গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস – Gupta dynasty – PDF
Gupta dynasty - History of the Gupta Empire
গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস
গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আজ আমরা এই আর্টিকেলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস , বিভিন্ন গুপ্ত রাজাদের কৃতিত্ব, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করবো ।
- ভারতের ইতিহাসে গুপ্ত বংশ “Classical Age” বা “Golden Age” নামে পরিচিত ছিল।
- চীনা পরিব্রাজক ইৎ সিং -এর বিবরণী থেকে জানা যায় গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন – শ্রীগুপ্ত ।
- গুপ্ত শাসকদের শক্তির মূল উৎস ছিল ঘোড়া ( কুষাণদের কাছ থেকে শেখা )।
- শ্রীগুপ্তের পরে তার পুত্র ঘটোৎকচ রাজত্ব করেছিল ।
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ( ৩১৯ – ৩৩৪ খ্রিস্টাব্দ )
- ঘটোৎকচ গুপ্ত প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।
- তিনি মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেন এবং তার রাজধানী ছিল – পাটলিপুত্র।
- তিনি বৈশালীর লিচ্ছবী রাজকন্যা কুমারদেবীকে বিবাহ করেন।
- ৩১৯-৩২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি গুপ্তাব্দ চালু করেন।
সমুদ্রগুপ্ত ( ৩৩৫ – ৩৮০ খ্রিস্টাব্দ )
- চন্দ্রগুপ্তের লিচ্ছবী মহিষী কুমারদেবীর পুত্র।
- ভিনসেন্ট স্মিথ সমুদ্রগুপ্তকে “ভারতের নেপোলিয়ন” বলে অভিহিত করেছেন।
- এরানলিপি ও তার সভাকবি হরিষেনের এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
- প্রাচীন ভারতে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি তিনিই চালু করেছিলেন ।
উপাধি –
- কবিরাজ বা King of Poets ( প্রয়াগ প্রশস্তি )
- পরম ভগবৎ ( নালন্দা তাম্র লিপি )
- পরাক্রমাঙ্ক
- সর্বরাজোছেত্তা
- বিক্রমাঙ্ক বা বিক্রম
- একরাট
- উত্তর ভারতে তিনি অসুরবিজয় নীতি এবং সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
- দক্ষিণভারতে তিনি ধর্মবিজয়ের নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
- তার সাম্রাজ্য পূর্বে বহ্মপুত্র, দক্ষিণে নর্মদা, উত্তরে হিমালয় ও কাশ্মীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
- তিনি ছিল ব্রাহ্মন্য় ধর্মালম্বী।
- সিংহলরাজ মেঘবর্মনকে তিনি বোধগয়ায় বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেন।
- বৌদ্ধপন্ডিত বসুবন্ধু ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের মন্ত্রী।
- বিভিন্ন মুদ্রায় সমুদ্রগুপ্তকে বিনাবাদনরত অবস্থায় দেখা যায়।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ( ৩৮০ – ৪১৪ খ্রিস্টাব্দ )
পিতা : সমুদ্রগুপ্ত | মাতা : দত্তা বা দত্তাদেবী |
স্ত্রী : ধ্রুবদেবী ও কুবেরনাগ | পুত্র : কুমারগুপ্ত ও গোবিন্দগুপ্ত |
কন্যা : প্রভাবতী | রাজধানী : পাটলিপুট ও উজ্জয়নী |
- বিশাখদত্তের “দেবী চন্দ্রগুপ্তম” নাটক অনুসারে সমুদ্রগুপ্তের আরেক পুত্র রামগুপ্তকে হত্যা করে তার পত্নী ধ্রুবদেবীকে বিবাহ করে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে বসেন।
- রামগুপ্ত ছিলেন একমাত্র গুপ্ত শাসক যিনি তাম্রমুদ্রা চালু করেছিলেন।
- রামগুপ্ত কাপুরুষ ছিলেন এবং নিজ পত্নীকে শকদের হাতে তুলে দেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছদ্মবেশে শক শিবিরে ঢুকে শক শাসককে হত্যা করে ধ্রুবদেবীকে উদ্ধার করেন।
- শকদের বিতাড়িত করে বিজয় সম্মেলনে তিনি গুপ্তবংশের প্রথম রৌপ্য মুদ্রা চালু করেন এবং শকারি ও বিক্রমাদিত্য উপাধি গ্রহণ করেন।
- উপাধি –
- বিক্রমাদিত্য
- সিংহচন্দ্র
- নরেন্দ্রচন্দ্র
- দেবরাজ
- দেবশ্রী
- সাহসাঙ্ক
- শকারি
- তার রাজসভায় নবরত্ন বা ন’জন পন্ডিত ছিলেন।
- নবরত্ন –
- কালিদাস – ঋতুসংহার, মেঘদুত, কুমারসম্ভব, রঘুবংশম, মালবিকাগ্নিমিত্রম, বিক্রমবংশম, অভিজ্ঞানম শকুন্তলম।
- অমরসিংহ – অমরসিংহম।
- ধন্বন্তরি – নবনাটিকম ( ওষুধের বই )।
- বরাহমিহির – পঞ্চসিদ্ধান্তিকা, বৃহৎ সংহিতা, বৃহৎ জাতক, লঘু জাতক।
- বররুচি – ভর্তিকা, প্রাকৃত প্রকাশ ( প্রাকৃতের প্রথম ব্যাকরণ বই )
- ঘটকপর
- ক্ষপনক
- বেতালভট্ট
- শঙ্কু
- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারতে আসেন।
- ফা-হিয়েন এর লেখা বইয়ের নাম “ফো কিও কিং” ।
- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত প্রবর্তিত স্বর্ণমুদ্রার নাম – “দিনার”। তার মুদ্রাতে চৈত্যের পরিবর্তে গরুড়ের প্রতিকৃতি দেখা যায়। তিনি নয় প্রকার তামার মুদ্রাও চালু করেছিলেন।
- দিল্লির লৌহ স্তম্ভে বর্ণিত “চন্দ্র” আসলে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন।
- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের প্রধান বন্দরগুলি ছিল – পূর্ব উপকূলে তাম্রলিপ্ত ও পশ্চিম উপকূলে সোপারা।
- ৪১৪ খ্রিস্টাব্দতে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যু হয়।
কুমারগুপ্ত ( ৪১৪ – ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দ )
- পিতা – দ্বিতীয় ছন্দগুপ্ত , মাতা – ধ্রুবদেবী
- উপাধি –
- মহেন্দ্রাদিত্য
- মহেন্দ্র সিংহ
- মহেন্দ্র কল্প
- অশ্বমেধ মহেন্দ্র
- কুমারগুপ্ত কার্তিকের উপাসক ছিলেন।
- তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
- সমুদ্রগুপ্তের মতো কুমারগুপ্তও অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন।
স্কন্ধগুপ্ত ( ৪৫৫ – ৪৬৭ খ্রিস্টাব্দ )
- গুপ্ত বংশের শেষ পরাক্রান্ত সম্রাট ছিলেন স্কন্ধগুপ্ত।
- তিনি ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মালম্বী।
- তিনি হুন আক্রমণ প্রতিরোধ করেন এবং “ভারতের রক্ষাকারী সম্রাট” নামে পরিচিত।
- ভিতারি স্তম্ভ লিপি অনুযায়ি হুনদের হারানোর পর তিনি বিক্রমাদিত্য উপাধি নেন ।
- উপাধি –
- কর্মাদিত্য
- পরম ভগবৎ
- শক্রপম
- রমেশচন্দ্র মজুমদার স্কন্ধগুপ্তকে “ভারতের রক্ষাকারী” বলে অভিহিত করেছেন।
- আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে স্কন্ধগুপ্তকে “শ্রেষ্ঠ ন্যায়সম্পন্ন নিরপেক্ষ বিচারক” বলা হয়েছে
- গুপ্ত সাম্রাজ্যের শেষ রাজা ছিলেন – জীবিত গুপ্ত ( কোথাও কোথাও বিষ্ণুগুপ্তকেও শেষ রাজা হিসেবে ধরা হয় )
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ
- যেকোনো সাম্রাজ্যের বা রাজবংশের ভিত্তির মূল স্তম্ভ হলো সামরিক ও প্রাশাসনিক কাজে দক্ষ রাজা। কিন্তু স্কন্দগুপ্তের পরবর্তী গুপ্তরাজাদের সেই যোগ্যতা ছিল না।
- স্কন্দগুপ্তের পরবর্তীকালে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে অন্তর্কলহ শুরু হয় যা গুপ্ত সাম্রাজ্য ভেতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছিলো।
- প্রাদেশিক শাসক ও সামন্ত প্রভুরা এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করেন । ফলে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রবণতা শক্তি সঞ্চয় হাতে থাকে । কাথিয়াবাড়ের শাসনকর্তা বুধগুপ্ত মহারাজ উপাধি ধারণ করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে শুরু করেন । দক্ষিণ কোশল ও নর্মদা অঞ্চলের রাজারা নামে মাত্র গুপ্ত সম্রাটের অধীনে ছিলেন । বাংলাও স্বাধীন হয়ে যায় ।
- পরবর্তী গুপ্ত সম্রাটরা সামরিক শক্তিকে অবহেলা করে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে অহিংস নীতি গ্রহণ করেন । ফলে হুনরা যখন আক্রমণ করে, তখন সেই আক্রমণ প্রতিহত করার মত ক্ষমতা আর তাদের ছিল না ।
- নানা কারণে গুপ্তযুগে বহির্বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়। ফলে বিদেশ থেকে যে বিপুল পরিমান আয় হতো তাতে ঘাটতি দেখা যায়। অর্থনৈতিক সমস্যা শুরু হয়। রাজস্ব ব্যবস্থা ভেঙে পরে। মুদ্রা ব্যবস্থার ক্রমাবনতি দেখা দেয়।
- সাম্রাজ্যের এই অবস্থায় বৈদেশিক একরকম গুপ্ত সাম্রাজ্যের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয় ।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের কিছু বিখ্যাত শিলালিপি / স্তম্ভলিপি
গুপ্ত সম্রাট | শিলালিপি / স্তম্ভলিপি |
---|---|
সমুদ্রগুপ্ত | প্রয়াগ বা এলাহাবাদ প্রশস্তি ইরান লিপি নালন্দা তাম্রলিপি |
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত | দিল্লির মেহেরৌলির লৌহ স্তম্ভ |
স্কন্ধগুপ্ত | জুনাগড় শিলালিপি ভিতারি স্তম্ভ লিপি ইন্দোর শিলালিপি |
বুধগুপ্ত | পাহাড়পুর তাম্র প্লেট |
গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিভিন্ন ধরণের কর
- ভাগ ( Bhaga ) – উৎপন্ন শস্যের ১/৬ ভাগ রাজাকে দিতে হতো।
- ভোগ ( Bhoga ) – গ্রামবাসীদের মাঝে মধ্যেই রাজাকে ফল, ফুল, কাঠ পাঠাতে হতো।
- বলি ( Bali ) – কেউ নিজে থেকে রাজাকে কিছু দিলে।
- উপরিকা ( Uparika ) – অতিরিক্ত কর যেটা সবকিছুর ওপরে দিতে হতো।
অতিরিক্ত কিছু তথ্য
- উইলিয়াম জোন্স মনুস্মৃতিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং নাম দেন – “Institutes of Hindoo Laws”
- অভিজ্ঞান শকুন্তলম বইটিকেও উইলিয়াম জোন্স ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন।
- কালিদাস ভারতের সেক্সপিয়ার নামে পরিচিত।
- কামসূত্র হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম – Book on Sex .
- মৃচ্ছকটিকম হলো একটি প্রেমের গল্প যার প্রধান চরিত্র চারুদত্ত।
- ব্রহ্মসিদ্ধান্ত গ্রন্থটিকে আরবী ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় – Sind Hind .
- মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদ জেলার গুহাচিত্রগুলি গুপ্ত যুগের।
গুপ্ত সাম্রাজ্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উক্তি
“Skandagupta may well go down in history as the Savior of India.”
— R. C. Majumder
“The Huna invasion was not the sole, or perhaps even the principal cause of the downfall of the Gupta Empire.”
— R. C. Majumder
“The Gupta period is in the annals of Classical India almost what the Periclean age is in the history of Greece.”
— Barnett
“The Gupta period is called the Golden Age of ancient India.”
— R. S. Sharma
Download in PDF Format :
- File Name : গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস
- File Size : 197 KB
- No. of Pages : 06
- Language : Bengali
- Subject : History
আরো দেখে নাও :
গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম | Ancient Indian History
জৈন ধর্মের ইতিহাস – তীর্থঙ্কর – মহাবীর
ষোড়শ মহাজনপদ নাম, রাজধানী ও বর্তমান অবস্থান
ভারতে আগত বিদেশী পর্যটকগণ | List of Foreign Travelers
History of Maratha Empire | মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস | PDF
সিপাহী বিদ্রোহ ( Note, Video – MCQ, PDF )
To check our latest Posts - Click Here
khub valo
ধন্যবাদ
খুব ভালো হয়েছে স্যার
Thank you