Geography Notes

বিভিন্ন প্রকার শিলা ও তার শ্রেণীবিভাগ – PDF

Different Types of Rocks with Examples

বিভিন্ন প্রকার শিলা ও তার শ্রেণীবিভাগ

প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো  বিভিন্ন প্রকার শিলা ও তার শ্রেণীবিভাগ নিয়ে।

ভূ-ত্বক কাকে বলে?

ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের শক্ত, কঠিন আবরণকে ভূ-ত্বক বলে। ভূ-ত্বক শিলামণ্ডলেরই অংশ। এর গভীরতা সব জায়গায় সমান নয়। মহাদেশের তলদেশে এর গড় গভীরতা প্রায় ৪০/৫০ কি.মি. এবং মহাসাগরের তলদেশে এর গড় গভীরতা প্রায় ৫/১০ কি.মি.। ভূ-ত্বকের গড় গভীরতা ধরা হয় ২০ কি.মি.।

শিলা কাকে বলে?

ভূ-ত্বক যে সব উপাদান দ্বারা গঠিত, তাদের সাধারণভাবে শিলা বলা হয়।

শিলা বলতে কেবল কঠিন পাথরকেই বােঝায় না—নুড়ি, কাকর, বালি, মাটি, কাদা প্রভৃতিকেও বােঝায়। শিলা বিভিন্ন প্রকার খনিজের সমন্বয়ে গঠিত হয়। যে সব শিলা একাধিক খনিজ পদার্থ দ্বারা  গঠিত, তাদের বিষমসত্ত্ব শিলা এবং যে-সব শিলা একটিমাত্র খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত তাদের সমসত্ত্ব শিলা বলে। খনিজ পদার্থ ছাড়াও শিলার মধ্যে বিভিন্ন জৈব পদার্থ ও রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে।

শিলার শ্রেণীবিভাগ :

উৎপত্তি অনুসারে শিলাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন-

  • [১] আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks),
  • [২] পাললিক শিলা (Sedimentary Rocks) ও
  • [৩] রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rocks) |

আগ্নেয় শিলা


আগ্নেয় শিলা কাকে বলে ?

সৃষ্টির সময় পৃথিবী উত্তপ্ত তরল অবস্থায় ছিল। কালক্রমে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণের ফলে ভূ-ত্বক ও ভূ-ত্বকের অন্তরের বিভিন্ন উপাদান শীতল ও জমাট বেঁধে কঠিন শিলার আবরণ তৈরি করে। উত্তপ্ত পদার্থ জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়েছে বলে এই শিলাকে আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks) বলা হয় (ল্যাটিন শব্দ ‘Iguis’-এর অর্থ অগ্নি বা আগুন)।

ভূ-গর্ভের উত্তপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা কোন ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূ-ত্বকের ওপরে বা নিচে সঞ্চিত হয়। এই ম্যাগমা ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে।

ভূ-পৃষ্ঠে আগ্নেয় শিলাই প্রথমে গঠিত হয়েছিল। তাই একে প্রাথমিক শিলা বলা হয়।

এই শিলার গঠনে কোনরকম স্তরভাগ থাকে না। তাই অনেকসময় আগ্নেয় শিলাকে অস্তরীভূত শিলাও বলা হয়। ।

আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য :

  • [১] স্ফটিক আকার : উত্তপ্ত তরল পদার্থ জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় বলে এই জাতীয় শিলা সাধারণত স্ফটিক আকার বা কাঁচের মত হয়ে থাকে।
  • [২] অস্তরীভূত : এই জাতীয় শিলায় কোন স্তরভাগ থাকে না।
  • [৩] কঠিন ও কম ভঙ্গুর : আগ্নেয় শিলা অপেক্ষাকৃত কঠিন এবং সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
  • [4] জীবাশ্ম দেখা যায় না : আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় না।
  • [৫] অপেক্ষাকৃত ভারী শিলা : পাললিক ও রূপান্তরিত শিলার তুলনায় এই শিলা ভারী।
  • [৬] ঘনসংঘবদ্ধ উপাদান : এই জাতীয় শিলার উপাদানগুলি ঘনসংঘবদ্ধ।

উল্লেখযোগ্য আগ্নেয় শিলা :

  • গ্রানাইট : খুব ধীরে ধীরে শীতল হয়ে এই ধরণের শিলা গঠিত হয় বলে এর দানাগুলো বড় ও স্পষ্ট হয়। গ্রানাইট বিভিন্ন রঙের হয়। সাধারণত অভ্র, কোয়ার্টজ, ফেলসপার প্রভৃতি খনিজ দ্বারা এই শিলা গঠিত হয়। ছোটনাগপুর, দাক্ষিণাত্য মালভূমি প্রভৃতি অঞ্চল গ্রানাইট শিলায় গঠিত হওয়ায় পাহাড়ের চূড়াগুলো গোলাকার হয়। বাড়ি, রাস্তাঘাট প্রভৃতি নির্মাণে এই শিলা ব্যবহৃত হয়।
  • ব্যাসল্ট : এই জাতীয় শিলা নিঃসারি শিলা। দ্রুত শীতল হয়ে জমাট বাঁধে বলে এই জাতীয় শিলার দানাগুলো খুব সুক্ষ ও মসৃন হয়। এর রং হয় খুব গাঢ়। ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত অঞ্চলসমূহের পাহাড়ের চূড়াগুলি হয় চ্যাপ্টা ধরণের। ক্ষয়প্রাপ্ত ব্যাসল্ট শিলায় সিঁড়িতে ন্যায় ধাপ দেখতে পাওয়া যায়। একে ট্রাপ বলে। রেললাইন বা ট্রামলাইনে যে কালো পাথর দেখা যায় তাই ব্যাসল্ট শিলা।

পাললিক শিলা


পাললিক শিলা কাকে বলে ?

পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে পাললিক (সেডিমেনটারি) শিলা বলে [ ল্যাটিন  শব্দ ‘সেডিমেনটাম’ (Sedimentum)-এর অর্থ জলে অধঃপতন]।

সুর্যের উত্তাপ বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, নদীর স্রোতধারা, হিমবাহ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই সমস্ত ক্ষয়িত পদার্থ বৃষ্টির জলধারা ও নদীর স্রোতের মাধ্যমে কোন বৃহৎ জলাশয়ে অধঃপতিত হয়। কালক্রমে ঐসব পদার্থ ভূ-গর্ভের উত্তাপে ও ওপরের শিলাস্তরের চাপে জমাট বেঁধে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। পলল বা পলিস্তর থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে এই জাতীয় শিলাকে পাললিক শিলা বলা হয়।

উদাহরণ : বেলেপাথর, চুনাপাথর, কাদাপাথর, শেল, কয়লা প্রভৃতি।

স্তরীভূত শিলা : পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্তরীভূত (Stratified) শিলা বলে।

স্তরায়ণ তল : স্তরীভূত শিলার একটি স্তর অপর একটি স্তরের সঙ্গে যে তলে যুক্ত থাকে, তাকে স্তরায়ণ তল বলে।

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য :

  • [১] পাললিক শিলার স্তরভাগ ভালভাবে লক্ষ্য করা যায়।
  • [2] এই শিলা নরম ও হালকা।
  • [৩] পাললিক শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায়।
  • [৪] এই শিলা কোমল ও নরম বলে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
  • [৫] স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এই শিলা ছিদ্রযুক্ত হয়।
  • [৬] কোন কোন পাললিক শিলায় কাদার চিড়খাওয়া দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
  • [৭] সমুদ্রগর্ভে সৃষ্টি হয় বলে এই শিলায় অনেক সময় জলের ছােট ছােট ঢেউয়ের দাগ দেখা যায়।
  • [৮] এই শিলায় স্ফটিক (Crystal) দেখা যায় না।

উল্লেখযােগ্য পাললিক শিলা :

  • বেলেপাথর : বেলেপাথর হ’ল সংঘাত পাললিক শিলা। বালুকণা জমাট বেঁধে এই জাতীয় শিলার সৃষ্টি হয়। বেলেপাথর নানা রঙের হয়। সাধারণত এই জাতীয় শিলা সচ্ছিদ্র ও অপেক্ষাকত। কোমল। সিলিকার দ্বারা গঠিত বেলেপাথর খুব কঠিন হয়।
জয়শলমীরের ‘সােনার কেল্লা’ দুর্গটি হলুদ বেলেপাথর, জয়পুরের ‘গােলাপী শহর’ গােলাপী বেলেপাথর, দিল্লীর লালকেল্লা দুর্গ লাল বেলেপাথর দ্বারা গঠিত।
  • চুনাপাথর : চুনাপাথর হ’ল জৈব পদার্থের দ্বারা গঠিত অসংঘাত পাললিক শিলা। ক্যালসিয়াম কার্বনেট রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অধঃক্ষিপ্ত হয়ে জমাট বেঁধে চুনাপাথরে পরিণত হয়। সামুদ্রিক প্রাণীর খােলায় চুনজাতীয় পদার্থ থাকে। মৃত প্রাণীর খােলা সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে চুনাপাথরে পরিণত হয়। এই শিলা খুব নরম। মার্ল, ডলােমাইট, চক, ককুইনা, উলিটিক চুনাপাথর প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের চুনাপাথর দেখতে পাওয়া যায়।

রূপান্তরিত শিলা


রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে ?

বিভিন্ন আগ্নেয় ও পাললিক শিলা প্রচণ্ড চাপ, তাপ বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অনেক সময় পরিবর্তিত হয়ে নতুন এক ধরনের শিলায় রূপান্তরিত হয়। এই অবস্থায় ঐ শিলা পূর্বের চেয়ে অনেক কঠিন ও কেলাসিত (Crystallised) হয়। পরিবর্তন ও রূপান্তরের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় বলে এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত (Metamorphosed ) শিলা বলে।

কেবলমাত্র আগ্নেয় বা পাললিক শিলায় নয়, অনেক রূপান্তরিত শিলাও পরবর্তীকালে রূপান্তরিত হতে পারে।

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য :

  • [১] আগ্নেয় শিলা রূপান্তরিত হলে তা ভালভাবে স্ফটিকযুক্ত হয়।
  • [২] পাললিক শিলা রূপান্তরের ফলে খুব কঠিন হয়ে যায়।
  • [৩] পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে জীবাশ্ম দেখা যায় না।
  • [৪] রূপান্তরিত নাইস শিলার মধ্যে মােটা দাগের স্তর, ফিলাইট শিলার মধ্যে ঢেউ খেলানাে স্তর এবং শিষ্ট শিলার মধ্যে সূক্ষ্ম পাতের বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়।
  • [৫] শিলা রূপান্তরিত হলে এর মধ্যস্থিত খনিজগুলি একদিকে চলে আসে। ফলে খনিজ সংগ্রহে সুবিধা হয়।

রূপান্তরিত শিলার শ্রেণীবিভাগ

উৎপত্তি অনুসারে রূপান্তরিত শিলাকে দু’টি উপ-বিভাগে ভাগ করা যায় –

  • [ক] পাললিক শিলা থেকে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা ও
  • [খ] আগ্নেয় শিলা থেকে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা।

[ক] পাললিক শিলা থেকে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা : পৃথিবীর অধিকাংশ রূপান্তরিত শিলা পাললিক শিলা রূপান্তরের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণ-

ক্রমঃপাললিক শিলারূপান্তরিত শিলা
বেলেপাথরকোয়ার্টজাইট
চুনাপাথরমার্বেল
কাদাপাথরশ্লেট
পিট কয়লাগ্রাফাইট
শেলশ্লেট/শিষ্ট

[খ] আগ্নেয় শিলা থেকে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা : আগ্নেয় শিলা রূপান্তরের ফলে এর মধ্যবতী খনিজগুলি পৃথক হয়ে যায়। উদাহরণ—

ক্রমঃআগ্নেয় শিলারূপান্তরিত শিলা
গ্রানাইটনিস/শিষ্ট
অগাইটহর্নব্লেণ্ড
ব্যাসল্টঅ্যাম্ফিবােলাইট

শিলা সম্পর্কিত কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :

[১] কোন শিলা পৃথিবীতে প্রথম সৃষ্টি হয় ?
উঃ আগ্নেয় শিলা।

[২] শিলা কয় প্রকার ?
উঃ শিলা তিন প্রকার।

[৩] মার্বেল কোন শিলা থেকে রূপান্তরিত হয়েছে?
উঃ চুনাপাথর।

[৪] কোন শিলায় স্তর থাকে না?
উঃ আগ্নেয় শিলা।

[৫] কোন শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় ?
উঃ পাললিক শিলা।

[৬] কয়লা কোন জাতীয় শিলা ?
উঃ পাললিক শিলা।

[৭] কোন শিলাকে জৈব শিলা বলা হয়?
উঃ পাললিক শিলা।

[৮] ব্যাসল্ট শিলা রূপান্তরিত হয়ে কোন শিলায় পরিণত হয় ?
উঃ অ্যাম্ফিবােলাইট।

[৯] একটি পাতালিক শিলার উদাহরণ দাও।
উঃ গ্রানাইট।

[১০] গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ কেমন হয়?
উঃ গােলাকৃতি হয়।

[১১] চুনাপাথর কি জাতীয় পাললিক শিলা ?
উঃ জৈব পদার্থের দ্বারা গঠিত অসংঘাত পাললিক শিলা।

[১২] গােলাকার বড় বড় নুড়িযুক্ত পাললিক শিলাকে কি বলে?
উঃ কংগ্লোমারেট।

[১৩] বড় দানাযুক্ত পাললিক শিলাকে কি বলে?
উঃ ব্রেসিয়া।

[১৪] ওপেল কি?
উঃ প্রবাল ও বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহজাত বালুকণা জমাট বেঁধে পাললিক শিলা ওপেল -এর সৃষ্টি হয়।

[১৫] অস্তরীভূত শিলা কাকে বলে?
উঃ যে শিলার গঠনে কোনরূপ স্তরভাগ থাকে না, যেমন- আগ্নেয় শিলা।

[১৬] কোয়ার্টজাইট কোন শিলার পরিবর্তিত রূপ?
উঃ বেলেপাথর।

[১৭] আগ্নেয় শিলা থেকে রূপান্তরিত একটি শিলার নাম লেখ।
উঃ নিস।

[১৮] পাললিক শিলা থেকে রূপান্তরিত একটি শিলার নাম লেখ।
উঃ বেলেপাথর থেকে কোয়ার্টজাইট।

[১৯] হিমবাহ সঞ্চিত কোণাকৃতি দানা বিশিষ্ট পদার্থ থেকে গঠিত শিলাকে কি বলে ?
উঃ টিলাইট।

Download Section : 

File Name :

File Size : 3.5 MB

Format : PDF

No. of Pages : 07

Click Here to Download

আরও দেখে নাও :

পশ্চিমবঙ্গের কৃষি সংক্রান্ত তথ্যাবলী – PDF

বিভিন্ন ধরণের শস্য / ফসল

ভৌগোলিক ক্ষেত্রে সমমান রেখাসমূহ

বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে প্রথম রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্ৰী

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button