NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

ভিটামিন – উৎস – রাসায়নিক নাম – অভাবজনিত রোগ – পুষ্টিগত গুরুত্ব

Vitamins

ভিটামিন – উৎস – রাসায়নিক নাম – অভাবজনিত রোগ – পুষ্টিগত গুরুত্ব

আজকে আমরা আলোচনা করবো জীবনবিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ভিটামিন নিয়ে। আমরা বিস্তারিত জেনে নেবো ভিটামিন – উৎস – রাসায়নিক নাম – অভাবজনিত রোগ – পুষ্টিগত গুরুত্ব নিয়ে। বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ তালিকা, ভিটামিনের পুষ্টিগত গুরুত্ব, ভিটামিনের রাসায়নিক নাম, ভিটামিনের উৎস প্রভৃতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে।

ভিটামিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও কি ধরণের প্রশ্ন ভিটামিন থেকে আসে জানতে নিচের ভিডিওটি দেখে নাও ।

ভিটামিনের আবিষ্কার

  • ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী লুলিন লক্ষ্য করেন যে উপযুক্ত পরিমানে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, জল ও খনিজ লবন গ্রহণ করেও জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি সম্ভব হয় না এবং কিছুদিনের মধ্যেই অপুষ্টিজনিত রোগে জীবের মৃত্যু হয়। সুতরাং জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য এক বিশেষ ধরণের খাদ্য-উপাদানের প্রয়োজন হয়।
  • বিজ্ঞানী হপকিন্স এই বিশেষ ধরণের খাদ্য উপাদানকে “অত্যাবশ্যক সহায়ক খাদ্য উপাদান” নাম অভিহিত করেন।
  • ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্যাসিমির ফ্রাঙ্ক ঐ খাদ্য উপদাদানকে “ভিটামিন ( Vitamin ) নাম অভিহিত করেন।

ভিটামিন কাকে বলে ?

ভিটামিনের সংজ্ঞা : যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমানে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃষ্টি করে তাকে ভিটামিন বলে ।

[ আরো দেখে নাও : জৈব অ্যাসিড ও তাদের উৎস

ভিটামিনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা ( Importance & Functions of Vitamins )

বিভিন্ন ভিটামিনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতাগুলি নিচে দেওয়া রইলো ।

  • ভিটামিনের প্রধান কাজ হলো প্রাণীদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
  • ভিটামিন A রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে।
  • ভিটামিন B রক্তহীনতা ও বেরিবেরি প্রতিরোধ করে।
  • ভিটামিন D রিকেট রোগ প্রতিরোধ করে।
  • ভিটামিন E বন্ধ্যাত্ব রোগ প্রতিরোধ করে।
  • ভিটামিন K হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে।
  • ভিটামিন C ও P স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।

ভিটামিনের শ্রেণী বিভাগ ( Classifications of Vitamins )

দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুই ভাবে ভাগ করা হয় –

  • তেলে বা স্নেহপদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন : A, D, E, K
  • জলে দ্রবণীয় ভিটামিন : B, C, P

ভিটামিন সম্পর্কিত কিছু টার্মিনোলোজি

অ্যান্টি ভিটামিন ( Anti-vitamin )  : যে সমস্ত জৈব পদার্থ ভিটামিনের কাজে বাধা সৃষ্টি করে অথবা ভিটামিনকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে, তাদের আঁটিভিটামিন বলে ।  যেমন –

  • থিয়ামিন এর অ্যান্টি ভিটামিন হলো পাইরিথিয়ামিন।
  • রাইবোফ্লাভিনের অ্যান্টি ভিটামিন হলো গ্ল্যাকটোফ্লাভিন।
  • বায়োটিনের অ্যান্টি ভিটামিন হলো অ্যাভিডিন ( ডিমে থাকে )

প্রো-ভিটামিন ( Provitamin ) : যে সমস্ত জৈব যৌগ থেকে জীবদেহে ভিটামিন সংশ্লেষিত হয় তাদের প্রো-ভিটামিন বলে । যেমন –

  • B-ক্যারোটিন (যকৃৎ ) ও ক্যারোটিন (অন্ত্র ) হলো ভিটামিন A এর প্রো-ভিটামিন।
  • আর্গোস্টেরল হলো ভিটামিন D এর প্রো-ভিটামিন।

অ্যা-ভিটামিনোসিস : ভিটামিনের সম্পূর্ণ অভাবের ফলে সৃষ্টি হওয়া রোগজনক অবস্থা ।

হাইপো-ভিটামিনস : দেহে এক বা একাধিক ভিটামিনের স্বল্পতাজনিত অবস্থা।

হাইপার ভিটামিনোসিস : দেহে ভিটামিনের আধিক্যজনিত অবস্থা।

[ আরো দেখে নাও : প্রশ্নোত্তরে জীবনবিজ্ঞান ] 

বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস, কাজ এবং অভাবজনিত  ফল –

বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস, কাজ এবং অভাবজনিত ফল তালিকা নিচে দেওয়া রইলো।

ভিটামিন A

  • রাসায়নিক নাম : রেটিনল ।
  • উৎস :
    • উদ্ভিজ্জ — গাজর, টমেটো, পালংশাক, শাকসবজি, বাঁধাকপি, উদ্ভিজ্জ তেল ইত্যাদি ।
    • প্রাণীজ — কড, হাঙ্গর ও হ্যালিবাট মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, দুধ, ডিমের কুসুম, পাঁঠার যকৃৎ, মাখন, মাছ ইত্যাদি।
  • পুষ্টিগত গুরুত্ব :
    • এই ভিটামিন প্রাণীদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
    • রেটিনার রড -কোষ গঠনে সহায়তা করে ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
    • গ্রন্থি ও আবরণী কলার কার্যকারিতা এবং স্বাস্থ্য রাখা করে।
    • রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
    • স্নায়ুকলার পুষ্টি কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
    • অস্থিকোষের  স্বাভাবিক ক্রিয়া ও অস্থির বৃদ্বিতে সহায়তা করে।রাতকানা
  • অভাবজনিত ফল :
    • রাতকানা এবং অন্ধত্ব বা জেরোপথ্যালমিয়া রোগ হয়।
    • ফ্রিনোডার্মা বা টোড-স্কিন অর্থাৎ ত্বক ব্যাঙের চামড়ার মতো খসখসে হয়ে যায় এবং ফেটে যায়।
    • পরিপাক নালী, শ্বাসনালীর আবরণী কলা, স্নায়ু ইত্যাদি ক্ষয় হয়।
    • মেরুদন্ড ও করোটির অস্থি বৃদ্ধি পায়।
    • কেরাটোম্যালেসিয়া অর্থাৎ কর্নিয়া বিনষ্ট হয়ে যায়।
    • রেনাল স্টোন অর্থাৎ বৃক্কে পাথর সৃষ্টি হয়।

[ আরো দেখে নাও : হরমোন ( Note, PDF, 60+ MCQ ) ] 

ভিটামিন B কমপ্লেক্স

ভিটামিনরাসায়নিক নামউৎসঅভাবজনিত রোগ
B1থিয়ামিনডিমের কুসুম, ঢেকিছাটা চাল, দানাশস্যের খোসা ও ভ্রুন, বাদাম, ডাল, বিন, ফুলকপি, বিট, লেটুস, গাজরবেরিবেরি, হাত পা ফোলা, ক্ষুধা মান্দ্য, স্নায়ু দৌর্বল্য, হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা
B2রাইবোফ্লাবিনযকৃৎ, বৃক্ক, ডিমের সাদা অংশ, দুধ, ইস্ট, অংকুরিত গম, ছোলা, কলমি, নটে, পালং শাক, দানাশস্যস্টোমাটাইটিস, চুল উঠে যায়, ত্বক অমসৃণ হয়
B3নিয়াসিনডিমের কুসুম, মাছ, মাংস, দুধ, যকৃৎ, ডাল, দানাশস্যের খোসা, মটর, টোম্যাটো, বিন, ইস্টপেলেগ্রা রোগ হয়, খসখসে ত্বক, খাদ্যনালীর জখম, স্নায়ুদৌর্বল্য, রক্তাল্পতা, ওজন ও কর্মক্ষমতা হ্রাস
B5প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডযকৃত, বৃক্ক, ডিমের সাদা অংশ, মাংস, দুধ, চাল ও গমের কুঁড়া, রাঙা আলু, মটর, আঁখের গুড়অন্ত্রে ঘা, পেশিতে টান, স্নায়ুকোষ, চর্মরোগ, পাখির পেরোসিস রোগ, ইঁদুর ও মুরগির ডার্মাটাইটিস রোগ হয়
B6পাইরিডক্সিনদুধ, ডিম্, মাছ, মাংস, ইস্ট, অঙ্কুরিত শস্য, সবুজ শাকসবজিরক্তাল্পতা, স্নায়ুদৌর্বল্য, নিদ্রাল্পতা, জনন ক্ষমতা লোপ
B7বায়োটিনডিমের কুসুম, যকৃৎ, চীনাবাদাম ও কিছু শাকসবজিডার্মাটাইটিস ও এন্টেরিস নামক ত্বকের রোগ
B9ফোলিক অ্যাসিডডিমের কুসুম, যকৃৎ, বৃক্ক, গম, ইস্ট, ব্যাঙের ছাতা, সয়াবিন, সবুজ শাকসবজিরক্তাল্পতা ও দেহের বৃদ্ধি হ্রাস পায়
B12সায়ানোকোবালামিনমাছ, মাংস, দুধ, ডিম্, স্ট্রেপটোমাইসিস গ্রিসিয়াস নামক ছত্রাকপারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া, হাইপার গ্লাইসিমিয়া, হিমাটো পয়েসিস রোগ হয় ।

ভিটামিন C

  • রাসায়নিক নাম : অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic acid)।
  • উৎস :
    • উদ্ভিজ্জ — কমলালেবু, আম, পেয়ারা, আঙুর, অঙ্কুরিত ছােলা, কাঁচা লঙ্কা, ফুলকপি পালংশাক, টমেটো ইত্যাদিতে এই ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। উল্লেখ্য প্রায় সব রকমের টক জাতীয় ফলে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
    • প্রাণীজ — এই ভিটামিন প্রাণীজ খাদ্যে খুব কমই থাকে,তবে মাতৃদুগ্ধে থাকে । কিন্তু পাস্তুরাইজড় দুধে এবং ফুটন্ত দুধে একেবারেই থাকে না।
  • পুষ্টিগত গুরুত্ব :
    • লোহিত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা গঠনে সহায়তা করে।
    • দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে এবং স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।
    • দেহের রোগ প্রতিরােধক শক্তি বাড়ায়।
    • কলা-কোষে হাইড্রোজেন বিযুক্ত করে জারণ-বিজারণ ক্রিয়ায় সহায়তা করে।
  • অভাবজনিত ফল :
    • স্কার্ভি রােগ (দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া) হয়।
    • রক্তহীনতা হয়।
    • অস্থি ও দন্ত ক্ষয় হয়।
    • রােগ প্রতিরােধক ক্ষমতা কমে গিয়ে সহজেই ঠাণ্ডা লাগে।
    • রক্তের লােহিত কণিকা এবং অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায়।
    • ক্ষতস্থান সহজে শুকায় না।

[ আরো দেখে নাও : হরমোন ( Note, PDF, 60+ MCQ ) ] 

ভিটামিন D

  • রাসায়নিক নাম : ক্যালসিফেরল (Calciferol)।
  • উৎস:
    • উদ্ভিজ্জ — উদ্ভিজ্জ তেলে এবং বাঁধাকপিতে এই ভিটামিন অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।
    • প্রাণীজ — মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, বিশেষ করে কড় এবং হ্যালিবাট লিভার অয়েল হল ভিটামিন Dর উল্লেখযােগ্য উৎস। তাছাড়া মাছ, ডিম, মাখন ও দুধে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
  • পুষ্টিগত গুরুত্ব :
    • ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শােষণে সহায়তা করে।
    • অস্থি গঠনে সহায়তা করে।
    • ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
    • প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে|
    • দন্ত গঠন ও দন্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
    • ক্রিকেট রােগ প্রতিরােধ করে।
  • অভাবজনিত ফল :
    • এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রিকেট এবং বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া রােগ হয়।
    • দাঁতের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও দাঁতের ক্ষয় হতে দেখা যায়।
    • রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায় এবং ক্যালসিয়াম-বিপাক ব্যাহত হয়।

[ আরো দেখে নাও :  বিজ্ঞানসম্মত নাম ( PDF )

ভিটামিন E

  • রাসায়নিক নাম : টোকোফেরল (Tocopherol)।
  • উৎস:
    • উদ্ভিজ্জ — গমের অঙ্কুর-নিঃসৃত তেল, লেটুস প্রভৃতি সবুজ পাতাযুক্ত শাক, মটরশুটি, অঙ্কুরিত ছােলা এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেল।
    • প্রাণীজ — দুধ, মাখন ও ডিমের কুসুম।
  • পুষ্টিগত গুরুত্ব :
    • মাতৃস্তনে দুগ্ধ ক্ষরণ বৃদ্ধি করে।
    • সন্তান উৎপাদক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বন্ধ্যাত্ব প্রতিরােধকরে।
    • জরায়ুর মধ্যে ভূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷
    • গর্ভপাত রােধ করে।
  • অভাবজনিত ফল :
    • বন্ধ্যাত্ব অর্থাৎ প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
    • জরায়ুর মধ্যে ভ্রুনের মৃত্যু।
    • স্তনদুগ্ধ নিঃসরণ কমে যাওয়া।

[ আরো দেখে নাও : সালোকসংশ্লেষ সম্পর্কিত কিছু তথ্য ] 

ভিটামিন K

  • রাসায়নিক নাম : ফাইলােকুইনন (Phylloquinone), বা ন্যাপথােকুইনন (Napthoquinone)।
  • উৎস:
    • উদ্ভিজ্জ — বাঁধাকপি, পালংশাক, টম্যাটো, আলফা-আলফা শাক ইত্যাদি।
    • প্রাণীজ — দুধ, মাখন, শূকরের যকৃৎ নিঃসৃত তেল ইত্যাদি।
  • পুষ্টিগত গুরুত্ব :
    • এই ভিটামিন যকৃৎকে প্রােথ্রমবিন সংশ্লেষে-সহায়তা করে।
    • রক্তে প্রােগ্রমবিনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
    • রক্ত-তঞ্চন এ সহায়তা করে।
  • অভাবজনিত ফল :
    • রক্তে প্রােথমোবিনের পরিমাণ কমে যায়।
    • স্বাভাবিক রক্ত-তঞ্চন ব্যাহত হয় এবং হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ হয়।

[ আরো দেখে নাও : ৫০০টি বিজ্ঞানের MCQ প্রশ্নোত্তর ( PDF ) ] 

Download Section

File name : ভিটামিন.pdf
File Size : 201 KB
File Type : PDF
Total Pages : 5

এই নোটটির PDF ভার্সন নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে নাও –

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button