে তার স্বামী/শিক্ষকের খুব অবদান ছিল।
- ১৮৮৬ সালে মেডিক্যালের চূড়ান্ত পরীক্ষায় লিখিত বিষয় গুলিতে পাস্ করলেও প্রাক্টিকালের বিষয়ে তিনি পাস্ করতে অক্ষম হন। তা সত্ত্বেও তার বুদ্ধিমত্তায় প্রশংসিত হয়ে কতৃপক্ষ তাকে একই বছরে তাকে GBMC (Graduate of Bengal Medical College) ডিগ্রী প্রদান করেন।
- এর মাধ্যমেই তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের প্রথম ডিগ্রী সহ মহিলা চিকিৎসক।
- এর পরেও ১৮৯২ সালে মেডিকেল পড়ার জন্য বিলেত যান এবং এক বছর পর RCP, RCA, DFPS উপাধি নিয়ে দেশে ফেরেন।
কর্মজীবন :
- মেডিকেল কলেজে GBMC ডিগ্রী পাওয়ার পরেই ১৮৮৮ সালে তিনি লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতালে কিছু দিন ডাক্তারি করেছেন ৩০০ টাকার বিনিময়ে।
- ডাক্তার হয়ে উঠলেও গোঁড়া সনাতনপন্থী সমাজ তাকে ভালো চোখে দেখতোনা। নারী হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে।
- ডাক্তার হিসাবে কর্মরত থাকায় তাকে দিন-রাত না মেনে যেকোনো সময় জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে বাইরে যেতে হত। গোঁড়া ধর্মপন্থীরা এটিকে ভালো চোখে দেখতেন না।
- পরিস্থিতি এমনই খারাপ হয়ে গেছিলো যে ১৮৯১ সালে এক সনাতনপন্থী পত্রিকা বঙ্গবাসী-তে তাকে পরোক্ষ ভাবে ‘বেশ্যা’ বলে অভিহিত করা হয়।
- তিনি বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ পালের বিরুদ্ধে মান হানির মামলা করেন এবং তাতে জয়লাভও করেন। যার ফলে মহেশ পালের ৬মাসের কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা হয়।
- ১৮৮৯ সালে বোম্বেতে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে যে ৬ জন নারী নির্বাচিত হয়ে ছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি।
- এর পর কলকাতায় কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন তিনি এবং ভারতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা বক্তা হয়ে ওঠেন।
- ১৮৯৫ সালে তিনি নেপাল ভ্রমণ করেন রাজমাতার চিকিৎসার জন্য।
- গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি হন তিনি।
- ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্যও ছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলী।
- ১৯১৪ সালে কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মৃত্যু :
১৯২৩ সালের ৩রা অক্টোবর তিনি পরলোক গমন করেন।
মূল্যায়ন :
রাস্তায় হাঁটার চেয়ে রাস্তা তৈরিতে অনেক বেশি কষ্ট হয়। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন সেই নারী যিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে নারীরাও ডাক্তার হতে পারে। তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীতে অনেক মেয়েরাই ডাক্তারি পড়ছে এখন সেই সংখ্যা অসংখ্য। তাই তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে সর্বদাই থাকবেন ভারতবাসীদের মনে।
আরও দেখে নাও :
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী – প্রতিবেদন – Netaji Subhas Chandra Bose
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
To check our latest Posts - Click Here