ডঃ বি আর আম্বেদকর
প্রিয় বন্ধুরা চলে এলাম আবার একটি নতুন দিনের নতুন পোস্ট নিয়ে। এখন আমরা অনেক উন্নত, কিন্তু একসময় নীচু সম্প্রদায়ের ছায়া মারানোও পাপ ছিল। এই কুসংস্কার দূরীকরণ একদিনে হয়নি। আজ আমরা জেনে নেব এমনই একজন বিখ্যাত দেশনায়কের সম্পর্কে যিনি সমাজের নীচু সম্প্রদায়ের মানুষরাও যে মানুষ সেটা সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ইনিই সেই মহান ব্যক্তি যিনি ভারতের মহান সংবিধানের মুখ্য রচয়িতা। এই বিখ্যাত ব্যক্তি আর কেও নন, আমাদের “বাবাসাহেব“ অর্থাৎ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। বি আর আম্বেদকর ।
Also Check : স্বামী বিবেকানন্দ জীবনী – বিবেকানন্দ প্রতিবেদন
প্রাথমিক জীবন :
জন্ম : ডঃ বি আর আম্বেদকর ১৮৯১ সালের ১৪ই এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের ‘মহূ’ (Mhow)-তে (বর্তমানে ডঃ আম্বেদকর নগর) খুব দরিদ্র ও অস্পৃশ্য শ্রেণীর এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা : তাঁর পিতার নাম রামজি মালোজী শাকপাল।
মাতা : ভীমা বাঈ হলেন তাঁর মাতা।
Also Check : নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী – প্রতিবেদন – Subhas Chandra Bose
শিক্ষা :
বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ :
- ডঃ আম্বেদকরকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলেও অন্যান্য অস্পৃশ্য শিশুদের ন্যায় সকলের থেকে আলাদা করে রাখা হতো তাকে।
- শ্রেণী কক্ষে প্রবেশের অনুমতি ছিলনা তার।
- এমনকি তার জল বা জলের পাত্র স্পর্শের অনুমতি ছিলোনা, যদি জল তৃষ্ণা পেত, উচ্চ বর্ণের কেউ (মূলত পিয়নরা) উঁচু থেকে জল ঢেলে দিতো সেই জল পান করতে হতো তাকে। আর সব থেকে বাজে ব্যাপারটি হল যেদিন পিয়নরা আসতোনা, তাকে জল না খেয়েই বিদ্যালয়ে দিন কাটাটিয়ে হত।
- ১৮৯৭ সালে, আম্বেদকরের পরিবার মুম্বাইতে চলে আসে যেখানে আম্বেদকর এলফিনস্টোন হাই স্কুলে ভর্তি হওয়া একমাত্র অস্পৃশ্য ছাত্র হয়ে ওঠেন।
- মুম্বাই আসার কিছুদিনের মধ্যেই তার মা মারা যান এবং তিনি মাসির কাছে লালিত পালিত হন।
- ১৯০৬ সালে, যখন তার বয়স প্রায় ১৫ বছর, তিনি একটি নয় বছর বয়সী মেয়ে রমাবাইকে বিয়ে করেছিলেন তার বাবা ও মাসির মত অনুযায়ী।
Also Check : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ :
- ১৯০৭ সালে, তিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরের বছর তিনি এলফিনস্টোন কলেজে প্রবেশ করেন, যেটি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
- তার মাহার সম্প্রদায় থেকে এই কলেজএ ভর্তি হওয়া প্রথম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন তিনি।
- কলেজে পড়ার সময় তিনি বরোদা রাজ্যের তৎকালীন রাজা মহারাজা তৃতীয় সায়াজিরাও গায়কোয়াড-এর কাছ থেকে মাসিক ২৫টাকা করে বৃত্তি পেতেন।
- ১৯১২ সালে তিনি এলফিনস্টোন কলেজ থেকে (বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে) অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান-এ ডিগ্রী লাভ করেন ও তৎকালীন বরোদা রাজ্যে চাকরি গ্রহণ করেন।
- একই বছর তার প্রথম পুত্র ইশান্তের জন্ম হয়।
কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ :
- ১৯১৩ সালে, ২২ বছর বয়সে, আম্বেদকর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
- নিউইয়র্ক সিটির কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য বরোদার মহারাজ তৃতীয় সায়াজিরাও গায়কওয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি স্কিমের অধীনে তিন বছরের জন্য প্রতি মাসে ১১.৫০ পাউন্ড (স্টার্লিং) করে বরোদা স্টেট স্কলারশিপ পেতেন তিনি।
- তিনি ১৯১৫ সালের জুন মাসে মূল অর্থনীতি বিষয়ে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, এছাড়াও সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন এবং নৃতত্ত্ব বিষয়ে উত্তীর্ণ হন।
- তিনি এম এ করার সময় ‘প্রাচীন ভারতীয় বাণিজ্য’ নামে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
- এবং ১৯১৬ সালে আর একটি এম এ গবেষণা পত্র “ভারতের জাতীয় কারাগারের লভ্যাংশ – একটি ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণিক গবেষণা” প্রকাশ করেন।
- আম্বেদকর জন ডিউই এবং গণতন্ত্রের উপর তার কাজ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স-এ পড়াশোনা :
- ১৯১৬ সালের অক্টোবরে, তিনি গ্রে’স ইন-এ (Gray’s Inn) বার কোর্সের জন্য নথিভুক্ত হন এবং একই সঙ্গে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে ভর্তি হন যেখানে তিনি ডক্টরেট (Phd) এর জন্য গবেষণাপত্রের কাজ শুরু করেন।
- ১৯১৭ সালের জুন মাসে, তিনি ভারতে ফিরে আসেন কারণ বরোদা থেকে তাঁর স্কলারশিপের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
- কিন্তু ভারতে ফিরে আসার সময় অন্য একটি জাহাজে তাঁর যে গবেষণা পত্রের সংগ্রহ পাঠানো হয় সেটিকে জার্মানি সাবমেরিন ধাওয়া করে ডুবিয়ে দেয়।
- যাই হোক তাকে ৪ বছরের মধ্যে লন্ডন ফিরে গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
- ১৯২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ গ্রহণ করে তিনি লন্ডনে পৌঁছান এবং ১৯২২-এ প্রবল প্রচেষ্টার পর তার Phd-এর গবেষণা পত্র জমা করেন লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে এবং ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন।
অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা :
- ১৯১৮ সালে, তিনি মুম্বাইয়ের সিডেনহাম কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সে রাজনৈতিক অর্থনীতির (Political Economy) অধ্যাপক হন।
- যদিও তিনি ছাত্রদের সাথে মিলে মিশে চলতেন, অন্যান্য অধ্যাপকরা তাঁর সাথে এমনকি পানীয় জলের জগ ভাগাভাগি করতেও আপত্তি করতেন।
- আম্বেদকর একজন আইনি পেশাজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
- ১৯২৬ সালে, তিনি সফলভাবে তিনজন অ-ব্রাহ্মণ নেতাকে ডিফেন্ড করেছিলেন যাদের উপর ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়কে ভারতকে ধ্বংস করার জন্য অভিযুক্ত করার জন্য মানহানির মামলা করা হয়েছিল।
- বোম্বে হাইকোর্টে আইন অনুশীলন করার সময়, তিনি অস্পৃশ্যদের শিক্ষার প্রসার এবং তাদের উন্নতির প্রচেষ্টা করেছিলেন।
- তার প্রথম সংগঠিত প্রচেষ্টা ছিল তার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা’ প্রতিষ্ঠা, যার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি “বহিষ্কৃত”দের কল্যাণ করা।
- দলিত অধিকার রক্ষার জন্য তিনি মুক নায়ক, বহিষ্কৃত ভারত-এর মতো অনেক সাময়িকী পত্রিকা শুরু করেন।
- ১৯২৭ সালের নাগাদ, আম্বেদকর অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
- প্রথমে তিনি সব সম্প্রদায়ের জন্য পানীয় জলের সংস্থান উন্মুক্ত করার জন্য জনগণের আন্দোলন এবং মিছিল শুরু করেন।
- তিনি নিচু সম্প্রদায়ের জনগণদের হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের জন্য সংগ্রামও শুরু করেন।
- শহরের প্রধান জল ট্যাঙ্ক থেকে অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের জল তোলার অধিকারের জন্য লড়াইয়ের জন্য তিনি মাহাদ-এ একটি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দেন।
- ১৯২৭ সালের শেষের দিকে একটি সম্মেলনে, আম্বেদকর বর্ণবৈষম্য এবং “অস্পৃশ্যতা”কে সমর্থনকারী হিন্দু গ্রন্থ, “মনুস্মৃতি” এর প্রকাশ্যে নিন্দা করেন এবং তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে প্রাচীন এই বইয়ের কপি পুড়িয়ে দেন।
- ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৭-এ, তিনি হাজার হাজার অনুগামীদের মনুস্মৃতির কপি পোড়ানোর জন্য নেতৃত্ব দেন।
- এর জন্য প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর আম্বেদকরবাদী এবং দলিতদের দ্বারা মনুস্মৃতি দহন দিবস হিসাবে পালিত হয়।
- ১৯৩০ সালে, আম্বেদকর তিন মাস প্রস্তুতির পর কালারাম মন্দির আন্দোলন শুরু করেন।
- কালারাম মন্দির সত্যাগ্রহের প্রায় ১৫,০০০ স্বেচ্ছাসেবক একত্রিত হয়েছিলেন।
পুনা চুক্তি :
- আম্বেদকরকে তার খ্যাতির জন্য অস্পৃশ্য শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসাবে ১৯৩২ সালের গোল টেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।
- এখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার দলিত শ্রেণীর জন্য একটি পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের ঘোষণা দেয়।
- মহাত্মা গান্ধী তীব্রভাবে অস্পৃশ্যদের জন্য পৃথক নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে এই ধরনের ব্যবস্থা হিন্দু সম্প্রদায়কে বিভক্ত করবে।
- পুনার ইয়েরওয়াদা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় গান্ধীজি অনশন করে এর প্রতিবাদ শুরু করেন।
- অনশন চলাকালীন, কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ এবং কর্মীরা যেমন মদন মোহন মালব্য এবং পালভাঙ্কর বালু ইয়েরওয়াড়াতে আম্বেদকর এবং তার সমর্থকদের সাথে যৌথ বৈঠকের আয়োজন করেন।
- ১৯৩২ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর, আম্বেদকর (হিন্দুদের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত শ্রেণীর পক্ষে) এবং মদন মোহন মালব্যের (অন্যান্য হিন্দুদের পক্ষে) মধ্যে পুনা চুক্তি নামে পরিচিত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
- আম্বেদকর এই চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, অস্পৃশ্য সম্প্রদায় যেন কোনো প্রকার ধর্মীয় দাঙ্গার শিকার না হয়ে যায় সেই ভেবে।
- চুক্তির শর্তানুযায়ী, অনুন্নত বা দলিত শ্রেণি স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করা হয়।
- দলিত সম্প্রদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় পূর্বের থেকে দ্বিগুণ আসন সংরক্ষিত করা হয়। (৭১ এর পরিবর্তে ১৪৮টি)
- সকল ভােটদাতাই ভােটে অংশ নেওয়ার অধিকার পায়।
- এই চুক্তির পরে গান্ধীজি অনশন শেষ করেন।
ভারতের সংবিধান রচনায় অবদান :
- ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এ ভারতের স্বাধীনতার পর, নতুন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার আম্বেদকরকে দেশের প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যা তিনি গ্রহণ করেন।
- ২৯শে আগস্ট, তিনি সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ভারতের নতুন সংবিধান রচনার জন্য বিধানসভা দ্বারা নিযুক্ত হন।
- গ্র্যানভিল অস্টিন আম্বেদকর কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় সংবিধানকে ‘প্রথম এবং সর্বাগ্রে একটি সামাজিক দলিল‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
- তাঁর দ্বারা প্রস্তুত করা এই সংবিধান তিনি ধর্মের স্বাধীনতা, অস্পৃশ্যতা বিলুপ্তি এবং সকল প্রকার বৈষম্যকে বেআইনি ঘোষণা করেন।
- আম্বেদকর তার সংবিধানে নারীদের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য যুক্তি দেন এবং সিভিল সার্ভিস, স্কুল ও কলেজে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর সদস্যদের জন্য চাকরির সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করার অনুমোদন পান।
- যাই হোক তিনি ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিরোধিতা করেছিলেন, যা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে একটি বিশেষ মর্যাদা দেয়। এই ধারাটি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
মৃত্যু :
- ১৯৪৮ সাল থেকে, আম্বেদকর ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং দুর্বল দৃষ্টিশক্তির কারণে ১৯৫৪ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
- তার চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি The Buddha and His Dhamma লেখার তিন দিন পর, আম্বেদকর ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬-এ দিল্লিতে তার বাড়িতে ঘুমের মধ্যে মারা যান।
- আম্বেদকরের জন্য একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়েছিল তাঁর দিল্লির ২৬ আলিপুর রোডের বাড়িতে।
- তাঁর জন্মদিনটি আম্বেদকর জয়ন্তী বা ভীম জয়ন্তী নামে পরিচিত এবং একটি সরকারী ছুটি হিসাবে পালিত হয়।
- ১৯৯০ সালে তিনি মরণোত্তর ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন, ভূষিত হন।
- তাঁর মৃত্যু দিনটি ‘ধৰ্ম চক্র প্রবর্তন দিবস‘ হিসাবে পালিত হয়।
- দলিত ও অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের জন্য ও ভারতের এমন মহান সংবিধান রচনার জন্য তিনি ভারতীয়দের কাছে সর্বদা শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকবেন।
To check our latest Posts - Click Here