Geography NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

চিপকো আন্দোলন – সুন্দরলাল বহুগনা – Chipko Movement

Chipko Movement

Story Highlights
  • প্রয়াত চিপকো আন্দোলনের নেতা সুন্দরলাল বহুগুনা
  • হিন্দী ভাষায় “চিপকো’ শব্দটির অর্থ আলিঙ্গন করা।
  • ১৯৭৩ সালে উত্তরাখন্ডের চামেলী জেলার গােপেশ্বর নামক পাহাড়ি গ্রামে চিপকো আন্দোলনের সুত্রপাত
  • প্রধান নেতৃবৃন্দরা ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুনা, চণ্ডীপ্রসাদ ভাট এবং গৌরী দেবী
  • প্রচুর মহিলারা এই আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন।

চিপকো আন্দোলন – সুন্দরলাল বহুগনা

আজ ২১শে মে ২০২১। প্রয়াত হলেন ভারতে পরিবেশ আন্দোলনের প্রথিকৃৎ সুন্দরলাল বহুগুনা। মহামারী কোভিড কেড়ে নিলো ভারতের অন্যতম পরিবেশ আন্দোলন – “চিপকো আন্দোলন” এর প্রতিষ্ঠাতার প্রাণ। তাঁর প্রয়ানে শোকজ্ঞাপন করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সহ সকল পরিবেশপ্রেমী।

‘সুন্দরলাল বহুগুনার প্রয়াণ একটা বড় ক্ষতি। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বেঁচে থাকার নীতি তৈরি করেছিলেন তিনি। তাঁর সরলতা কখনই ভোলা যাবে না।’ – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

‘সুন্দরলাল বহুগুণার প্রয়াণে একটা গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। পদ্মবিভূষণ এই ব্যক্তি গান্ধীবাদী ছিলেন। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’ – রাম নাথ কোবিন্দ

চিপকো আন্দোলন :

হিমালয় পর্বতের অমূল্য অরণ্য সম্পদকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭৩ সালে সূচনা হয় চিপকো আন্দোলনের। চিপকো আন্দোলন কে কৃষকদের আন্দোলন বা মহিলাদের আন্দোলন যা হিসাবেই অনুমান করা হোক না কেন সর্বপরি এটি ছিল ভারতের প্রথম সংগঠিত পরিবেশ আন্দোলন।

Big chipko movement 1522047126
চিপকো আন্দোলন

চিপকো আন্দোলনের পটভূমি :

চিপকো আন্দোলনের মূল বা শিকড় অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এই আন্দোলনের বীজ রয়েছে রাজস্থানের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা খেজরি গাছ কে রক্ষার জন্য প্রানের বলিদান।

  • বিষ্ণোই পশ্চিমী থর মরুভূমি এবং উত্তর ভারতের  একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়।
  • এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হলেন গুরু মহারাজ জাম্বজি।
  • এই সম্প্রদায়ের প্রধান বৈশিষ্ট হলো এরা প্রকৃতির উপাসক।
  • ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশ রক্ষার্থে বিষ্ণোই আন্দোলন শুরু করেন সোমবাজি।
  • পরবর্তীকালে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অমৃতাদেবী বিষ্ণোই ( ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে )।
  • এই আন্দোলনে প্রায় ৩৬৩ জন নিহত হয়েছিলেন।
  • গাছ বাঁচাতে গাছকে জড়িয়ে ধরে আন্দোলন ভারতে প্রথম শুরু করে বিষ্ণোই সম্প্রদায় ।

প্রকৃতপক্ষে গাছ বাঁচাতে গাছকে জড়িয়ে ধরার ধারণা আসে এই বিষণই/ বিষ্ণোই আন্দোলন (Bishnoi Movement ) থেকেই।

দেখে নাও : ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ আন্দোলন

চিপকো আন্দোলনের ইতিহাস

উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল ও কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত চামোলি জেলায় চিপকো আন্দোলনের সূচনা হয়। এই অঞ্চলটি ভাগীরথী ও অলকানন্দার নদীর মতো প্রধান প্রধান নদীর উৎস।

উত্তরাখণ্ডের স্থানীয় সংস্থা Dashauli Gram Swarajya Sangh (DGSS) ১৯৭৩ সালে স্থানীয় মানুষদের কৃষি সরঞ্জাম তৈরির জন্য বন দপ্তরের কাছে ১০ টি করে ছাই বৃক্ষ প্রদানের অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু বনদপ্তর তা দিতে অগ্রাহ্য করেন কিন্তু পরবর্তীকালে তারা বিদেশী সাইমন্ড কোম্পানীকে ৩০০ টি  ছাই বৃক্ষ প্রদানের অনুমতি প্রধান করে। যা স্থানীয় মানুষদের মধ্যে অসন্তোষের উদ্ভব ঘটায়। তারপর ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে সাইমন্ড কোম্পানীর কিছু কর্মচারী তাদের বরাদ্দ ৩০০ বৃক্ষ কাটতে এলে স্থানীয় মানুষ জন ড্রাম বাজিয়ে, লোকগীত গেয়ে তাদের বিরোধীতা করেন।

গোপেশ্বরের দাসোহলি গ্রাম স্বরাজ্য মণ্ডল  সংগঠনের নেতা চন্ডী প্রসাদ ভাট গাছ বাঁচাতে বিষ্ণোই আন্দোলনের ন্যায় গাছকে আলিঙ্গন করার বুদ্ধি নিয়ে আসেন। চিপকো একটি হিন্দি শব্দ যার অর্থ জড়িয়ে ধরা বা আলিঙ্গন। এই ভাবেই চিপকো আন্দোলনের সূচনা হয়।
পরবর্তী সময়ে সাইমন্ড কোম্পানী কে ফাতা বন থেকে গাছ বরাদ্দ করা হয়, কিন্তু সেখানেও তারা বিরোধীতার সম্মুখিন হয়। তারপর বন দপ্তর DGSM সংগঠনকে একটি করে বৃক্ষ কাঁটার অনুমতি দেন কিন্তু DGSM সংগঠন তা প্রত্যাখান করেন, পড়ে বন দপ্তর ১০ টি গাছ কাটার অনুমতি দিলেও তারা সেটিও প্রত্যাখান করে দেন। সবশেষে বনদপ্তর সাইমন্ড কোম্পানীর গাছ কাঁটার অনুমতি বাদ করতে বাধ্য হয়।

চিপকো আন্দোলন এরপর তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরাখন্ড রাজ্য) অন্যান্য পার্বত্য জেলা, যেমন – রেনি, তেহরি, কুমায়ন ও বৈদ্যগড় – এ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে যখন রেনি অরণ্য অঞ্চলে ২০০০ মতো গাছ কাটা পরার সম্ভাবনা দেখা তখন DGSM এর নেতা চন্ডী প্রসাদ ভাটের নির্দেশ মতো উক্ত অঞ্চলের গ্রামীন মহিলারা গৌরি দেবীর নেতৃত্বে গাছ গুলোকে আলিঙ্গন করে বৃক্ষচ্ছেদন থেকে রক্ষা করেন।

এর ফলে উত্তরপ্রদেশ সরকার বাধ্য হন উচ্চ পদস্থ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে এবং এই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দশ বছরের জন্য অলকানন্দার উচ্চ অববাহিকায় সম্পূর্ন রূপে বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ হয়।

পরবর্তীকালে হিমালয় অঞ্চলে বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করলে চিপকো আন্দোলনের অপর এক নেতা সুন্দরলাল বহুগুনা  ১৯৮১ সালে আমরণ অনশনে বসেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাথে দেখা করেন এবং আগামী ১৫ বছরের জন্য এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক বৃক্ষচ্ছেদন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেন। এই ভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে চিপকো আন্দোলনের সফলতা।

চিপকো আন্দোলন সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

১. চিপকো আন্দোলন কত সালে শুরু হয় ?

১৯৭৩ সালে চিপকো আন্দোলন শুরু হয়।

২. চিপকো আন্দোলন কোন রাজ্যে ঘটেছিল ?

উত্তরাখন্ড (তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ )

৩. চিপকো আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন ?

চন্ডী প্রসাদ ভাট, সুন্দরলাল বহুগুনা, গৌরী দেবী প্রমুখেরা ।

৪. সুন্দরলাল বহুগুনা কোন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ?

চিপকো আন্দোলন

আরও দেখে নাও :

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button