History Notes

নেহেরু রিপোর্ট (১৯২৮ ) – Nehru Report

Nehru Report

নেহেরু রিপোর্ট (১৯২৮ ) – Nehru Report

আজকে আমরা আলোচনা করবো নেহেরু রিপোর্ট (১৯২৮ ) – Nehru Report নিয়ে ।

নেহেরু রিপোর্ট ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের এক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

খিলাফত ও অসহযােগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর ভারতের হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার পটভূমিতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নতি বিধানের জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ক্রমাগত চেষ্টা চালায়। ব্রিটিশ সরকারও এই ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এমতাবস্থায় কংগ্রেস হিন্দু-মুসলিম সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য দলের সাথে পরামর্শ করে একটি ‘স্বরাজ শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং আলোচনার জন্য কংগ্রেস সর্বদলীয় একটি সভা আহ্বান করে।

১৯২৮ সালের ১৯ মে বােম্বেতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় তৃতীয় সভায় সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি আগস্ট মাসে একটি রিপাের্ট পেশ করে। সংবিধানের খসড়া সম্পর্কে কমিটির সুপারিশ ভিত্তিক দলিল নেহেরু রিপাের্ট নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ।

আরও দেখে নাও : আইন অমান্য আন্দোলন – Civil Disobedience Movement

কমিটির অন্যান্য সদস্য

এই কমিটির নেতৃত্ব দেন মতিলাল নেহেরু। সম্পাদক হন তরুণ নেতা জওহরলাল নেহরু। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদ্যসরা হলেন কংগ্রেস থেকে সুভাষ চন্দ্র বসু , মুসলিম লীগ থেকে আলি ইমাম ও সাহেব কুরেশি , হিন্দু মহাসভা থেকে এম. এস. অ্যানে ও এম. আর. জয়াকার , শিখ সম্প্রদায়ের সর্দার মঙ্গল সিং প্রমুখেরা।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে লক্ষ্মৌতে সর্বদলীয় সন্মেলনের পূর্ণ অধিবেশনে নেহেরু কমিটির প্রধান মতিলাল নেহেরু ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে সংবিধানের একটি খসড়া পেশ করেন । এই খসড়া সংবিধানই নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত ।

নেহেরু রিপোর্ট এর বিভিন্ন শর্ত

নেহেরু রিপোর্টে প্রস্তাবিত শর্তগুলি ছিল –

  • ভারতকে পূর্ণ ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা দিতে হবে ।
  • ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্রের রূপ দিতে হবে যার প্রধান ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় আইনসভার হাতে ।
  • জনগণের দ্বারা নির্বাচিত দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা গঠন করতে হবে।
  • প্রদেশগুলিতে এক – কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গড়ে তুলতে হবে ।
  • সিন্ধুকে বােম্বে হতে পৃথক করার প্রস্তাব করতে হবে।
  • কেন্দ্র ও অমুসলমান প্রধান প্রদেশগুলােতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব করতে হবে তবে বাংলা এবং পাঞ্জাবে মুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণের নীতি বাতিলের সুপারিশ করে এই রিপোর্ট।
  • ভারতীয়দের জন্য ১৯টি মৌলিক অধিকারের কথা প্রস্তাব করে এই রিপোর্ট।
  • সর্বোচ্চ আদালত গঠন করতে হবে।
  • সাম্প্রদায়িক ভােটাধিকারের নীতি ত্যাগ করে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সার্বজনীন ভোটাধিকার নীতি গ্রহণ করতে হবে ।
  • ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন করতে হবে ।

আরও দেখে নাও : ভারত ছাড়ো আন্দোলন – Quit India Movement

নেহেরু রিপাের্টের প্রতিক্রিয়া

এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে বিভিন্ন দল বিভিন্ন মতামত প্রকার করে।

  • জাতীয় কংগ্রেস নেহেরু রিপোর্টকে সমর্থন করলেও অনেক তরুণ সদস্য ভিন্নমত প্রকাশ করেছিলেন। নেহেরু রিপোর্ট dominion status দাবী করেছিল অন্যদিকে তরুণ ব্যক্তিবর্গ পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন ।
  • শিখ নেতৃবৃন্দ রিপাের্টের সাম্প্রদায়িক প্রস্তাবনাসমূহ গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করে।
  • সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় হরিজন সম্প্রদায় অসন্তোষ প্রকাশ করে।
  • মুসলিম নেতৃবৃন্দ দল-মত নির্বিশেষে এ রিপাের্টের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ নেহেরু রিপাের্ট সংশােধনের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব করেন। কিন্তু হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেস জিন্নাহর প্রস্তাবের বিরােধিতা করে। এতে মুসলিম লীগ নেহেরু রিপাের্ট গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে মতবিরােধ বৃদ্ধি পায়।তখন মহম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের কট্টর গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলান ও ১৪ দফা দাবির (Fourteen Points) কথা ঘোষণা করেন ।
  • মূলত মহম্মদ আলী জিন্নাহ ও হিন্দু মহাসভার গোয়ার্তুমি নেহেরু রিপোর্টের ভরাডুবির জন্য দায়ী ছিল ।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button