General Knowledge Notes in BengaliHistory Notes

মহাবীর ও জৈন ধর্মের ইতিহাস – তীর্থঙ্কর

History of Jainism

মহাবীর ও জৈন ধর্মের ইতিহাস

জৈনধর্ম প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত অন্যতম ধর্মমত। এই ধর্মের মূল বক্তব্য হল সকল জীবের জন্য শান্তি ও অহিংসার পথ গ্রহণ। যে ব্যক্তি বা আত্মা অন্তরের শত্রুকে জয় করে সর্বোচ্চ অবস্থাপ্রাপ্ত হন তাঁকে জিন (জিতেন্দ্রিয়) আখ্যা দেওয়া হয়।জৈন ধর্মের ইতিহাসে মোট ২৪ জন তীর্থঙ্কর রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ এবং ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর। (মহাবীর ও জৈন ধর্মের ইতিহাস )

জৈন ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম অপেক্ষা অনেক প্রাচীন মনে করা হয়। প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেবের কথা ঋগ্বেদ এবং বায়ু পুরানে  পাওয়া যায়। অরিষ্টনেমির নাম ঋগ্বেদে পাওয়া যায়।

জৈন ধর্মের ২৪জন তীর্থঙ্করের তালিকা 

ক্রমতীর্থঙ্করপ্রতীক
ঋষভদেব  বা আদিনাথষাঁড়
অজিতনাথহাতি
সম্ভবনাথঘোড়া
অভিনন্দন নাথবানর
সুমতিনাথরাজহাঁস
পদ্মপ্রভপদ্ম
সুপার্শ্বনাথস্বস্তিকা
চন্দ্রপ্রভচাঁদ
সুবিধিনাথ স্বামী বা পুষ্পদন্তকুমির
১০শীতলনাথকল্পবৃক্ষ
১১শ্রেয়াংসনাথএকশৃঙ্গ গন্ডার
১২বাসুপুজ্যমহিষ
১৩বিমলনাথবন্য শূকর
১৪অনন্তনাথভাল্লুক /বাজপাখি
১৫ধর্মনাথবজ্রদন্ড
১৬শান্তিনাথহরিন
১৭কুন্থুনাথছাগল
১৮অরনাথমাছ
১৯মল্লিনাথকলস
২০মুনিসুব্রতকচ্ছপ
২১নমিনাথনীলপদ্ম
২২নেমিনাথ/অরিষ্টনেমিশঙ্খ
২৩পার্শ্বনাথসাপ
২৪মহাবীরসিংহ
জৈন ধর্মের ২৪ জন তীর্থঙ্করের তালিকা
  • জৈন ধর্মের প্রকৃত প্রবর্তক হলেন ২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ।
  • জৈন ধর্মের প্রধান প্রবর্তক হলেন ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর।
  • একমাত্র মহিলা তীর্থঙ্কর হলেন  ১৯তম তীর্থঙ্কর মল্লিনাথ ।

পার্শ্বনাথ ( ২৩তম তীর্থঙ্কর )

  • ২৩তম তীর্থঙ্কর এবং জৈন ধর্মের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ।
  • বেনারসের রাজপুত্র ছিলেন।
  • পরবর্তী জীবনে তপস্বী হয়ে যান এবং ঝাড়খণ্ডের পরেশনাথ পাহাড়ে দেহত্যাগ করেন।
  • তিনি চতুর্যাম প্রথার প্রবর্তন করেন।
  • চতুর্যাম প্রথা 
    • অহিংসা
    • সত্যবাদিতা
    • চুরি না করা
    • অনাসক্তি

মহাবীর ( ২৪তম তীর্থঙ্কর )

  • জৈন ধর্মের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা।
  • বিহারের বৈশালীর কুন্দগ্রামে ৫৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ( জৈন কিংবদন্তি অনুসারে ৫৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ) জন্মগ্রহণ করেন

বংশ পরিচয় :

  • পিতা – সিদ্ধার্থ (ইক্ষ্বাকু রাজবংশের রাজা )
  • মাতা – ত্রিশলা (বৈশালীর রাজা চেতকের ভগিনী )
  • পত্নী  – যশোদা
  • কন্যা – প্রিয়দর্শনা
  • জামাতা – জামালি ( মহাবীরের প্রথম শিষ্য )

অন্য নাম : 

  • বাল্য নাম – বর্ধমান (‘যিনি বৃদ্ধি পান, বৃদ্ধিশীল’) । মহাবীরের জন্মের সময় তার রাজ্যের দ্রুত সমৃদ্ধি ঘটছিল বলে তার এই নামকরণ করা হয়।
  • মহাবীর – মহাবীর ছেলেবেলায় একাধিকবার বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। তাই তাকে ‘মহাবীর’ নামে অভিহিত করা হত।
  • জিন– মহাবীরকে ‘জিন’ (‘আসক্তি, অহংকার, লোভ প্রভৃতি অন্তঃপ্রবৃত্তিগুলি যিনি জয় করেছেন’) বা জিতেন্দ্রিয় নামেও চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীকালে ‘জিন’ উপাধিটি ‘তীর্থঙ্কর’ নামের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়।
  • নিগন্থ জ্ঞাতপুত্ত -বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে মহাবীরকে ‘নিগন্থ জ্ঞাতপুত্ত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ‘নিগন্থ’ শব্দের অর্থ ‘যাঁর বন্ধন, পিছুটান বা রজ্জু নেই’। ‘জ্ঞাতপুত্ত’ শব্দটি (‘‘নতসে’র পুত্র’) তার ‘জ্ঞাত’ বা ‘নয়’ (প্রাকৃত) নামক বংশ-নামের দ্যোতক।
  • অন্যান্য নাম – ‘শ্রমণ’ (‘অনুসন্ধানকারী’), Arihant ।

গৃহত্যাগ :

  • ৩০ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর তিনি সত্যের সন্ধানে মাখালি গোসালার সাথে গৃহত্যাগ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মতপার্থ্যকের জন্য গোসালা মহাবিরকে ত্যাগ করে আজিবক সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেন।
  • তিনি কঠোর তপস্যা করেন, অশোক বৃক্ষের নিচে ধ্যান করেন এবং পোষাকপরিচ্ছদ সব পরিত্যাগ করেন।
  • ৪২ বছর বয়সে, ঋজুপালিকা নদীর তীরে জম্ভিকগ্রামে একটি শাল গাছের নিচে তিনি কৈবল্য ( Supreme Knowledge ) লাভ করেন। জৈন ধর্মগ্রন্থ উত্তর-পুরাণহরিবংশ-পুরাণ-এ এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
  • আচারাঙ্গ সূত্র মতে, মহাবীর ছিলেন সর্বদর্শী। সূত্রকৃতাঙ্গ গ্রন্থে ‘সর্বজ্ঞতা’ ধারণাটির ব্যাখ্যা এবং মহাবীরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির বিবরণ পাওয়া যায়।

ধর্মপ্রচার :

  • তিনি প্রথম ধর্মপ্রচার করেন পাবাতে ১১জন শিষ্যের কাছে যারা গান্ধার নাম পরিচিত ছিলেন।
  • এই ১১জন শিষ্যের মধ্যে একমাত্র সুধর্ম বেঁচে ছিলেন মহাবীরের মৃত্যুর পর।
  • এর পর তিনি প্রায় ৩০ বছর সারা ভারত পরিভ্রমণ করেন এবং নিজের দর্শন শিক্ষা দেন।
  • জৈন বিশ্বাস অনুসারে, মহাবীরের ১৪,০০০ সন্ন্যাসী, ৩৬,০০০ সন্ন্যাসিনী, ১৫৯,০০০ শ্রাবক (গৃহস্থ) ও ৩১৮,০০০ শ্রাবিকা (গৃহস্থ নারী) অনুগামী ছিল।
  • তার অনুগামী রাজন্যবর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মগধের রাজা শ্রেণিকা (যিনি বিম্বিসার নামে পরিচিত ছিলেন), অঙ্গের রাজা কুণিক ও বিদেহের রাজা চেতক।

মোক্ষ (নির্বাণ)

  • জৈনরা বিশ্বাস করেন, ৭২ বছর বয়সে মহাবীর মোক্ষ (জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি) লাভ করেন এবং তার আত্মা এখন ‘সিদ্ধশিলা’য় (মুক্ত আত্মাদের স্থান) অবস্থান করছে।
  • জৈন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, মহাবীর পাবাপুরীতে দেহত্যাগ করেন।
  • প্রবচনসার অনুসারে, মৃত্যুর পরে মহাবীরের শুধু নখ আর চুলই শুধু পড়ে থাকে। অবশিষ্ট শরীর কর্পূরের মতো হাওয়ায় বিলীন হয়ে যায়।
  • মহাবীর যেখানে মোক্ষ লাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেখানে বর্তমানে জল মন্দির নামে একটি জৈন মন্দির রয়েছে।

জৈনধর্মের ত্রিরত্ন

  • সম্যক শ্রদ্ধা বা বিশ্বাস ( Right Faith )
  • সম্যক জ্ঞান ( Right Knowledge )
  • সম্যক কর্ম ( Right Action/Conduct )

পঞ্চমহাব্রত

মহাবীর চতুর্যামের ( পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত ) যুক্ত করে সূচিত বা ব্রহ্মচর্য (Chasity ) যা একত্রে পঞ্চমহাব্রত নামে পরিচিত।

জৈন ধর্মের মূল কথা

  • বেদ ও বেদের রীতির বিরোধিতা
  • ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা
  • কর্ম ও আত্মার শুদ্ধিতে বিশ্বাস
  • সকলের সমান অধিকার

জৈনধর্মের ভাগ

  1. শ্বেতাম্বর : 
    • পার্শ্বনাথের ন্যায় স্বেতবস্ত্র পরিধান করতো।
    • স্থুলভদ্র শ্বেতাম্বর ছিলেন\
  2. দিগম্বর :
    • মহাবীরের ন্যায় নগ্নতাকে গ্রহণ করেছিল।
    • ভদ্রবাহু দিগম্বর ছিলেন।

জৈন ধর্মসম্মেলন

প্রথমদ্বিতীয়
পাটলীপুত্রতে হয়েছিল। ৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সভাপতি ছিলেন স্থুলভদ্র শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর -এই দুই সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়বল্লভীতে হয়েছিল ৫১২ খ্রীস্টাব্দতে সভাপতি ছিলেন দেবার্ধি জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ দ্বাদশ অঙ্গের সংকলন হয়
জৈন ধর্মসভা

জৈন সাহিত্য

  • জৈন সাহিত্যগুলি প্রধানত প্রাকৃত বা অর্ধমাগধী প্রাকৃত ভাষায় রচিত ছিল।
  • সাহিত্যগুলি নিম্নলিখিত ভাগে বিভক্ত ছিল
    • দ্বাদশ অঙ্গ
    • ১২ উপাঙ্গ
    • ১০ পরিকরনাস
    • ৬ ছেদাসূত্র
    • ৪ মূলসূত্র
    • ২ সূত্রগ্রন্থ
  • মহাবীরের মূল ধর্মোপদেশ ১৪ টি খন্ডে সংরক্ষিত এবং দ্বাদশ অঙ্গের একটি ভাগ।

জৈন স্থাপত্য

  • ওড়িশা – হাতিগুম্ফা,  বাঘগুম্ফা, উদয়গিরি,  খন্ডগিরি।
  • গুজরাট – গিরনার ও পালিতানা মন্দির।
  • বিহার – পাবাপুরী ও রাজগৃহ
  • কর্ণাটক – গোমতেশ্বর, বাহুবলি, শ্রবণগোলা
  • রাজস্থান – মাউন্ট  আবুর দিলওয়ারা মন্দির, বিমলাভাসাহী ও তেজপুর মন্দির।

জৈন রাজন্যবর্গ

  • উত্তর ভারত – নন্দ; বিম্বিসার, অজাতশত্রু, উদয়িন (হর্যঙ্ক ); চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, বিন্দুসার (মৌর্য ); প্রাদয়েতা (অবন্তী ); খরবেল (কলিঙ্গ )
  • দক্ষিণ ভারত – গঙ্গা বংশ, কাদম্ব বংশ, অমোঘবর্ষ (রাষ্ট্রকূট ), জয়সিংহ (চালুক্য ), কুমারপাল (সোলাঙ্কি)

আরো দেখে নাও :

গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম | Ancient Indian History

ঐতিহাসিক সমাজ-সমিতি ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা

ভারতে আগত বিদেশী পর্যটকগণ | List of Foreign Travelers

ষোড়শ মহাজন পদ

History of Maratha Empire | মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস | PDF

শিখ সাম্রাজ্যের ইতিহাস

ভারতের ইতিহাস – ৩০০টি MCQ ( PDF )

মহাবীর ও জৈন ধর্মের ইতিহাস – প্রশ্ন ও উত্তর 

জৈন ধর্মের প্রথম তীর্থঙ্কর কে ?

ঋষভদেব  বা আদিনাথ

জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর কে ?

মহাবীর

জৈন ধর্মের মূলনীতি কি ?

অহিংসা

জৈন ধর্মের ত্রিরত্ন কি ?

সম্যক শ্রদ্ধা বা বিশ্বাস ( Right Faith )
সম্যক জ্ঞান ( Right Knowledge )
সম্যক কর্ম ( Right Action/Conduct )

জৈন ধর্মের প্রধান প্রচারক কে কি বলা হত ?

তীর্থঙ্কর

জৈন ধর্ম গ্রন্থের নাম কি ?

দ্বাদশ অঙ্গ

জৈন ধর্মগ্রন্থ কোন ভাষায় রচিত ?

প্রাকৃত বা অর্ধমাগধী প্রাকৃত

জ্ঞান অর্জনের আগে মহাবীরের নাম কী ছিল ?

বর্ধমান

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button