General Knowledge Notes in Bengali

International Monetary Fund – আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF )

International Monetary Fund (IMF) : আজকে আমরা আলোচনা করবো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF ) নিয়ে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যেমন – UPSC, WBCS, WBP, WBPSC, CGL, CHSL, RRB ইত্যাদির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক এটি।

একনজরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

IMF At a Glance
IMF At a Glance
সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল
প্রতিষ্ঠা ২৭শে ডিসেম্বর, ১৯৪৫
ধরণ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান
সফর দপ্তর ওয়াশিংটন, ডি.সি.
সদস্যপদ১৯০টি দেশ
মহাপরিচালকক্রিস্তালিনা জর্জিয়েভা
প্রধান উপ-মহাপরিচালকগীতা গোপীনাথ
ওয়েবসাইটClick Here
একনজরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল
দেখে নাও : International Court of Justice – আন্তর্জাতিক বিচারালয়

গঠনের পেক্ষাপট

  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে অর্থনৈতিক অবক্ষয়, অনিশ্চয়তা ও সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই অবস্থা আরও জটিল ও ভয়াবহ করে তুলেছিল ।
  • যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের অর্থনৈতিক চেহারা কেমন হবে, কীভাবে আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে নতুন বিশ্ব, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি কোন্ পথে চলবে, এর চালিকাশক্তিই বা কে হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করেন তৎকালীন মার্কিন বাণিজ্য সচিব হেনরি মর্গেনথাউ।
  • এই সম্মেলন হয় ১৯৪৪ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রেটন উডস-এর মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে।
  • সারা বিশ্বের ৪৪টি দেশের ৭০০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগদান করলেন।
  • এই সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৪৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ১৯৪৭ সালের ১ মার্চ থেকে এই সংস্থার কাজ শুরু হয়।
দেখে নাও : রাষ্ট্রপুঞ্জ | জাতিসংঘ | সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ | United Nation

উদ্দেশ্য

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • এই সংস্থার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল আর্থিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা।
  • আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যাতে সদস্যরাষ্ট্রগুলির সর্বাধিক কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটে।
  • সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে স্থিতিশীল বিনিময় ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য হ্রাস রোধ করা।
  • সদস্যরাষ্ট্রগুলির উৎপাদনশীল সম্পদ বৃদ্ধি করা।
  • বিশ্ববাণিজ্যে বৈদেশিক বিনিময়ের ওপর থেকে বাধানিষেধ প্রত্যাহার করা।
  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লেনদেনের ভারসাম্যহীনতাকে হ্রাস করা। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ দেবে।
  • সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আদান-প্রদানের জন্য চলতি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির জায়গায় বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা গঠন করা।
  • ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা ; কারিগরি সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে সদস্যরাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন ঘটানো।
  • অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল সদস্যরাষ্ট্রগুলিতে পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা যাতে তাদের কাঁচামালের সদ্ব্যবহার ঘটে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
দেখে নাও : SAARC – সার্ক – দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা

গঠন

পরিচালক পর্ষদ (Board of Governors), কার্যনির্বাহী পরিচালকমণ্ডলী (Board of Executive Directors), প্রধান পরিচালক (Managing Director) ও সচিবালয় (Secretariat) প্রধানত এই চারটি সংস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার গঠিত।
পরিচালক পর্ষদ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের সকল সদস্যকে নিয়ে। এই পর্ষদ হল অর্থভাণ্ডারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এর হাতেই অর্থভাণ্ডারের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। পরিচালক পর্ষদের বৈঠক বছরে একবার মাত্র অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালক পর্ষদের সকল সদস্যের ভোটাধিকার সমান নয়। সদস্যরাষ্ট্রের দেয় চাঁদার পরিমাণের অনুপাতে ভোটের পরিমাণ স্থির হয়। অর্থাৎ যে সদস্যরাষ্ট্রের চাঁদার অঙ্ক বেশি, তার ভোট-সংখ্যাও অধিক। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি চাঁদা দেয় বলে এর ভোটসংখ্যাও সবচেয়ে বেশি।

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের দৈনন্দিন কার্যাবলি পরিচালনার জন্য একটি কার্যনির্বাহী পরিচালকমণ্ডলী রয়েছে। এর সদস্যসংখ্যা ২২ জন। এই কার্যনির্বাহী পরিচালকমণ্ডলী পরিচালক পর্ষদ কর্তৃক ন্যস্ত যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করে। প্রতি সপ্তাহে এই পরিচালকমণ্ডলীর বৈঠক বসে। সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেন। তাঁর কাজ হল পরিচালকমণ্ডলীর সাধারণ কাজকর্ম পরিচালনা করা এবং কর্মচারীদের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করা।

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের একটি সচিবালয় আছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়ে এই সচিবালয় গঠিত। এছাড়া আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারে মন্ত্রী পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটি ও গোষ্ঠী গঠন করার ব্যবস্থা আছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে সম্পদ স্থানান্তরকরণের বিষয়ে পরামর্শ দানের জন্য ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার এবং বিশ্বব্যাঙ্ক একযোগে একটি ‘উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করে।

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের সদর দপ্তর ওয়াশিংটনে অবস্থিত। শুরতে এর সদস্যসংখ্যা ছিল ৫০। বর্তমানে
এর সদস্য সংখ্যা ১৯০তে দাঁড়িয়েছে।

দেখে নাও : UNESCO – ইউনেস্কো – জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা

কার্যাবলি

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের অন্যতম প্রধান কাজ হল সদস্যরাষ্ট্রগুলির বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বল্পকালীন ভারসাম্যহীনতা দূর করা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিস্তার ও স্থিতিশীল বিনিময় ব্যবস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার উদ্যোগী হয়৷ এছাড়া এই সংস্থা বিশ্বের বাজারে বিভিন্ন মুদ্রার বিনিময় হারের মধ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষা করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হারে মুদ্রার মূল্য হ্রাস প্রতিরোধ করে। সদস্যরাষ্ট্রগুলির উৎপাদনশীল সম্পদের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার সাহায্য করে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। সেটি হল সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। অর্থভাণ্ডারের সঙ্গে জড়িত থাকেন বিশ্বের অনেক বড়ো মাপের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। এঁদের পরামর্শ সদস্যরাষ্ট্রগুলির অর্থনীতিতে স্থিতাবস্থা আনতে সাহায্য করে।

দেখে নাও : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর ও প্রতিষ্ঠা সাল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের ভূমিকা

বিশ্বের আর্থিক নিয়মশৃঙ্খলা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা IMF-এর প্রতিষ্ঠা যুগান্তকারী ঘটনা। IMF তার সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে নিম্নলিখিতভাবে সাহায্য করে থাকে :

  • আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার এমন একটি মজুত অর্থভাণ্ডার সৃষ্টি করেছে, যেখান থেকে সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে বৈদেশিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করা হয় ।
  • আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে বহুদেশীয় বাণিজ্য ও লেনদেন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট উৎসাহ জুগিয়েছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সদস্যরাষ্ট্রগুলি এখনও কিছু কিছু নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে চলেছে এটা সত্য, কিন্তু আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে এইসব নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি উঠে যাবে এবং অবাধ বাণিজ্যের পথ প্রসারিত হবে।
  • আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ঋণদানের মাধ্যমে সদস্যরাষ্ট্রগুলির লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা দূর করে এবং ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে।
  • বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনিময় হারে স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অর্থভাণ্ডারের ভূমিকা কম নয়।
  • অর্থভাণ্ডার সৃষ্টির পূর্বে বিনিময় হার যেভাবে ওঠানামা করত, অর্থভাণ্ডার সৃষ্টির পর থেকে তার অবসান ঘটেছে। এই স্থিতাবস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে।
  • পূর্বে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাতো। এতে আন্তর্দেশীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিক্ততা সৃষ্টি হত। অর্থভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথাটির অবসান ঘটেছে, কারণ অর্থভাণ্ডারের অনুমতি না নিয়ে কোনো সদস্যরাষ্ট্র তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাতে পারে না।
  • আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার তার সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে উপযুক্ত বিনিময় হারে বিদেশি মুদ্রা ক্রয় করতে সাহায্য করে।
  • অর্থভাণ্ডার সদস্যরাষ্ট্রগুলিকে বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে।
  • আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল আন্তর্জাতিক স্বর্ণ মান (International
  • Gold Standard) সৃষ্টি। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার আন্তর্জাতিক মান নির্ণয়ে কোনো অসুবিধা হয় না।
  • এইসব সুবিধার জন্য অধ্যাপক হাম (Halm) আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারকে “আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক “(International Reserve Bank) বলে গণ্য করেছেন।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button