Geography NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত – সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ

Cyclone and Anti-Cyclone

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত – সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত : প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো ঘূর্ণবাত নিয়ে। এই ঘূর্ণবাত থেকে, বিশেষত কোন অঞ্চলের ঘূর্ণবাতের নাম কি – এই টপিকটি থেকে মাঝে মধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে প্রশ্ন এসেই থাকে।

আকস্মিক বায়ু কাকে বলে ?

অনিয়মিতভাবে হঠাৎ খুব জোরে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে আকস্মিক বায়ু বলে।

উদাহরণ – ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত আকস্মিক বায়ুর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ঘূর্ণবাত কাকে বলে ?

কোন স্বল্প পরিসর স্থানে আকস্মিকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বায়ুর চাপ কমে গেলে সেখানে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ কেন্দ্রের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য আশপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বাতাস প্রবল বেগে  ঘূর্ণীর আকারে ঐ নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং উষ্ণ হয়ে পুনরায় ওপরে উঠে যায়। এরূপ নিম্নচাপকেন্দ্রমুখী ঘূর্ণী বাতাসকে ঘূর্ণবাত বলে।

ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য :

  • [১] ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপ থাকে।
  • [২] ঘূর্ণবাত উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে (বামাবর্তে) এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে (দক্ষিণাবর্তে )
    প্রবাহিত হয়।
  • [৩] একটি প্রবল ঘূর্ণবাতের উচ্চতা প্রায় ৯.৬ কি. মি., ব্যাস ১৬,০০০ কি.মি. এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০-১৬০ কি.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। কখনও কখনও গতিবেগ ঘন্টায় ২০০ কি.মি.র বেশি হয়। একে সুপার সুপার সাইক্লোন বা অতি প্রবল ঘূর্ণবাত বলে ( যেমন ১৯৯৯ সালে ওড়িশার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল)। ]
  • [৪] ঘূর্ণবাতের ফলে উষ্ণ অঞ্চলে বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত এবং শীতল অঞ্চলে তুষারপাত ও বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।
  • [৫] ব্যারােমিটারের পারদস্তম্ভ হঠাৎ নিচে নেমে গেলে ঘূর্ণবাতের আগমন বােঝা যায়।

ঘূর্ণবাত কোথায় সৃষ্টি হয়?

ক্রান্তীয় অঞ্চলে জলভাগের ওপর এবং নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে স্থলভাগের ওপর সাধারণতঃ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়ে থাকে।

ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাত 

ক্রান্তীয় অঞ্চলে জলভাগের ওপর হঠাৎ নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে চারপাশের বায়ু প্রবলবেগে কুণ্ডলাকারে ঘুরতে ঘুরতে ঐ নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং প্রবল ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
সাধারণতঃ ৬° -২০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে এরূপ প্রবল ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়ে থাকে।

বৈশিষ্ট্য—

  • ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রকে বলে ঘূর্ণবাতের চক্ষু। এই অঞ্চলে বায়ু শান্ত থাকে। এর ব্যাসার্ধ থাকে প্রায় ২০-৬০ কি.মি.।
  • এই ঘূর্ণবাত অত্যন্ত প্রবল ও বিধ্বংসী,  কিন্তু স্বল্পস্থায়ী।
  • জলভাগ থেকে এই ঘূর্ণবাত যখন স্থলভাগে প্রবেশ করে তখন তা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ঘূর্ণবাত পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন—
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতঅঞ্চল
টর্নেডোপশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্যারিবিয়ান উপসাগরে ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে
টাইফুনচীন ও জাপানের উপকূল অঞ্চলে
হ্যারিকেনআমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশে
কালবৈশাখীভারতের পশ্চিমবঙ্গের ও বাংলাদেশে
উইলি উইলিউত্তর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়
কোন অঞ্চলে ঘূর্ণবাতকে কি বলে ডাকে
  • উইলি উইলি : অস্ট্রেলিয়ায় ঘূর্ণিঝড়কে উইলি-উইলি বলা হয়।
  • হারিকেন : উত্তর আটলান্টিক, মধ্য উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া ঝড়গুলিকে হারিকেন বলা হয়।
  • টাইফুন : উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে একটি ঝড় হল একটি টাইফুন। চীন ও জাপানের উপকূল অঞ্চলে টাইফুন দেখা যায়।

নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণবাত

নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে বা মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশ অঞ্চলে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, তাকে নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণবাত বলে। তরঙ্গের আকারে ক্রমাগত এই ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় বলে একে তরঙ্গ ঘূর্ণবাতও বলা হয়।

উৎপত্তির কারণ—

সাধারণতঃ একটি উষ্ণ বায়ু (পশ্চিমা উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ) ও একটি শীতল বায়ু (মেরু শীতল বায়ুপুঞ্জ) পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হলে তাদের মিলন অঞ্চলে আলােড়নের সৃষ্টি হয়। এই মিলন অঞ্চলকে সীমান্ত বলা হয়। সীমান্ত অঞ্চলে আ


লােড়নের ফলে পশ্চিমা বায়ুর প্রবাহপথ অনুযায়ী পশ্চিম হতে পূর্বে ক্রমান্বয়ে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়ে থাকে। উষ্ণ বায়ু শীতল বায়ুর ওপরে ওঠার জন্য সীমান্ত অঞ্চলকে আঘাত করে এবং সীমান্তের তরঙ্গ ক্রমশঃ বক্রাকার ধারণ করে। শীতল বায়ুও ভারী বলে নিচে নামার জন্য সীমান্ত অঞ্চলকে আঘাত করে । উষ্ণ ও শীতল বায়ুর আঘাতযুক্ত সীমান্তকে যথাক্রমে উষ্ণ সীমান্ত ও শীতল সীমান্ত বলে।

এই ভাবে যতই উষ্ণ বায়ু ওপরে ওঠার চেষ্টা করে, শীতল বায়ু ততই নিচে নেমে উষ্ণ বায়ুকে ও পরে ঠেলে দেয় এবং সীমান্ত অঞ্চল ভীষণ বক্রাকার হয়ে পড়ে । এরূপ ক্ষেত্রে ঘূর্ণবাত প্রবল আকার ধারণ করে। শীতল সীমান্ত দ্রুত অগ্রসর হয় বলে উষ্ণ সীমান্তকে তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে। এই অবস্থাকে অক্লুসান বলে। অক্লুসানের পরে ঘূর্ণবাত ক্রমশঃ দুর্বল
হয়ে পড়ে।


প্রতীপ ঘূর্ণবাত

নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডল ও হিমমণ্ডলের অন্তর্গত কোন কোন স্থানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। এই উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক বাতাস বাইরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবলবেগে কুণ্ডলী আকারে প্রবাহিত হয়। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য

  • [১] প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপ থাকে।
  • [২] প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বাতাস ঠাণ্ডা ও শুষ্ক ।
  • [৩] এই ঘূর্ণবাত নিম্নগামী ও বহির্মুখী।
  • [৪] ঘূর্ণবাতের বিপরীত দিকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত প্রবাহিত হয়, অর্থাৎ উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাটার দিকে (দক্ষিণাবর্তে) এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে (বামাবর্তে) প্রবাহিত হয়।
  • [৫] অনেক সময় দু’টি ঘূর্ণবাতের মধ্যবর্তী স্থানেও প্রতীপ ঘূর্ণবাত দেখা যায় ।
  • [৬] প্রতীপ ঘূর্ণবাতে আকাশ পরিষ্কার থাকে, কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায় না।

আরও দেখে নাও :

গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় বায়ু | Famous Local Winds of the World । PDF

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস ( PDF + MCQ ) | বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তৃণভূমি । Important Grasslands of the World


ঘূর্ণবাত সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর –

টাইফুন কোথায় দেখা যায় ?
চীন ও জাপানের উপকূল অঞ্চলে টাইফুন দেখা যায়।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button