History NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

তেভাগা আন্দোলন টিকা – Tebhaga Movement

Tebhaga Movement

তেভাগা আন্দোলন – Tebhaga Movement

তেভাগা আন্দোলন : আজ আমরা জেনে নেবো ব্রিটিশ শাসন কালের কৃষক আন্দোলনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় তেভাগা আন্দোলন (Tebhaga Movement ) সম্পর্কে। 

আন্দোলনের সময়কাল :

তেভাগা আন্দোলন ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৭ সাল অবধি চলেছিল। 

সূচনাস্থান : 

উত্তর-পশ্চিম দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত আটওয়ারি থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামে স্থানীয় কৃষকদের দ্বারা এই আন্দোলনের সূচনা হয়। 

আন্দোলনের নেতা :

  •  হাজী মোহাম্মদ দানেশ-কে এই আন্দোলন জনক বলা হয়। 
  • তেভাগা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতা নেত্রীরা ছিলেন ভবানী সেন, সমর গাঙ্গুলী, বুড়িমা, বিমলা মন্ডল, চারু মজুমদার, ইলা মিত্র, অবনী রায়, গণেশ দাস, সুবোধ রায় প্রমুখেরা।  
  • এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহিলা নেত্রী ছিলেন ইলা মিত্র। 

আন্দোলনের মূল দাবি :

  • মোট উৎপন্ন ফসলের ৩ ভাগের ২ ভাগ ভূমিহীন-চাষীদের বা ভাগ চাষীদের দিতে হবে ও ১ ভাগ নেবে জমির মালিক। 
  • জমির মালিকদের কাছ থেকে ধার নেওয়া ধানের ওপর সুদ আরোপ করা চলবেনা। 
  • রশিদ ছাড়া মালিকদের কোনো ধান দেওয়া হবেনা। 
  • চাষযোগ্য পতিত জমিতে চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • চাষ করা ধান (ফসল) উঠবে ভাগচাষীদের ঘরে। 

তেভাগা আন্দোলনের কারণ :

  • গরিব ভাগচাষীরা জোতদারদের থেকে ভাড়া নেওয়া জমিতে চাষাবাদ করতো। জোতদার বা জমির মালিকরা উৎপন্ন ফসলের (ধান) বেশির ভাগটাই নিয়ে নিতো। এবং খেটে চাষ করা ভাগচাষীদের এতো কম ধান দেওয়া হতো যে তারা নিজের পরিবার খাওয়াতে পারতোনা। দিন দিন তাই ভাগচাষীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পরে, এবং তারা আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। 
  • জমিদার, জোতদাররা যখন ইচ্ছা ভাগচাষীদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে দিতো এবং তারা জীবিকাহীন হয়ে পড়তো। তাদের জীবন ও জীবিকার কোনো মূল্য ছিলোনা। অনেক সময় ফসল হয়ে যাওয়ার পর এইসব ভাগচাষীদের উচ্ছেদ করা হতো যার ফলে এতো কষ্ট করে ফসল ফোলানোর পরেও তারা কিছু পেতোনা। 
  • ১৯৩৬ সালে সারা ভারত কৃষক সভা গঠিত হয় ও ১৯৩৭ সালে ফজলুল হক-এর নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি সরকার গঠিত হয়। এই পার্টির প্রচেষ্টায় তৎকালীন সময়ে প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধিত হয় যার ফলে ঋণের উপর চড়া সুদ কমে। এই সমস্ত কার্যকলাপ ভাগ চাষীদের উৎসাহিত করেছিল। পরে এই সর্বভারতীয় কিষান সভা-র নেতৃত্বেই ভাগচাষীরা “জমি যার লাঙ্গল তার” ডাক দিয়ে তেভাগা আন্দোলন শুরু করে। 
  • ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে বিশাল দুর্ভিক্ষ দেখা যায়, বহু ভাগচাষীদের জমি থেকে উৎখাত করা হয় ফলে অনেকে মজুরে রূপান্তরিত হওয়া শুরু করে, অনেক ছোট খাটো কৃষকেরা তাদের জমি জায়গা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। ভাগচাষীদের জীবন অসহায় হয়ে পড়ে এবং তারা আন্দোলের পথ বেঁচে নেয়। 

তেভাগা আন্দোলনের সূচনা :

  • ১৯৪৬ সালে কৃষ্ণবিনোদ রায়ের সভাপতিত্বে পূর্ববাংলার খুলনা জেলার এক সম্মেলনে কিছু কর্মসূচি গৃহীত হয়। এই কর্মসূচিরই অংশ হিসাবে শুরু হয় তেভাগা আন্দোলন। 
  • পশ্চিম বাংলায় গজেন মালি নামের এক কৃষক নেতার নেতৃত্বে কাকদ্বীপের বুধখালীতে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। 

তেভাগা আন্দোলনের ফলাফল / গুরুত্ব :

  • আন্দোলনের এতো তীব্রতা দেখে তৎকালীন সরকার এক অর্ডিন্যান্স জারি করে ও তেভাগাদের দাবি মেনে নেয়। 
  • এই অর্ডিন্যান্স এ ভাগচাষীদের জমি থেকে যখন তখন উৎখাত রোধ হয়।
  • হরে কৃষ্ণ কোনার-এর নেতৃত্বে ধনী জমিদার দের কাছ থেকে ল্যান্ড সিলিং ল (অতিরিক্ত জমি থাকলে বাজেয়াপ্তকরণ) এর অধীনে মোট প্রায় ৪০০০ বর্গ কিমির জমি বাজেয়াপ্ত করা হয় যা তার নেতৃত্বে ‘বেনামি’ জমি হিসাবে রাজ্যের সম্পদ হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। 
  • পরবর্তীকালে, বিনয় চৌধুরীর নেতৃত্বে, এই জমিগুলি ২৪ লক্ষ ভূমিহীন ও দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। ফলে ভাগচাষীদের সংখ্যা অনেকটা কমে। 

মূল্যায়ন :

যাই হোক এই কৃষক আন্দোলন মোটামোটি স্বার্থক ছিল কিন্তু অনেক এলাকায় ব্রিটিশদের দমননীতির কারণে এই আন্দোলনে প্রচুর ভাগচাষী, আদিবাসীরা প্রাণ হারায়। সর্বোপরি বলা যায় গরিব ভাগচাষীদের রক্ত সংগ্রামে লেখা এই আন্দোলন ইতিহাসে চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে। 

আরও দেখে নাও :

আইন অমান্য আন্দোলন – Civil Disobedience Movement

ভারত ছাড়ো আন্দোলন – Quit India Movement

ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ / আন্দোলন / বৈপ্লবিক ঘটনাসমূহ ও নেতৃবৃন্দ

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button