History NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

নীল বিদ্রোহ – কারণ ফলাফল – Indigo Revolt

Indigo Revolt

নীল বিদ্রোহ – কারণ ফলাফল – Indigo Revolt

আজ আমাদের আলোচনার বিষয় নীল বিদ্রোহ (Indigo Revolt ) । ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলা মূলত প্রেসিডেন্সিতে ঘটা এই কৃষক-বিদ্রোহের ব্যাপকতা ছিল খুব, এই বিদ্রোহ শিক্ষিত সমাজ থেকে বেশ সাড়া পেয়েছিলো। 

বিদ্রোহকাল :

এই বিদ্রোহ ১৮৫৯ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল। 

সুচনাস্থান :

নদীয়ার চৌগাছা গ্রামে নীলকরদের বিরুদ্ধে নীল চাষীদের এই বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে। 

নীল বিদ্রোহের কারণ :

নীল বিদ্রোহ কেন ঘটেছিল ?

  • ১৭৭৭ সালে নাগাদ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে বাংলায় নীল চাষ শুরু হয়।
  • সারা বিশ্বে নীলের চাহিদা ছিল খুব বেশি। ইউরোপেও অষ্টাদশ শতকে শিল্প বিপ্লব ঘটলে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা বৃদ্ধি হয়। 
  • ভারতে (মূলত বাংলা, বিহার) চাষের জমির প্রাচুর্য থাকায় ইউরোপীয় নীল ব্যবসায়ীরা তার সুযোগ নিয়ে বাংলা, বিহার প্রভৃতি এলাকার কৃষকদের সাথে প্রতারণামূলক চুক্তির মাধ্যমে তাদের নীল চাষ করতে বাধ্য করা শুরু করে। 
  • চাষীরা খাদ্য ফসলের পরিবর্তে নীল চাষ করতে বাধ্য হয়েছিল।
  • নীল চাষ করানোর জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির নীলকর সাহেবরা চাষীদের দাদন প্রদান করতো, অর্থাৎ নীল চাষের জন্য বিঘা প্রতি ২ টাকা করে অগ্রিম ঋণ প্রদান করতো, যার শর্ত অনুযায়ী কৃষকদের তাদের জমিগুলিতে কেবল নীল চাষই করতে হতো। 
  • চাষীদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তারা লোভের বশে এই দাদন গ্রহণ ও করে নিতো, এবং এর পরেই শুরু হতো নীলকর সাহেব দের অকথ্য অত্যাচার। 
  • দাদন নেওয়ার পর চাষীরা পরবর্তী কালে যদি নীল চাষে নাকোচ করতো, তাহলে তাদের উপর প্রচন্ড অত্যাচার করা হতো, চাষীদের ঘর-বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হত, ঘরের মেয়েদের সম্মানহানি করা হত, চাষীদের নীলকুঠিতে ডেকে এনে বেঁধে মারা হত। 
  • নীলকর সাহেবরা চাষী দের সেই অগ্রিম ঋণের বোঝায় চিরকাল নিমজ্জিত করে রাখতো প্রতারণামূলকভাবে। 
  • দরিদ্র কৃষকেরা অলাভজনক হারে নীলকর সাহেবদের কাছে নীল বিক্রি করতে বাধ্য হত এবং নীলকর সাহেবরা এক বিরাট মুনাফা কামাতো। 
  • চাষীদের প্রতি এই সমস্ত অমানবিক অত্যাচারও প্রতারণাই ধীরে ধীরে নীল বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করে। 

বিদ্রোহ :

  • নীল চাষীরা ১৮৫৯ সালে বাংলার নদীয়া জেলায় নীল চাষে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে নীল বিদ্রোহ শুরু করে। 
  • এতে বাধা দিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপরেও হামলা চালায় তারা। 
  • ১৮৬০ সালের এপ্রিল মাসে, নদীয়া ও পাবনা জেলার বারাসত বিভাগের সমস্ত কৃষক ধর্মঘট করে এবং নীল চাষ করতে অস্বীকার করে।
  • ধর্মঘট বাংলার অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।
  • নদীয়ার বিশ্বাস ভাই ছাড়াও, মালদার রফিক মণ্ডল ও পাবনার কাদের মোল্লা ইত্যাদি অনেকে এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 
  • নড়াইলের রামরত্তন মল্লিকের মতো অনেক জমিদারের কাছ থেকেও নীল বিদ্রোহ সমর্থন পায়।
  • বিদ্রোহ দমন করা হয় এবং অনেক কৃষককে সরকার এবং বিদ্রোহবিরোধী জমিদারদের দ্বারা হত্যা করা হয়।
  • বিদ্রোহের সমর্থনে ছিল বাঙালি বুদ্ধিজীবী, মুসলমান এবং মিশনারিরাও। 
  • পুরো গ্রামীণ জনগণ বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিল।
  • প্রেসগুলিও বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিল এবং কৃষকদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছিল এবং তাদের প্রতি হওয়া নির্মম অত্যাচারের বিদুদ্ধে স্বরব হয়েছিল।

নীলদর্পন নাটক :

  • ১৮৫৮ – ৫৯ সালের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্র রচিত নীল দর্পণ নাটকটি কৃষকদের তৎকালীন পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে চিত্রিত করে তুলেছে।
  • নাটকটি দেখিয়েছে কিভাবে কৃষকদের পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান ছাড়াই নীল চাষে বাধ্য করা হত, নীল চাষে রাজি না হলে কৃষকদের প্রতি কেমন নির্মম অত্যাচার করা হতো। 
  • নাটকটি তৎকালীন সময়ের একটি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নীল বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানায়। 
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলার গভর্নরের সচিব W S সেটন-কারের কর্তৃত্বে নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব :

  • বিদ্রোহটি মূলত অহিংস ছিল এবং এটি পরবর্তী বছরগুলিতে গান্ধীজির অহিংস সত্যাগ্রহের অগ্রদূত হিসাবে কাজ করেছিল।
  • বিদ্রোহটি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। বহু বছর ধরে নীলকর সাহেব ও সরকারের হাতে কৃষকদের নিপীড়ন ও দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে এর পথ সৃষ্টি হয়েছিল।
  • এই বিদ্রোহে হিন্দু ও মুসলমান চাষীরা সরকার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে অংশগ্রহণ করে ছিল, যা এক হিন্দু-মুসলিম সৌভাতৃত্বের সৃষ্টি করে। 
  • সরকার কর্তৃক নির্মমভাবে দমন করা সত্ত্বেও বিদ্রোহ সফল হয়েছিল।
  • বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, সরকার ১৮৬০ সালে নীল কমিশন নিয়োগ করে। 
  • কমিশনের প্রতিবেদনে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘চাষীদের রক্তে রঞ্জিত না হয়ে এক টুকরো নীলও ইংল্যান্ডে পৌঁছায়নি।’
  • একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছিল যাতে বলা হয়েছিল যে কৃষকদের নীল চাষে বাধ্য করা যাবে না।
  • অবশেষে, নীলকরদের দমন-পীড়ন বন্ধ করার লক্ষ্যে নবাব আবদুল লতিফের উদ্যোগে ব্রিটিশ সরকার ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠন করে, এবং এর মাধ্যমে নীল বিদ্রোহের শেষ হয়। 
  • ১৮৬০ সালের শেষের দিকে, নীল চাষকে সম্পূর্ণভাবে বাংলা থেকে ধুয়ে মুছে ফেলা হয়েছিল কারণ বেশির ভাগ নীলকর সাহেবরা তাদের নীল কারখানা বন্ধ করে দেয়।
  • নীল দর্পণ নাটকে এবং বিভিন্ন গদ্য ও পদ্যের আরও অনেক রচনায় বিদ্রোহকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছিল। এর ফলে বিদ্রোহ বাংলার রাজনৈতিক চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং পরবর্তীকালে বাংলার অনেক আন্দোলনকে প্রভাবিত করে।

Download Section

  • File Name : নীল বিদ্রোহ – কারণ ফলাফল – Indigo Revolt – বাংলা কুইজ
  • File Size : 1 MB
  • no. of Pages : 03
  • Format : PDF
  • Language : Bengali
  • Subect : History

আরও দেখে নাও :

ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ / আন্দোলন / বৈপ্লবিক ঘটনাসমূহ ও নেতৃবৃন্দ

সিপাহী বিদ্রোহ – মহাবিদ্রোহ ( Note, Video – MCQ, PDF )

নীল বিদ্রোহ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

নীলদর্পণ কে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন?

নীলদর্পণ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

নীলদর্পন নাটকটি রচনা করেন –

দীনবন্ধু মিত্র

নীল বিদ্রোহ কত সালে হয়েছিল ?

১৮৫৯ – ১৮৬০

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button