General Knowledge Notes in BengaliNotes

পর্যায় সারণির বিভিন্ন ধরণের মৌল

Kinds of elements in Periodic Table

পর্যায় সারণির বিভিন্ন ধরণের মৌল

আজকে আমরা আলোচনা করবো পর্যায় সারণির বিভিন্ন ধরণের মৌল নিয়ে। পর্যায় সারণিতে কত ধরণের মৌল রয়েছে তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা আজকের এই পোস্ট থেকে তোমরা পেয়ে যাবে।

আদর্শ মৌল বা প্রতিনিধি মৌল (Representative element) :

  • যে-সমস্ত মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষ ছাড়া অন্য সব কক্ষেই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যায় ইলেকট্রন থাকে, তাদের আদর্শ মৌল বা প্রতিনিধি মৌল বলে।
  • 1, 2 এবং 13–17 নং শ্রেণির মৌলগুলি এই ধরনের মৌল।
  • এই মৌলগুলি রাসায়নিকভাবে খুবই সক্রিয় হয়। প্রকৃতিতে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
  • উদাহরণ : একটি আদর্শ মৌলের নাম হল সােডিয়াম (Na)।

ক্ষার  ধাতু (Alkali metals) :

দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 1 নং শ্রেণিতে বা মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণির গ্রুপ-IA তে অবস্থিত লিথিয়াম (Li), সােডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), রুবিডিয়াম (Rb), সিজিয়াম (Cs) ও ফ্রান্সিয়াম (Fr) – এই ছয়টি ধাতু হল ক্ষার ধাতু

ক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্য :

  1. ক্ষার ধাতুগুলি প্রত্যেকেই তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু।
  2. এই মৌলগুলির যােজন কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 1, অর্থাৎ এরা একযােজী।
  3. ক্ষার ধাতুগুলি জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে।
  4. ক্ষার ধাতুগুলি তীব্র বিজারক মৌল।

নামকরণের  কারণ :  এই ধাতুগুলি সাধারণ উষ্ণতায় জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষারধর্মী হাইড্রক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে। এই কারণে এদের ক্ষার ধাতু বলা হয়।

পর্যায় সারণির বিভিন্ন ধরণের মৌল

ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু (Alkaline earth metals) :

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণির Gr IIA-তে এবং দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 2 নং শ্রেণিতে অবস্থিত বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেশিয়াম (Mg), ক্যালশিয়াম (Ca), স্ট্রনশিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba) এবং রেডিয়াম (Ra) এই ছয়টি ধাতুকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু বলে।

ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর বৈশিষ্ট্য :

  1. এদের রাসায়নিক সক্রিয়তা ক্ষার ধাতু অপেক্ষা কম।
  2. এদের যােজ্যতা 2, অর্থাৎ, এদের যােজন কক্ষে 2টি ইলেকট্রন বর্তমান।
  3. এদের জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী।
  4. এরাও বিজারক মৌল।

নামকরণের কারণ : এই মৌলগুলি ভূত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এদের অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড মৃদু ক্ষারধর্মী। তাই এদের ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু বলে।

নিকটোজেন মৌল (Pnictogens) :

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণির VB শ্রেণিতে বা দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 15 নং শ্রেণিতে অবস্থিত নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), আর্সেনিক (As), অ্যান্টিমনি (Sb) ও বিসমাথ (Bi) – এই মৌলগুলিকে নিকটোজেন মৌল বলা হয়।

নামকরণের কারণ : ‘নিকটোজেন’ শব্দটির অর্থ হল শ্বাসরােধকারী। এই শ্রেণির প্রথম মৌল নাইট্রোজেন শ্বাসরােধকারী গ্যাস। তাই এই শ্রেণির অন্তর্গত মৌলগুলিকে এরূপ নাম দেওয়া হয়েছে।

চ্যালকোজেন (Chalcogens) :

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণির VIB শ্রেণির বা দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 16 নং শ্রেণির অন্তর্গত মৌলগুলি অর্থাৎ, অক্সিজেন (O), সালফার (S), সেলেনিয়াম (Se), টেলুরিয়াম (Te), পােলােনিয়াম (Po) মৌলগুলিকে একত্রে চ্যালকোজেন মৌল বলা হয়।

নামকরণের কারণ : ‘চ্যালকোজেন’ কথাটির অর্থ আকরিক গঠনকারী। এই মৌলগুলি বিশেষ করে অক্সিজেন, সালফার বিভিন্ন ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধাতব অক্সাইড বা ধাতব সালফাইড গঠন করে আকরিকের উপাদানরূপে অবস্থান করে। তাই এই শ্রেণির মৌলগুলির এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।

হ্যালোজেন মৌল (Halogens) :

আধুনিক দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 17 নং শ্রেণিতে অবস্থিত ফ্লুওরিন (F), ক্লোরিন (CI), ব্রোমিন (Br), আয়ােডিন (I) এবং তেজস্ক্রিয় মৌল অ্যাস্টাটিন (At) – এই পাঁচটি মৌলকে হ্যালােজেন মৌল বলে।

হ্যালােজেন মৌল গুলির বৈশিষ্ট্য :

  1. এই মৌলগুলি সক্রিয় বলে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না।
  2. হ্যালােজেন মৌলগুলি তীব্র তড়িৎ-ঋণাত্মক।
  3. এদের যােজ্যতা 1।
  4. এদের প্রত্যেকের জারণ ধর্ম আছে।

নামকরণের  কারণ : ‘হ্যালােজেন’  শব্দটির অর্থ লবণ উৎপাদক। গ্রিক শব্দ ‘Hals’ -এর অর্থ লবণ ও ‘gen’-এর অর্থ তৈরি করা। At ছাড়া এই শ্রেণির মৌলগুলি ধাতু বা ধাতু সদৃশ মূলকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লবণ উৎপাদন করে, তাই এদেরকে হ্যালােজেন মৌল বলা হয়।

সুপার হ্যালোজেন :

আধুনিক দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 17 নং শ্রেণিতে অবস্থিত প্রথম হ্যালােজেন মৌল ফ্লওরিন (F)-কে সুপার হ্যালােজেন বলা হয়।

কারণ : ফ্লুওরিনের আকার খুব ছােটো ও তড়িৎ-ঋণাত্মকতা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় ফ্লুওরিন খুব সক্রিয় এবং
অন্যান্য হ্যালােজেন অপেক্ষা রাসায়নিক ধর্মে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তাই ফুওরিনকে সুপার হ্যালােজেন বলা হয়।

নিষ্ক্রিয় গ্যাস (Inert gas) :

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে অবস্থিত শূন্য শ্রেণির বা দীর্ঘ পর্যায়-সারণির 18 নং শ্রেণির হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপটন (Kr), জেনন (Xe) ও রেডন (Rn) – এই ছয়টি মৌলকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস মৌল বলা হয়।

নিষ্ক্রিয় মৌল বা শুন্যযােজী মৌল বলার কারণ : নিষ্ক্রিয় মৌলগুলির সর্ববহিস্থ কক্ষ ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ থাকায় এরা
কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। এজন্য এদের যােজ্যতা শূন্য ধরা হয়। তাই মৌলগুলিকে নিষ্ক্রিয় মৌল বা
শূন্যযােজী মৌল বলে।

সেতু সৌল বলার কারণ : এই মৌলগুলি 17 নং শ্রেণির তীব্র তড়িৎ-ঋণাত্মক হ্যালােজেন মৌল ও পরবর্তী পর্যায়ের 1নং
শ্রেণির তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ক্ষার ধাতুগুলির মাঝে সেতুরূপে সংযােগ স্থাপন করে বলে এদেরকে সেতু মৌল বলা হয়।

 সন্ধিগত সৌল (Transition elements) :

যেসব মৌলের পরমাণুর স্থিতাবস্থায় বা যে-কোনাে স্থায়ী জারণ অবস্থায় সর্ববহিস্থ কক্ষ ও তার আগের কক্ষ ইলেকট্রন দ্বারা
আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে, তাদের সন্ধিগত মৌল বলে।

অবস্থান : আধুনিক দীর্ঘ পর্যায়-সারণিতে 3 নং থেকে 12 নং শ্রেণিতে সন্ধিগত মৌলগুলি অবস্থান করে। সন্ধিগত
মৌলগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রতি ভাগে 10টি করে মৌল থাকে।

  1. প্রথম সন্ধিগত সারি : স্ক্যানডিয়াম (Sc ) থেকে জিঙ্ক (Zn ) পর্যন্ত।
  2. দ্বিতীয় সন্ধিগত সারি : ইট্রিয়াম (Y) থেকে ক্যাডমিয়াম (Cd) পর্যন্ত।
  3. তৃতীয় সন্ধিগত সারি : ল্যান্থানাম (La ), হ্যাফনিয়াম (Hf ) থেকে মার্কারি (Hg) পর্যন্ত।
    যদিও Zn, Cd ও Hg সন্ধিগত মৌল নয়।

সন্ধিগত মৌলের বৈশিষ্ট্য : সন্ধিগত মৌলগুলির অসম্পূর্ণ ইলেকট্রন কক্ষ উপস্থিত থাকায় এদের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য আদর্শ মৌল অপেক্ষা সম্পূর্ণ পৃথক হয়। এদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল –

  1. এই মৌলগুলির একাধিক যােজ্যতা এবং জারণ অবস্থা দেখা যায়। যেমন। আয়রনের যােজ্যতা 2 এবং 3।
  2. এরা রঙিন জটিল যৌগ গঠন করে। যেমন পটাশিয়াম ফেরােসায়ানাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাদামি বর্ণের জটিল
    যৌগ কপার ফেরােসায়ানাইড উৎপন্ন করে।
  3. এই মৌলগুলি প্রত্যেকেই ধাতু, উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট, তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী।
  4. বেশিরভাগ সন্ধিগত মৌল অনুঘটকরূপে কাজ করে।

মুদ্রা ধাতু (Coinage metals) :

কপার (Cu), সিলভার (Ag), গােল্ড (Au) – এই তিনটি ধাতুকে মুদ্রা ধাতু বলা হয়।

নামকরণের কারণ :  প্রাচীনকালে এই ধাতুগুলি মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহার করা হত, তাই এদের এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।

ত্রয়ী মৌল (Triad of elements) :

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণির চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি VIII -এর প্রতি ঘরে তিনটি করে মৌল যথাক্রমে (Fe, C০, Ni), (Ru, Rh, Pd) এবং (Os, Ir, Pt) রাখা হয়েছে। এদেরকে ত্রয়ী মৌল বলা হয়।

নামকরণের কারণ : মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণির মূল উদ্দেশ্য ছিল সমধর্মী মৌলগুলিকে একই শ্রেণিতে স্থান দেওয়া।
চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ের (Fe, Co, Ni), (Ru, Rh, Pd), (Os, Ir, Pt) তিনটি করে মৌলের পারমাণবিক ভর খুব কাছাকাছি
হওয়ায় এবং এদের মধ্যে ধর্মের যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকায় এদেরকে VIII শ্রেণিতে একসঙ্গে রাখা হয়েছে। এইজন্য এই তিনটি করে মৌলগুচ্ছকে এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে।

ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল (Transuranic elements) :

পর্যায়-সারণির সপ্তম পর্যায়ে (f-ব্লকে) অবস্থিত প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌল ইউরেনিয়াম (পারমাণবিক সংখ্যা = 92) পরবর্তী মৌলগুলিকে ইউরেনিয়ামােত্তর মৌল বলা হয়। নেপচুনিয়াম (Np), প্লুটোনিয়াম (Pu), আমেরিসিয়াম (Am), কুরিয়াম (Cm), বার্কেলিয়াম (Bk) ইত্যাদি মৌলগুলি হল ইউরেনিয়ামােত্তর মৌল।

বৈশিষ্ট : 

  1. এই মৌলগুলি পাওয়া যায় না, কৃত্রিমভাবে নিউক্লিয় বিক্রিয়া দ্বারা এদেরকে প্রস্তুত করা হয়েছে, তাই এরা কৃত্রিম মৌল’ নামে পরিচিত।
  2. এই মৌলগুলি তেজস্ক্রিয় ধর্ম প্রদর্শন করে, কারণ এদের নিউক্লিয়াসে নিউট্রন ও প্রােটনের অনুপাত 1.54 অপেক্ষা বেশি হয়।

বিরল মৃত্তিকা মৌল (Rare earth elements) বা ল্যানথানাইড মৌল (Lanthanides):

পর্যায়-সারণির ষষ্ঠ পর্যায়ে ল্যান্থানাম (La)-এর পরবর্তী 14টি মৌলের অর্থাৎ, সিরিয়াম (Ce) থেকে লুটেশিয়াম (Lu) পর্যন্ত মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। এই 14টি মৌলকে মূল পর্যায়-সারণির নীচে একটি আলাদা অনুভূমিক সারিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এদের বলা হয় বিরল মৃত্তিকা মৌল বা ল্যান্থানাইড মৌল।

নামকরণের কারণ : পূর্বে ধারণা ছিল যে, এই সমস্ত মৌলগুলি প্রকৃতিতে খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায়, তাই এদেরকে
বিরল মৃত্তিকা মৌল বলে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : বিরল মৃত্তিকা মৌলগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণেই প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, কিন্তু এই বিরল মৃত্তিকা মৌলগুলি যে লবণরুপে পাওয়া যায় তার মধ্যে অশুদ্ধি হিসেবে অন্যান্য বিরল মৃত্তিকা মৌলগুলি মিশে থাকে। ফলে, এদের পৃথকীকরণ খুবই ব্যয়সাপেক্ষ ও জটিল পদ্ধতি।

উদাহরণ : সিরিয়াম (Ce), ইউরােপিয়াম (Eu), স্যামারিয়াম (Sm) ইত্যাদি।

অ্যাক্টিনাইড মৌল (Actinides) :

আধুনিক পর্যায়-সারণির সপ্তম পর্যায়ের অ্যাকটিনিয়াম (Ac)-এর পরে থােরিয়াম (Th) থেকে লরেন্সিয়াম (Lr) পর্যন্ত 14টি মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে সাদৃশ্য বর্তমান। এদের বলা হয় অ্যাক্টিনাইড মৌল।

নামকরণর কারণ : এই মৌলগুলি অ্যাক্টিনিয়ামের পরে অবস্থান করে, তাই এদের অ্যাক্টিনাইড মৌল বলা হয়।

আরো দেখে নাও :

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Anupam Halder

Site Admin, Technical Manager, Active author of BanglaQuiz.in , Quiz and GK enthusiast , Specialized in Traditional GK

Related Articles

Back to top button